আশিক ভেবেই নিয়েছিল— আমার দ্বারা কিছু হবে না
বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই চায় বিসিএস ক্যাডার হতে। চায় নিজেকে একজন প্রথম শ্রেণির গ্রেজেটেড অফিসার হিসেবে পরিচয় দিতে। বাবা-মায়ের স্বপ্নটা নিজের স্বপ্নের সাথে মিলিয়ে নিতে। যারা তাকে হতাশ করেছে তাদের চমকে দিতে। একজন সৎ দক্ষ জাতি গড়ার মেশিন হতে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্মানের চোখ থাকতে।
কিন্তু দিন শেষে ক’জন তা পারে? কজনইবা বাবা-মায়ের স্বপ্নটা নিজের স্বপ্নের সাথে মিলিয়ে নিতে পারে। ইচ্ছা শক্তি থাকলেও ধৈর্য ক’জনে রাখে। একবার ব্যর্থ হলে ক’জনইবা হাতাশ না হয়ে নিজের চেষ্টা চালিয়ে যায়? নিজের সফলতার দিকে দৌড়াতে থাকে ক'জন ?
এসব কিছুর থেকে ভিন্ন কুমিল্লার দেবীদ্বারের আশিকুল হক আল মাহমুদ। দেবীদ্বারের জাফরগঞ্জে শৈশব-কৈশর কাটিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য আশিক পাড়ি জমান ঢাকায়। ভর্তি যুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে জয় করে শুরু করেন নতুন যুদ্ধ। প্রাইভেট-টিউশনির পাশাপাশি নিজের পড়াশুনা, সব কিছুর মাঝে শুরু হয় নিজের চাকরির পড়াশুনা।
সময় বহমান, ধীরে ধীরে কেটে গেল চারটি বছর। ২০১৫ সালে অনার্স শেষ করা আশিক শুধুই একটা চাকরি নামক সোনার হরণের খোঁজ করছিল। জবির দর্শন বিভাগে অষ্টম হয়েও আশিকের ভাগ্যের সাথে একবারও ধরা দেয়নি তার সফলতা। আশিক তো একবার ভেবেই নিয়েছে— আর কিছুই হবে না আমার দ্বারা।
তার মাঝে একবার স্বপ্ন দেখেছিল মিলিটারি অফিসার হবে। পরে নেভিতে কমিশন্ড অফিসার পদে আবেদন করে। স্বপ্ন তার সত্যি হয়েও হয়নি। এবারও ব্যর্থ। আইএসএসবিতে রেড কার্ড পেয়ে ফিরে আসতে হয় আশিককে।
কিন্তু তার পরেও থেমে জাননি আশিক। এবার সব চাকরি বাদ দিয়ে ছুটেন বিসিএসের লক্ষ্যে। ৩৮তম বিসিএসের এই নতুন জার্নি চেনে না দিন চেনে না রাত। লক্ষ্য একটাই— বিসিএস ক্যাডার হওয়া।
পরীক্ষাও শেষ। এবার ফলাফলের পালা। নিষ্ঠুর ভাগ্যটা এবার আর তার সফলতাকে কেড়ে নিতে পারেনি। আশিক শিক্ষা ক্যাডারে (দর্শন বিভাগ) সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন।
এসব গল্প শুনার ফাঁকেই আশিক তার জীবনের লুকোনো সত্যগুলো বলে জানান, দমে গিয়েছিলাম হয়ত কিন্তু হতাশা আমাকে ছুতেও পারেনি। নিজের উপর বিশ্বাস রেখেছি তাই হারিনি। নিজের উপর বিশ্বাস রাখলে আর ইচ্ছা থাকলেই মানুষ শেষ মুহূর্তে হলেও মানুষ তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। আর নিজের সফলতার মূলে সব সময় ব্যক্তি নিজেই। যাইহোক ইচ্ছাটা পূরণ হয়েছে।