২ বছর ধরে আটকে আছে সাড়ে ৬ হাজার চাকরিপ্রার্থীর ভাগ্য
আদালতে রিট পিটিশনের ফলে আটকে আছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদের নিয়োগ পক্রিয়া। ফলে ঝুলে গেছে সাড়ে ৬ হাজার চাকরি প্রার্থীর ভাগ্য। রিট নিষ্পত্তি করে ফলাফল দ্রুত ফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নিয়োগবিধিতে বলা আছে- উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদের জন্য আবেদনের যোগ্যতা পুরকৌশলে ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণির ডিপ্লোমা। একই যোগ্যতা চাওয়া হয়েছিল বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একই পদে লোকবল নিয়োগের জন্য। সব মিলিয়ে ৬২৭টি পদের জন্য দুই বছর আগে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়োগপ্রক্রিয়া চলাকালে কয়েকজন প্রার্থীর হাইকোর্টে রিট আবেদনের কারণে পুরো প্রক্রিয়াই আটকে আছে।
এর মধ্যে সবগুলো পদের লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এলজিইডির ২৬৩ পদের জন্য লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষাও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশ না পাওয়ায় এসব পদেও লোক নিয়োগ দিতে পারছে না। এতে ছয় হাজার ৬১৩ জন চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এলজিইডির কর্মকর্তারা বলছে, মাঠ পর্যায়ে তাদের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর তীব্র সংকট চলছে।
অন্যদিকে গত ১৪ জানুয়ারি পিএসসি এলজিডিকে চিঠি দিয়ে মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগে রিট পিটিশনের বিষয়টা দ্রুত নিষ্পত্তির অনুরোধ করেছে।
জানা গেছে, এলজিইডির লিখিত পরীক্ষার পর পিএসসি প্রার্থীদের সব কাগজপত্র দেখে বিভিন্ন কারণে ১৬১ জনকে অযোগ্য ঘোষণা করে। এর মধ্যে ১১০ জনকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় পুরকৌশলে ডিপ্লোমা না থাকায়। এই প্রার্থীরা কনস্ট্রাকশন টেকনোলজি ও অন্যান্য বিষয়ে ডিপ্লোমাধারী। তাদের মধ্যে কনস্ট্রাকশন টেকনোলজির ৮৬ জন গত বছরের ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। তারা দাবি করেন- তাদের ডিপ্লোমা পুরকৌশলের সমমানের। উচ্চ আদালত গত ২৮ ডিসেম্বর আবেদনকারীদের কেন মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। রুলে সাত বিবাদীকে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারির মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তার আগেই গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে পিএসসি এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে। গত ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়া হয়। মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন দুই হাজার ২০৯ জন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডির আইনজীবী মিন্টু কুমার মণ্ডল বলেন, হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা হলেও কোনো স্থগিতাদেশ দেননি আদালত। বিষয়টি আদালতে শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে। এখন করোনা পরিস্থিতির জন্য সেটা বিলম্ব হচ্ছে।
রিটকারী এক শিক্ষার্থী মো. রাকিব বলেন, কারিগরি বোর্ড আমাদের সিভিলের (পুরকৌশল) সমমান দিয়েছে। ১০ বছর ধরে একই যোগ্যতায় এ পদবীতে কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে। সে জন্য আবেদন করেছি। আমরা পরীক্ষা দিয়ে মৌখিক পর্যন্ত যেতে পেরেছি। এখন কোনো সমাধান না পাওয়ায় রিট করতে হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে এলজিইডি সদর দপ্তরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (প্রশাসন) মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আইনের প্রক্রিয়া। এটির বিবাদী রয়েছে সাতজন। যেহেতু সরাসরি আমাদের নিয়োগ হবে, তাই আমরা শুনানির জন্য অপেক্ষা করছি। করোনার জন্য এখন সেটা দেরি হচ্ছে। রিট পিটিশনে ফলাফল প্রকাশে আমাদের নিষেধও করেনি। আবার স্থগিতাদেশ দেননি আদালত। আমাদের কর্মীর সংকট রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আমাদের জন্য ভালো হয়। আমাদের উপজেলা পর্যায়ে যেখানে চারজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রয়োজন সেখানে কোথাও দুইজন আবার কোথাও একজন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নিয়োগ বিধিতে বলা আছে সিভিল (পুরকৌশল) ডিপ্লোমা। যাদের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে তাদের কনস্ট্রাকশন টেকনোলজি ও অন্যান্য বিষয়ে ডিপ্লোমাধারী। লিখিত পরীক্ষার পর মৌখিক পরীক্ষার আগে কাগজপত্র দেখেই তাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এলজিইডির এ কর্মকর্তা বলেন, রিট পিটিশন করার পর পিএসসি আমাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছে- মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পূর্বে রিটপিটিশন বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য। আমাদের নিয়োগ বিধিতে উল্লেখ ছিল সিভিল ডিপ্লোমা। তবে তারা তথ্য হাইড করে আবেদন করেছে। তারা আসলে কনস্ট্রাকশন ডিপ্লোমা। পরবর্তীতে কাগজ যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় তারা কনস্ট্রাকশন টেকনোলজি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে পিএসসি উপ-সচিব (আইন) লুলু বিলকিস বানু নম্বরে একাধিক বার ফোন করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।