আশা দেখছেন চাকরি প্রার্থীরা
করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাত ছাড়া আর কোনো সরকারি চাকরিতে নিয়োগ হয়নি। বেসরকারি খাতে তো উল্টো চাকরি যাচ্ছে অনেকের। তবে ধীরে ধীরে দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে যাওয়ায় আবারও পুরোনো রূপে ফিরতে শুরু করেছে চাকরির বাজার। স্থগিত হওয়া প্রায় সব পরীক্ষাই আগামী অক্টোবর মাস থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। এতে হতাশায় থাকা চাকরি প্রার্থীদের আশার সঞ্চার হচ্ছে।
বাংলাদেশে ৯০ লাখ মানুষ আনুষ্ঠানিক খাতে চাকরি করেন। এর মধ্যে ১৫ লাখ সরকারি খাতে, বাকি ৭৫ লাখ বেসরকারি খাতে। অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন ছয় কোটি ৮ লাখ মানুষ। বাংলাদেশে প্রতি বছর চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন ২৫ লাখ তরুণ। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ লাখ তরুণের চাকরির সংস্থান হয়, বাকিরা বেকার থাকেন।
এর মধ্যে চলতি বছর এপ্রিল-মে মাসের দিকে ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা আটকে যায়। দেশের প্রেক্ষাপটে তরুণদের কাছে এখন সবচেয়ে আকর্ষণীয় চাকরি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেয়া। চাকরি প্রার্থী তরুণদের বড় একটি অংশও এই বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু পরীক্ষা আটকে যাওয়ায় হতাশা পেয়ে বসে তাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র নূর আলম অনার্স শেষ করেই সিভিল সার্ভিসের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। তবে করোনার কারণে ছেদ পড়ে তার প্রস্তুতিতে। দীর্ঘ সময় ধরে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ থাকায় তিনিও হতাশ হয়ে পড়েন। তার কথা, ‘‘আমাদের এই সময়ে দৌড়ের মধ্যে থাকার কথা। কিন্তু এখন হল ছেড়ে বাড়িতে বসে ঝিমুচ্ছি। আমদের বন্ধুদেরও একই অবস্থা।’’
করোনার আগে যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো দেয়া হয়েছিল সেগুলোও এখন স্থগিত আছে। বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে করোনাকালে নতুন করে কোনো নিয়োগ হয়নি। আর বিসিএসের বাইরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে নিয়োগও বন্ধ রয়েছে। পুলিশে সাব-ইন্সপেক্টর পদে বড় একটি নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল তা-ও বন্ধ। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নিয়োগ বন্ধ আছে।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধীরে ধীরে এই চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। দেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ইতোমধ্যে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আওতায় সরকারি মাধ্যমে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া স্থগিত হওয়া ৭টি ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও আগামী অক্টোবরে প্রকাশিত হবে। ফলে চাকরিপ্রত্যাশীদের মাঝে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে।
অচলাবস্থা কাটাতে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড শুরুও করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। অবশ্য করোনার কারণে এখনো পরীক্ষা নিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। তবে পিএসসি’র চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, অফিস খোলার পর সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে পিএসসি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম পুরোদমে চলবে।
জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনেও (পিকেএসএফ) বিভিন্ন শূন্যপদে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছেন। একইভাবে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য আবেদনপত্র চাইবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন সম্প্রতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, এসব তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। তালিকা চূড়ান্ত করে নিবন্ধিত প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
তবুও হতাশার একটি চাপ থেকে যাচ্ছে। করোনা সংকটের ফলে দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস চাকরির বাজার বন্ধ থাকায় সার্বিক কর্মসংস্থানে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যদিও আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে; তবুও কর্মসংস্থান সহজে পূর্বের জায়গায় ফিরবে না।
জানা গেছে, বাংলাদেশের সরকারি খাত সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থানে সক্ষম। বাকি ৯৬ শতাংশ এখনো বেসরকারি, ব্যক্তিমালিকানা বা আত্মকর্মসংস্থানে জড়িত। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানে সরকারি খাতে চাকরি আছে মাত্র ৩.৮ ভাগ, বেসরকারি খাতে ১৪.২ ভাগ, ব্যক্তি খাতে ৬০.৯ ভাগ এবং অন্যান্য খাতে ২১.১ ভাগ।
এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে নিয়োগ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এ সময় প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ ছিল। তবে এখন খুব স্বল্প পরিসরে নিয়োগ শুরু হয়েছে ৷ বিডি জবস-এর প্রধান নির্বাহী একেএম ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘‘এই নিয়োগও হচ্ছে লার্জ স্কেল কোম্পানিতে। এসএমই খাত আসলে নতুন নিয়োগ এখনো শুরু করতে পারেনি। কারণ, তাদের ব্যবসা বসে গেছে।’’
তবে আগামীতে কর্মসংস্থানের সুযোগ কতটা বাড়বে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ আছে। কারণ, উৎপাদনের ধরনে পরিবর্তন আসতে পারে। সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘কম জনশক্তি দিয়ে কতটা সক্ষমভাবে উৎপাদন করা যায় তার একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলেও আগের মতো কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে।’’