২৪ আগস্ট ২০২০, ০৯:২৭

নাছিমার বানানো পরিবেশবান্ধব কলম এখন শিক্ষার্থীদের হাতে

  © সংগৃহীত

কাগজ দিয়ে পরিবেশবান্ধব কলম তৈরি করছেন যশোরের গৃহবধূ নাছিমা আক্তার। ছোটবেলা থেকেই নতুন কিছু করার শখ তার। কিশোর বয়সে রঙিন কাগজে ফুল কিংবা খেলনা বানিয়ে সাজাতেন ঘর। সেই শখের বসেই কাগজ ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে তিনি তৈরি করছেন নানান রঙের কলম। তবে এরই মধ্যে ওই অন্ঞ্চলটিতে ‘শুভ পরিবেশবান্ধব কলম’ নামের এই কলম বেশ সাড়া পড়েছে। যা এখন যশোরের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে।

যশোর শহরের লোনঅফিস পাড়া এলাকার বাসিন্দা নাছিমা আক্তার। স্বামী মীর রবিউল আলম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়ে একরকম ঘরেই আছেন তিনি। তাদের মেয়ে অনার্সে পড়াশোনা করছেন আর ছেলে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তবে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তা পেলে এটিকে শিল্পে রূপান্তরে আশাবাদী নাছিমা। এরই মধ্যে যশোরের পুলিশ সুপার তার এ নতুন উদ্ভাবনের প্রশংসা করেছেন। তার পরিচালিত পুলিশ লাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ পরিবেশবান্ধব কলম ব্যবহারে নিদের্শনা দিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।

নাছিমা আক্তার জানান, শখের বসেই কাগজ ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে কলম বানানোর চেষ্টা করলেও এটা যে বাস্তব জীবনে কাজে লাগবে সেটা ভাবেন নি তিনি। প্রতিদিন হাতে প্রায় ৩০০ পিস কলম তৈরি করতে পারেন। আর প্রতি পিস কলমের বিক্রয়মূল্য মাত্র পাঁচ টাকা। তার প্রতিদিন ৩০০ পিস কলম তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ৯০০ টাকা। যা বিক্রি করে লাভ থাকে প্রায় ৫০০ টাকা। আর এই আয় দিয়েই অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা আর দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চলছে তার।

তিনি জানান, রঙিন কাগজে তৈরি পরিবেশবান্ধব এই কলম অন্য কেউ এখনও তৈরি করেনি। যে কারণে এটি বাজারে পাওয়া যায় না। প্রাথমিকভাবে তিনি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিক্রি করছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও কলমটির ব্যবহার বেড়েছে। ফলে উৎপাদন বাড়াতে পাড়লে কলমগুলো বাণিজ্যিকভাবে বাজারে বিক্রি করা যেতো। নাছিমা আক্তারের ছেলে মীর নাঈম আলম শুভ তার কাজে সহায়তা করছেন। যার নামেই কলমের নামকরণ করা হয়েছে ‘শুভ পরিবেশবান্ধব কলম’।

তিনি আরো জানান, গত বছরের জুনে পরিবারে অর্থনৈতিক সংকট চরম আকার দেখা দিলে সব সংশয় দূরে সরিয়ে নাছিমা প্রথম একশ’ পিস কলম নিয়ে উপস্থিত হন যশোর সদরের বাহাদুরপুর স্কুলে। সেখানকার প্রধান শিক্ষককে তার তৈরি কলম দেখিয়ে সেগুলো বিক্রির অনুমতি চান। প্রধানশিক্ষক তার বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়ে খুব অল্পসময়ের মধ্যে সেগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করে দেন। ওই শিক্ষকই তাকে পরামর্শ দেন, কলমগুলোতে যেন পরিবেশবান্ধব সিল লাগিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে নাছিমা তার বানানো কলম প্রথমদিকে যশোরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করতেন। পরে করোনা পরিস্থিতির কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কলম বিপণনে একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে এখন তিনি বিভিন্ন অফিসসে এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কলম সরবরাহ করছেন।

তার মতে, দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার প্লাস্টিকের কলম ব্যবহৃত হয়। সেইসব কলম মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়, যা অপচনশীল। এ থেকে পরিবেশ নষ্ট হয়, মাটি ও বাতাস নষ্ট হয়। কিন্তু তার তৈরি কলমে কাগজের ব্যবহার হয়, কাগজ পচনশীল। সেকারণে ভোক্তাদের আগ্রহ রয়েছে বেশ।

যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার প্লাস্টিকের কলম ব্যবহৃত হয়। সেইসব কলম মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়, যা থেকে পরিবেশ নষ্ট হয়। কিন্তু নাছিমার তৈরি কলমে কাগজের ব্যবহার হয়, ফলে এটি পরিবেশবান্ধব। পরবর্তীতে জেলা পুলিশ চাহিদা অনুযায়ী নাছিমার কাছ থেকে কলম সংগ্রহ করবে।