জোরালো হচ্ছে চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করার দাবি, নির্বিকার সরকার
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবি নানা মহলের চাকরি প্রত্যাশীদের। বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া, সেশনজট, নিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা ও অন্যান্য কারণে বেশ কিছু দিন ধরেই চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন একদল চাকরিপ্রার্থী। মাঝে করোনা পরিস্থিতির কারণে কিছুটা থমকে গেলেও আবার জোরালোভাবেই শুরু হচ্ছে এ আন্দোলন।
সরকারি চাকরি শুরুর বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে কয়েক বছর ধরে ‘সাধারণ ছাত্র পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন আন্দোলন করে আসছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি সংগঠনও বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন করছে। তাদের দাবি, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা ৩০ বছর থেকে ৩৫ বছর করতে হবে। এ নিয়ে নানা আন্দোলন হলেও এর পক্ষে বিপক্ষে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি সরকার।
জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর জন্য কয়েক দফা সুপারিশ করা হয়। সরকারের গত মেয়াদের শেষ সময়ে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ফের সরকার গঠন করলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর বিষয়টি হারিয়ে যায়। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আপাতত চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স বাড়ানোর কোনো চিন্তা সরকারের নেই।
আন্দোলনকারী সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে তাদের আন্দোলন থেমে ছিল। এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর প্রেসক্লাবে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে ফের আন্দোলন শুরু করেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ। পরিষদের নেতারা জানান, শিগগিরই তারা দাবি আদায়ে দেশব্যাপী জোরদার আন্দোলনের ডাক দেবেন।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের সভাপতি সোনিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের বড় একটি সমস্যা হলো সেশনজট। লেখাপড়া শেষ করতে গিয়ে একজন শিক্ষার্থী মোটামুটি চার বছরের সেশনজটে পড়েন। যেখানে ২৪ বছর বয়সে মাস্টার্স শেষ করার কথা, সেখানে ২৮ বছর লেগে যায়। থাকে আর দুই বছর। দুই বছর পরই আমাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘১৭ বছর অর্থ, শ্রম ও সময় দিয়ে লেখাপড়ার দুই বছর পর আমার শিক্ষাগত সনদ ইনভ্যালিড হয়ে যায়। ৩০ বছর পার হওয়ার পর লেখাপড়া শিখেও আমি একজন অশিক্ষিত মানুষের মতো হয়ে যাই সরকারের কাছে। শিক্ষাই জতির মেরুদণ্ড কিন্তু শিক্ষিত হয়ে ৩০ বছর পর আমি মেরুদণ্ডহীন হয়ে যাচ্ছি।’
চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়িয়ে কমপক্ষে ৩৫ করার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘দেশে ৩০ লাখ বেকার রয়েছে। আমরা দাবি আদায়ে অহিংস আন্দোলন করে আসছি। মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, মশাল মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, রিকশা মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামীতে আমরা জোরদার আন্দোলনে যাব।’
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর কোনো চিন্তা সরকারের নেই। প্রধানমন্ত্রী একেবারে ডাটা ধরে বলেছেন, ৩০ বছরের বয়সী যারা বিসিএস দেয়, এক শতাংশেরও নিচে তারা চান্স পায় তবে কোভিডের কারণে ছাড়পত্র নেয়ার পরও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি কোনো কোনো সরকারি দফতর। এর মধ্যে অনেকের বয়সও ৩০ পেরিয়ে গেছে। তাই আমরা বলেছি, ২৫ মার্চ যাদের বয়স ৩০ ছিল, নতুন বিজ্ঞপ্তি যখনই প্রকাশিত হবে তখন তারাও আবেদন করতে পারবেন। বয়সের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছে।’
এর আগে চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়সসীমা পুর্নবিন্যাসের সময় এসেছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছিলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ কিংবা ৪০ বছর করা যেতে পারে। এ ছাড়া অবসরের বয়সও ৬৫ করা যেতে পারে।
সেসময় তিনি বলেছিলেন, ‘সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয় চিন্তা করতে হয়। উন্নত দেশে বাংলাদেশের মতো ক্যাডার, বয়স বা নিয়মকানুন নেই। ব্রিটিশরা যে মানসিকতা থেকে এটা করেছিল, তা আর খাটে না। আমাদের বয়স, স্বাধীনতা, সক্ষমতা, বিদ্যাবুদ্ধি বেড়েছে। সুতরাং এটার পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার মতে, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫-৪০ বছর করা যেতে পারে। অবসরের বয়সও ৬৫ করে পুনর্বিন্যাসের সময় এসেছে। অনেক চাকরিতে এটা আছে। এটা নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ আছে।’
প্রসঙ্গত, এর আগে সর্বশেষ ১৯৯১ সালে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো হয়। এরপর অবসরের বয়স বাড়ানো হলেও প্রবেশের বয়স আর বাড়েনি।