বিদেশফেরত কর্মীদের আয়ের কোনও উৎস নেই : ব্র্যাক
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে দেশে ফেরত আসা কর্মীদের ৮৭ শতাংশেরই কোনও আয়ের উৎস নেই। তাদের মধ্যে সঞ্চয় দিয়ে তিন মাস বা বেশি সময় চলতে পারবেন এমন কর্মীর সংখ্যা ৩৩ শতাংশ।
আর ৫২ শতাংশ বলছেন, জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন তাদের। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি অভিবাসন কর্মসূচির আওতায় ‘বিদেশ ফেরত অভিবাসী কর্মীদের জীবন ও জীবিকার ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব’ শীর্ষক এ জরিপ চালায়।
আজ শুক্রবার (২২ মে) অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান। ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ প্রোগ্রামের পরিচালক কে এ এম মোরশেদ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, করোনা সংক্রমণ শুরুর পর ফেরত এসেছেন এমন ৫৫৮ জন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৬ শতাংশই ফিরেছেন মার্চে।
অংশগ্রহণকারীদের ৪৫ শতাংশ এসেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমান এবং কুয়েত থেকে। আর বাকিরা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইতালি, মালদ্বীপসহ কয়েকটি দেশ থেকে ফিরেছেন।
জরিপে বলা হয়, অংশগ্রহণকারীদের ৪০ শতাংশ করোনার কারণে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া ৩৫ শতাংশ ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। আর ১৮ শতাংশ পারিবারিক কারণে চলে এসেছেন।
এরমধ্যে ৭ শতাংশ বলেছেন, তাদের ফেরার সঙ্গে করোনার সম্পর্ক নেই। অংশগ্রহণকারীদের ৮৪ শতাংশ বলেছেন, তারা ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। আর ১৪ শতাংশ কোয়ারেন্টিন মানতে পারেননি। বাকি দুই শতাংশ এক সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে ছিলেন।
ফেরত আসার পর বর্তমান অবস্থার বিষয়ে ৭৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ভীতির মধ্যে রয়েছেন। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির ১২ জন কাউন্সেলর তাদেরকে মনোসামাজিক সেবা দিয়েছেন।
২৯ শতাংশ বলেছেন, প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনরা তাদের ফিরে আসাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। এমনকি তাদের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রদর্শন করেনি। তবে ৯৭ শতাংশ বলেছেন, পরিবার সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে তাদের জন্য।
৩৪ শতাংশ জানান, তাদের নিজেদের সঞ্চয় বলতে কিছু নেই। ১৯ শতাংশ জানান, তাদের সঞ্চয় দিয়ে আরও এক-দুই মাস চলতে পারবেন। আর তিন মাস বা তার বেশি সময় চলতে পারবেন ৩৩ শতাংশ।
১০ শতাংশ জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উৎস থেকে তারা ঋণ গ্রহণ করেছেন। আর ১৪ শতাংশ সঞ্চয়ের ব্যাপারে কোনও তথ্য দিতে রাজি হননি।
ব্র্যাক জানায়, মোবাইল ফোনে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, অভিবাসীদের শতকরা ৮৪ ভাগ জীবিকা নিয়ে কোনও পরিকল্পনা করতে পারেননি। আর ছয় শতাংশ জানিয়েছেন, তারা পুনরায় বিদেশে যাওয়ার কথা ভাবছেন।
বাকিরা কৃষিভিত্তিক ছোট ব্যবসা, মুদি বা অন্যকিছু করার পরিকল্পনা করছেন। বিদেশফেরত ৯১ শতাংশ বলেছেন, তারা সরকারি বা বেসরকারি কোনও সহযোগিতা পাননি। বাকি ৯ শতাংশ সামান্য হলেও সহযোগিতা পেয়েছেন।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘বিদেশফেরতদের বর্তমান অবস্থা, সংকট এবং করোনা জীবন ও জীবিকার ওপর কী কী প্রভাব ফেলেছে, তা জানতেই এই জরিপ। ফেরত আসা ৮৭ শতাংশেরই আয়ের উৎস নেই। ৫২ শতাংশ বলছেন, তারা সহায়তা চান।’
তিনি বলেন, সামনের দিনগুলোতে অনেকে চাকরি হারিয়ে ফিরে আসতে পারেন। সরকার তাদেরকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই কাজটি শুধু সরকারের একার নয়। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে কাজ করতে হবে।’
শরিফুল হাসান জানান, ঈদ সামনে রেখে মে মাসের ১৯ দিনে ১০৯ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে, যা প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। আর জানুয়ারি থেকে ধরলে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। কজেই সংকটময় সময়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
সমস্যা সমাধানে পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি। এর মধ্যে রয়েছে— তাদের পরিবারের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ না করা ও সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি নিরূপণ করে মনোসামাজিক সহায়তাসহ টেকসই পুনরেকত্রীকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করা, সহজ শর্তে বিভিন্ন ধরনের ঋণ সুবিধা, জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানো বন্ধ করা এবং তারা যেন কাজে ফিরতে পারেন, সেই উদ্যোগ নেওয়া।