রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিল ৩২ প্রত্যাশীরা
করোনাকালীন প্রণোদনা হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছরে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারিকলিপি দিয়েছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।
বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পৃথক পৃথকভাবে স্মারকলিপি জমা দেন তারা।
স্মারকলিপিতে চাকরিপ্রত্যাশীরা জানান, আমরা চাকরি প্রত্যাশী যুব প্রজন্ম, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এদেশের সংবিধানকে চূড়ান্ত আইন মনে করি। চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসনীয়। বিভিন্ন সেক্টরে সরকার প্রদত্ত করোনাকালীন প্রণোদনা দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কোভিড-১৯ এর ভয়াল থাবা অন্য সকল সেক্টরের মানুষের মতো চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্মকেও বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
বিগত ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণার সাথে বন্ধ হয়ে যায় সকল প্রকার সরকারি চাকরির সার্কুলার ও একই সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়া। এক বছরের অধিক সময়কাল জুড়ে হাতেগোনা কয়েকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে (সেটিও আবার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে) এবং ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারির মতো মাত্র কয়েকটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফলে দেখা গেছে এই প্রজন্মের অনেকেই তাদের জীবনের প্রায় দেড় বছর হারিয়ে ফেলেছেন এবং এর স্থায়িত্ব আরও দীর্ঘ হতে যাচ্ছে, যেহেতু দেশে এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলমান। করোনার প্রভাবে দেরিতে কয়েকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসার পরে এমন চিত্র দেখা গেছে অনেকেই ৫/১০ দিন, এক বা দুই মাসের জন্য ৪৩তম বিসিএস প্রিলিমিনারি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনই করতে পারেন নাই।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করলে দেখা যায়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ বা আবেদনের বয়সসীমা ৩০ হলেও সহকারী বিচারকদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩২, আবার বিসিএস স্বাস্থ্য তথা সরকারি ডাক্তারদের ক্ষেত্রেও ৩২ বছর। অন্যদিকে বিভিন্ন কোটার ক্ষেত্রে এই বয়সসীমা ৩২ বছর দেওয়া হয়। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ হওয়ায় কয়েক লক্ষ তরুণ (করোনার শুরুর সময়ে যারা ২৮+ বয়সের ছিলো) চাকরির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ না পেয়েই ৩০ এর গন্ডি অতিক্রম করবে। করোনাকালীন এই ক্ষতি কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যে ছেলেমেয়েরা ২৬ বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শেষ করে সেই করোনা শুরুর সময় থেকে আশায় বসে আছে চাকরির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবে, তারাও এই দেড় বছর হারাতে চলেছে। সরকারি বিধি মোতাবেক প্রচলিত যে ৩০ বছর বয়স অবধি আবেদনের সুযোগ পাওয়ার কথা করোনার আঘাত কিন্তু প্রকৃতই সেই সুযোগ দিচ্ছে না।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় , যখন গড় আয়ু ছিল ৫৫ বছর তখন চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭, অবসরের বয়স ছিল ৫৭ বছর। ১৯৯১ সালে সেশনজটের পরিস্থিতি বিবেচনা করে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ২৭ থেকে করা হলো ৩০ বছর। তখন ১৯৯১ সালে গড় আয়ু ছিলো ৫৭ বছর। এরপর ২০১১ সালে এসে অবসরের বয়স বেড়ে হয় ৫৯ আর মহান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হয় ৬০। অবসরের এই ২-৩ বছর বাড়ার কারণে এই সময় তেমন জব সার্কুলার হয়নি। ১৯৯১ থেকে ২০২১ এই ৩০ বছরে গড় আয়ু ১৬ বছর বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৩ বছর। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ে নাই এই ৩০ বছরেও!
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরিমাণ ৮৭% কমে ১৩% এ উপনীত হয়েছে; অন্যদিকে বেকারত্বের হার ২০% থেকে ৩৫% এ উন্নীত হয়েছে৷ করোনা চলাকালীন সময়ে ২০২০ সালে একটি প্রজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয়েছিলো যাদের বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে আসন্ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোতে তাদের আবেদনের সুযোগ দেওয়া হবে। আপনার জ্ঞাতার্থে আমরা জানাতে চাই যে বেশিরভাগ বিজ্ঞপ্তিগুলোতেই সেই নীতি অনুসরণ করা হয়নি। হাতেগোনা কয়েকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল যেগুলো বেশিরভাগই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির।
তাদের দাবি:
করোনায় শিক্ষার্থীদের প্রায় ২ বছর সময় জীবন থেকে অতিবাহিত হতে চলেছে। তাই করোনাকালীন সরকারের সকল প্রণোদনার পাশাপাশি মুজিববর্ষের ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছরে আমরা বেকার যুবকরা মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মোঃ আবদুল হামিদ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এর নিকট ‘প্রণোদনা স্বরূপ’ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩২ বছরে উন্নীত করার দাবি জানাচ্ছি।
আওয়ামীলীগ সরকারের ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লিখিত ‘প্রতিশ্রুতি’ (বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ) অনুযায়ী করোনাকালীন প্রণোদনা হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ এ উন্নীত করার জোরালো দাবি ও আবেদন জানাচ্ছে এদেশের যুব সমাজ।
উপরোক্ত যৌক্তিক বিষয়গুলো, বিশেষত করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ততা বিবেচনা করে সরকারি চাকরিতে আবেদন তথা প্রবেশাধিকারের বয়সসীমা ৩২ বছরে উন্নীত করা এই মুহূর্তে অতীব প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি এবং এই বিষয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনাদের সুদৃষ্টি ও আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।