বয়স নিয়ে অসন্তোষ, ঢাকায় কর্মসূচি ঘোষণা চাকরি প্রত্যাশীদের
করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছরের শুরু থেকেই সব ধরনের চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তীব্র হতাশায় পড়ে যান চাকরিপ্রার্থীরা। এ অবস্থায় তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ অথবা ৩৫ বছর করার দাবি তোলেন তারা। তবে সরকার সে পথে না হেটে বয়সের শর্ত কিছু শিথিল করার উদ্যোগ নিয়েছে।
সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, গত ২৫ মার্চ যাদের ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদেরকেও সব ধরনের সরকারি চাকরিতে আবেদনের সুযোগ দেয়া হবে। পাঁচ মাসের জন্য তাদেরকে ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। করোনার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তবে এটি চাকরিপ্রার্থীদের খুব সামান্য একটি অংশ লাভবান হবেন বলে তারা জানিয়েছেন।
চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, করোনার প্রকোপ শুরুর পর চলতি বছরের শুরুতেই সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কমতে শুরু করে। আর মার্চ থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বন্ধের পাশাপাশি গণহারে ছাটাই শুরু হয়। এতে সব বয়সের চাকরিজীবী ও চাকরিপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কিন্তু এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে শুধু চাকরিপ্রার্থীদের একটি অংশ লাভবান হবেন বলে তারা মনে করছেন। তাদের বক্তব্য, চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে যাদের বয়স করোনাকালে ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছে বা কাছাকাছি রয়েছে তারাই শুধু সুবিধা পাবেন। সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সও ত্রিশ বছর। অথচ সব বয়সী চাকরিপ্রার্থীই এ সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে দাবি করছেন তারা।
এজন্য সবার কথা বিবেচনা করে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বা ৩৫ বছর করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, করোনাকালে সবাই অন্তত এক বছরের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অন্তত এক বছর সময় চলে গেছে, যা আর কেউ ফিরে পাবে না। এজন্য একাংশকে সুবিধা না দিয়ে সবার কথা বিবেচনা করে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ কিংবা ৩৫ বছর করার দাবি জানিয়েছেন তারা। বয়স না বাড়ানো হলে বেকারত্ব বাড়বেও দাবি চাকরিপ্রার্থীদের।
এদিকে করোনাকালে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের এ ধরনের বক্তব্য চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে ‘প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন। চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন তারা।
ইমতিয়াজ হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা যে দাবি জানিয়ে আসছি তার ধারেকাছেও নেই প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য। তিনি একাংশের সুবিধার জন্য এ ধরনের কথা বলেছেন। অথচ করোনাকালে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি ছাড়া এ ক্ষতি পোষানোর কোনো পথ নেই।’
তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে প্রতিমন্ত্রী চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা করেছেন। এজন্য আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।’ এসময় কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির দাবিতে সব বিভাগীয় শহরে এখন কর্মসূচি পালন করছি। সবশেষে ঢাকায় শিগগিরই বড় আকারে কর্মসূচি পালন করবো।’
অপরদিকে করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। তবে তারা প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়ার দাবির সঙ্গে একমত নন। বরং সমস্যার সমাধানের জন্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর নিকট বয়স অন্তত ৩২ বছর করার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া আগামী শুক্রবার বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ দাবিতে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে চাকরিতে প্রবেশের সর্বনিম্ন বয়স ৩২ চাই কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব রুবেল আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘করোনাকালে চাকরিপ্রার্থী সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য আমরা চাই, চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বছর করা হোক। এতে সবাই তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘যারা ৩৫ বছরের দাবিতে আন্দোলন করছেন তাদের সঙ্গে আমাদের তেমন দ্বিমত নেই। তবে আমরা প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ চাচ্ছি না। আমরা চাই, করোনায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে সরকার যাতে ব্যবস্থা নেয়।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, গত ২৫ মার্চ যাদের বয়স ৩০ বছর পার হয়েছে তারাও চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। এজন্য প্রজ্ঞাপন দেয়া হবে। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর রয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে বয়স ৩২ বছর।