ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

লাইব্রেরি বন্ধ, বারান্দায় দলবেঁধে চাকরির প্রস্তুতি

  © টিডিসি ফটো

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ও বিজ্ঞান গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়ছেন সেখানে নিয়মিত পড়াশোনা করা কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম সশরীরে বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবাসিক হলসহ সবকিছু বন্ধ থাকাতে কেন্দ্রীয় ও বিজ্ঞান গ্রন্থাগারও বন্ধ রয়েছে। তবে একদল চাকরীপ্রার্থী শিক্ষার্থী একরকম বাধ্য হয়েই বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের বারান্দা, আশপাশের একাডেমিক ভবন কিংবা খোলা জায়গায় বসে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জানা যায়, গত বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আবাসিক হল, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ সবকিছু অনির্দ্ধিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী গ্রামের বাড়ি ফিরে গেলেও পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে গত বছরের শেষের দিকে চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থীরা ঢাকায় ফেরেন। এসময় আবাসিক হল বন্ধ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মেসে উঠে এসব শিক্ষার্থী চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। তাছাড়া কিছু শিক্ষার্থী আগে থেকে ক্যাম্পাসের আশপাশের মেসে অবস্থান করতেন বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের বারান্দায় পড়াশোনায় মগ্ন চাকরিপ্রার্থীরা

এসব শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল কিংবা ক্যাম্পাসের আশপাশের মেসে থাকলেও মূলত তাদের চাকরি কেন্দ্রীক পড়াশোনা করে থাকে ঢাবির কেন্দ্রীয় ও বিজ্ঞান গ্রন্থাগারে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত তারা সেখানে পড়াশোন করে থাকেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার দুটিতে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীর পড়াশোনার জন্য আসন রয়েছে। এসবের অধিকাংশই বিসিএস কিংবা সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন শিক্ষার্থী রয়েছে। 

গ্রন্থাগার সংলগ্ন রাস্তার পাশে চেয়ার-টেবিল নিয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা

অন্য সময়ে চাকরির পরীক্ষার মত গ্রন্থাগার দুটিতে সিট পেতেও শিক্ষার্থীদের রীতিমত সংগ্রাম করতে হয়। প্রতিদিন ভোরে গ্রন্থাগার খোলার অনেক আগেই লম্বা লাইন পরে যায় গেটে। কোনো কোনো সময় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের লাইন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ পেরিয়ে মধুর ক্যান্টিন পর্যন্ত পার হয়ে যায়। তবে গ্রন্থাগারে সিট পাওয়ার এই সংগ্রাম হাসি মুখে মেনে নেয় এসব শিক্ষার্থীরা একটি চাকরি পাওয়ার আশায়।

তবে গত এক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার দুটি বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেমে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের বারান্দায় পড়াশোনা করছেন প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের বেশিরভাগই চাকরির জন্য পড়ছেন। আবার আশপাশের একাডেমিক ভবনের মেঝে কিংবা খোলা জায়গায় বসে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকেই।

রবিবার (৭ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের বারান্দায় নিজেদের উদ্যোগে প্লাস্টিক কিংবা কাঠের চেয়ার-টেবিল কিনে এনে বারান্দায় পড়াশোনা করছেন একদল শিক্ষার্থীরা। সেখানে একরকম গাদাগাদি অবস্থায় চেয়ার-টেবিল বসিয়ে তাদের পড়াশোনা করতে হচ্ছে। আবার অনেকে জায়গা না পেয়ে আশেপাশের ভবনগুলোর মেঝে বসে পড়াশোনা করছেন। 

গত বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে বন্ধ

বারান্দায় পড়াশোনা করছেন সদ্য মাস্টার্স শেষ করা ছাত্র জোবায়ের হোসেন। তিনি ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এখানে পড়তে আসা আমাদের অধিকাংশেরই পড়াশোনা প্রায় শেষ। অন্যদিকে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও চাকরি পরীক্ষাগুলো বন্ধ নেই। চাকরিতো পেতে হবে আমাদের। এজন্য গ্রন্থাগার বন্ধ থাকলেও আমাদের একরকম বাধ্য হয়েই বারান্দায় বসেই পড়াশোনা করতে হচ্ছে।

শারমিন আক্তার নামে এক ছাত্রী বলেন, গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় চাকরির প্রস্তুতি নিতে গ্রন্থাগারের বারান্দায় পড়াশোনা করছি। এখানে সন্ধ্যার পর থেকেই মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। এছাড়া পাশের সড়ক দুটির যানবাহনের শব্দ তো আছেই। এসবের মধ্যেও চাকরির প্রস্তুতি নিতে আমাদের পড়তে হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রধান গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক ড. মো. নাসিরুদ্দিন মুন্সী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এখানে যারা পড়শোনা করছে সবাই আমাদেরই ছাত্র এবং অধিকাংশই হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা। অনেকেই টিউশনি করায়। সামর্থ্য থাকলেতো কেউ এখানে এত কষ্ট করে এসে পড়াশোনা করতো না।

তিনি আরও বলেন, এ রকম পরিবেশে পড়াশোনা করার তাদের শারীরিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে আমরাও চিন্তিত। আমরা তাদের বলেছি সম্ভব হলে তারা যেন এখান থেকে চলে যায়। কিন্তু আমরা চাইলেও তাদের প্রক্টরিয়াল টিম কিংবা পুলিশ দিয়ে তাড়িয়ে দিতে পারি না। আমাদের তো মানবিক দিকটাও বিবেচনা করতে হয়।


সর্বশেষ সংবাদ