বেশি পদের সরকারি চাকরির পরীক্ষা শুরু হচ্ছে নভেম্বরে
করোনার কারণে ছয় মাসের অধিক সময় ধরে বন্ধ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। কিছু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও তা ছিল একেবারেই হাতেগোনা। ফলে সরকারি লাখ লাখ পদ শূন্য রয়েছে। অবশ্য করোনার আগে থেকেই বাড়ছিল শূন্য পদের সংখ্যা, করোনাকালে তা আরও বেগবান হয়েছে। এখন দ্রুত এসব পদের নিয়োগ হবে বলে আশা করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। অবশ্য ডিসেম্বরের মধ্যেই বিপুল সংখ্যক পদের পরীক্ষা হবে বলে সরকারের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বর্তমানে সরকার অনুমোদিত প্রায় ১৮ লাখ পদ রয়েছে। এরমধ্যে কয়েক মাস আগে শূন্য ছিল প্রায় চার লাখ পদ। করোনাকালে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে। গত মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়নি। ফলে সরকারি চাকরিতে জট ও গতিহীনতা তৈরি হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সরকারি পদ সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিয়োগ সম্পন্ন হয় না, কিছু সময় লাগে। করোনার কারণেও নিয়োগ আটকে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শূন্যপদ দ্রুত পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রতিটি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সময় কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। করোনার সময় ডাক্তার, নার্স নিয়োগ ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুতগতিতে হয়েছে।’ এ থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রায় ৪০ লাখ চাকরিপ্রার্থী। তবে ৪১তম বিসিএস, সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, খাদ্য ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের মতো পরীক্ষাগুলোয় কয়েক লাখ করে প্রার্থী রয়েছে। ফলে করোনাকালে এত বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর পরীক্ষা নেয়া প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।
ঝুঁকি থাকায় পরীক্ষার তারিখও ঘোষণা করছে না তারা। ফলে দীর্ঘসূত্রিতা ও সরকারি শূন্য পদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বেকার থাকায় হতাশা বাড়ছে উচ্চ শিক্ষিতদেরও। তাদের কারোর আবার চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হওয়ার পথে। নিয়োগ বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় ও মামলা জটিলতায়ও সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে গেছে। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্মও।
চাকরিপ্রার্থী আশিকুর রহমান বলেন, ‘বিসিএসসহ অনেকগুলো সরকারি চাকরির পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছি। করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে পরীক্ষাগুলো দ্রুত নেয়া হোক। ইতোমধ্যে অনেক সময় হারিয়েছি। বয়সও শেষ।’
পিএসসি সূত্র জানায়, ছোট নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হলেও বিসিএসের মতো বৃহৎ পরীক্ষা নেওয়ার কথা চিন্তা করছেন না তারা। কারণ বিপুলসংখ্যক কেন্দ্রের পাশাপাশি যে প্রস্তুতি দরকার, তা তাদের নেই। ৪১তম বিসিএসে চার লাখ ৭৫ হাজার প্রার্থী আবেদন করায় পরীক্ষা দ্রুত নেওয়ার সুযোগ নেই। ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফলও আটকে গেছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের এক হাজার ১৬৬টি পদের জন্য অন্তত ১৪ লাখ চাকরিপ্রার্থীর পরীক্ষা আটকে আছে। এই পরীক্ষাও গত ২০ মার্চ নেওয়ার কথা ছিল। সমাজসেবা অধিদপ্তরের ৪৬৩টি পদের বিপরীতে চাকরিপ্রার্থী ছয় লাখ ৬২ হাজার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ১৪১টি পদের জন্য দুই লাখের বেশি প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার অপেক্ষায় আছেন।
এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন কয়েক লাখ চাকরিপ্রার্থী। এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকের চার হাজার ৭৫০টি পদের জন্য পরীক্ষার অপেক্ষায় রয়েছেন ছয় লাখের বেশি প্রার্থী। সবমিলিয়ে প্রায় ৪০ লাখ প্রার্থী পরীক্ষার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন। তবে করোনাকালে গত দুমাসে বেশ কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্য সচিব আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ধীরে ধীরে কম পদের পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছি। ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করার পরিকল্পনা আছে। তবে বেশি পদের পরীক্ষা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’ স্বাস্থ্যবিধি মানতে গেলে এসব পরীক্ষা নেওয়া যাবে না বলেও মত দেন তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘চাকরির বিজ্ঞপ্তিগুলো আটকে রাখা ঠিক হবে না। এ জন্য সরকারকে নির্দেশ দিতে হবে। সরকার কিছু ক্ষেত্রে বয়সে ছাড় দিয়েছে। তবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হলে অনেক শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবে।’
এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এক মাসের মধ্যেই খাদ্য অধিদপ্তরের পরীক্ষা সম্পন্ন করা হবে।’ আর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, ‘সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরীক্ষা ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করছেন তারা।’