২৪ মে ২০২০, ১১:২৪

করোনা সংকট তাদেরকে মহাসংকটে ফেলেছে

  © প্রতীকী ছবি

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে দেশে লকডাউন চলছে। হাসপাতাল, ব্যাংকসহ কিছু প্রতিষ্ঠান বাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ প্রায় সবকিছু। এ অবস্থায় যেন মহাসংকটে পড়েছেন পাঁচ লাখেরও বেশি চাকরিপ্রত্যাশী বেকার; যারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। একদিকে চাকরি পাচ্ছেন না, অন্যদিকে টিউশনি কিংবা পার্টটাইম জবের আয় বন্ধ— সবমিলিয়ে উভয়সংকটে পড়েছেন এসব গ্র্যাজুয়েটরা।

জানা যায়, করোনার কারণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের নিয়োগ বন্ধ। চলতি কিংবা আগামী মাসে ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি এবং তার আগে ৩৮তম বিসিএসসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের সময় ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গেছে। সরকারি কর্ম কমিশন বলছে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগে কিছেই বলা যাচ্ছে না। ঠিক একইভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে বেশ কিছু নিয়োগ পরীক্ষার প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন হলেও মৌখিক পরীক্ষা হয়নি। আবার কোনো নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন হলেও প্রকাশিত হচ্ছে না চূড়ান্ত ফল। এ অবস্থায় করোনা সংকট বেকারদের কাছে মহাসংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ দেওয়া তথ্য মতে, দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত বেকার ২৩ লাখ ৭৭ হাজার এবং অশিক্ষিত বেকার তিন লাখ। বেকারদের মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষিত; যারা উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস। উচ্চশিক্ষা পর্বের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা শেষ করা বেকারের সংখ্যা চার লাখ পাঁচ হাজার।

চাকরিপ্রত্যাশীরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হচ্ছে না। আবার যেসব পরীক্ষা আধাসম্পন্ন হয়েছে, সেগুলোর চূড়ান্ত ফলও প্রকাশিত হয়নি। এতে করে দীর্ঘায়িত হচ্ছে তাদের প্রত্যাশা। তাদের ভাষ্য, একদিকে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নেই, অন্যদিকে যেসব বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোও থমকে গেছে। এমন অবস্থায় কী করা যায়— দিশা পাচ্ছেন না চাকরিপ্রত্যাশীরা।

তারা বলছেন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের নির্ধারিত সীমা অনুযায়ী ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ আর সরকারি চাকরির নিয়োগে আবেদন করতে পারে না। করোনায় সব নিয়োগ স্থগিত এবং নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত না হওয়ায় বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি উঠেছে। যদিও এ বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত সাড়া মিলছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী কামরুজ্জামান রুবেল বলছেন, শিক্ষাজীবন শেষ করে সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা চালালেও এখনো সুযোগ হয়নি। তাই পার্টটাইম চাকরি করে সংসারের হাল ধরেছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে।

তিনি আরও জানান, আমরা যারা চাকরির জন্য প্রস্তুতি বা আবেদন করছি তাদের সমস্যা বেশি। কারণ হিসেবে তার বক্তব্য, চাকরিপ্রতি আবদেনের কমপক্ষে ৫০০ টাকা লাগে। আবার যেগুলোয় আবেদন করছি, সেগুলোর পরীক্ষা কখন হবে— সেটাও এখন অনিশ্চিত। তার মত শিক্ষিত বেকারদের কথা চিন্তা করে সরকারের পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান বাড়ানো উচিত বলে তিনি মনে করেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের শিক্ষিত তরুণদের বড় একটা অংশ বেকার। দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় এই বেকারত্বের হার দিন দিন বাড়ছে। ফলে এসব তরুণরা দেশের সম্পদের পরিবর্তে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজধানীর বাইরের প্রতিষ্ঠান থেকে পাস শিক্ষার্থীরা কষ্টে আছেন আরো বেশি। এদেরই একজন নোয়াখালী সরকারি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সালেহ আহমেদ। কাঙ্ক্ষিত চাকরির আশায় অনেক চেষ্টা করেও সুযোগ পাননি তিনি। এদিকে চলতি বছরই বয়সের কারণে শেষ হতে যাচ্ছে তার সরকারি চাকরিতে আবেদনের সুযোগ। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি জানান, সেশনজট আমার জীবন থেকে প্রায় তিন বছর কেড়ে নিয়েছে। চলতি বছরটি হাতে আছে। ইচ্ছে ছিল, এটাকে কাজে লাগিয়ে কাঙ্ক্ষিত একটি সরকারি চাকরি পাব। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি আমার জীবনে আরো অন্ধকার এনে দিয়েছে।

তিনি আরও জানান, এখন তিন বেলা খেতে পারলেও নিজের প্রয়োজনে কিছুই করার সামর্থ্য নেই। পরিবারের অবস্থা খারাপ হওয়ায় সেখান থেকেও টাকা আনার সুযোগ নেই। সবমিলিয়ে এই সংকট থেকে কবে মুক্তি পাব— তা অজানা।

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, করোনার প্রকোপে সবচেয়ে ক্ষতির মধ্যে পড়েছে শিক্ষিত বেকার শ্রেণি। চাকরি প্রস্তুতির পাশাপাশি পার্টটাইম জব ও কিংবা টিউশনি করে দিন পার করলেও করোনার কারণে এখন সবকিছু বন্ধ। এই সংকট যেন তাদের জীবনে মহাসংকট এনে দিয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেকার যুবকদের প্রতি সরকারের আলাদা দৃষ্টি দেওয়া উচিত। তা না হলে আত্মহত্যা ছাড়া তাদের আর পথ থাকবে না। মহামারির কারণে যাদের চাকরির বয়স শেষের দিকে, তাদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করে চাকরির আবেদনের সুযোগ দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।