হতাশ চাকরিপ্রত্যাশীরা: প্রস্তুতি চলছে, চলছে না
বছরখানেক আগে মাস্টার্স শেষ করেছেন শহিদুল ইসলাম। স্বপ্ন ছিল— দ্রুত একটা চাকরি পেয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু করোনাভাইরাস তার স্বপ্নকে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে। সকল নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ থাকায় বেকারত্ব থেকে শীঘ্রই মুক্তি মিলছে না এই শিক্ষার্থীর। কিছুটা হতাশা নিয়েই দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বললেন, ‘একজন চাকরিপ্রত্যাশী হিসেবে আমাদের সবারই বেকারত্ব থেকে মুক্তিলাভের আশা থাকে। কিন্তু চলমান মহামারীতে প্রস্তুতি এগিয়ে নেয়ার বিপরীতে ভাবতে হচ্ছে কখন দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কখন অপেক্ষায় প্রহর শেষ হবে।’
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী আপাতত প্রস্তুতির জন্য বেছে নিয়েছেন অনলাইনকে। ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন বিসিএসসহ বিভিন্ন নিয়োগপরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষায়।
শুধু শহীদুল ইসলাম নন, চাকরিপ্রত্যাশী অনেকের অবস্থা প্রায় এমনই। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে চাকরিপ্রত্যাশী কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের বেশিরভাগের বক্তব্যেই উঠে এসেছে হতাশা এবং প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অনলাইন নির্ভরতার বিষয়টি।
তবে বিপরীত চিত্রও আছে। বেকারত্বের অভিশাপ দূর করতে করোনা-প্রভাব কিংবা লকডাউন ভুলে গেছে অনেকেই। যাদের ভাষ্য, করোনার পরবর্তী সময়ে চাকরির পেতে দিগুণ প্রতিযোগিতা হবে। তাই এই সময়ে পড়াশোনায় যারা যতবেশি পিছিয়ে থাকবেন, চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা তাদের তত কমে যাবে। ওই শিক্ষার্থীরা জানান, করোনা যেহেতু ব্যবসায় প্রভাব ফেলছে; তাই লকডাউনের পর নতুন করে বেসরকারি চাকরির সার্কুলার কম পাওয়া যাবে। অনেক ক্ষেত্রে আগের আবেদনগুলোও স্থগিত কিংবা বাতিল হতে পারে। ভরসা যা সরকারি চাকরির আবেদনগুলোই। সবকিছু বিবেচনা করলে প্রস্তুতির সময় এখনই। এই সময়কেই সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হবে।
তবে প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফ্রেমওয়ার্ক না থাকা এবং প্রয়োজনীয় বইয়ের সংকটকে প্রধান সমস্যা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্নকারী জাহিদ হাসান বলেন, ‘কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা যেহেতু জানা নেই, তাই নির্দিষ্ট কোনো ফ্রেমওয়ার্কে পড়া যাচ্ছেনা। কারেন্ট ইনফো বহন করে এমন বইয়ের ঘাটতিও আছে বাজারে। আবার ঢাকা থেকে সব বই আনারও সুযোগ ঘটেনি। তাই বাসায় হঠাৎ ভিন্ন পরিস্থিতিতে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
আর্থিক সমস্যা ও মানসিক চাপের বিষয়টি উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্নকারী আবু সুফিয়ান বলেন, অলিখিত লকডাউন আমাদের মতো চাকরিপ্রত্যাশী বেকারদের জন্য ‘মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে করোনার কারণে জীবন নিয়ে আতঙ্কিত, অন্যদিকে টিউশনির মতো খন্ডকালীন জব হারিয়ে আর্থিক সংকটের যাতাকলে পিষ্ট। উভয়মুখী সংকটের ফলে মানসিক চাপে চাকরির পড়াশোনা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় আপাতত আমার চাকরির পড়ালেখা তেমন একটা হচ্ছে না।’
তবে পবিপ্রবির শহিদুল ইসলামের মত অনেকে আবার চেষ্টা করছেন অনলাইনের মাধ্যমে প্রস্তুতির ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে। এমনই একজন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রণি গোলদার। তিনি বর্তমানে বিসিএস প্রস্তুতির জন্য একটি কোচিং সেন্টারের অনলাইন ক্লাসে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন এবং প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা দিচ্ছেন।
পিডিএফ এবং গুগলের মাধ্যমে বইয়ের ঘাটতি পূরণের চেষ্টার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করা মোঃ হাতেম আলী বলেন, ‘বর্তমানে চাকরির প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা হলো কাছে বই নেই। এমতাবস্থায় গুগল সার্চ করে বিভিন্ন পিডিএফ ফাইল ও বিভিন্ন চাকরির গ্রুপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সাহায্যে যতটুকু পারছি, ততটুকু পড়েই জন্য প্রস্তুতি নেয়ার চেষ্টা করছি।’
একই পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মাহফুজ মিশু বলেন, ‘একটি চাকরির পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ঢাকায় এসেছিলাম লিখিত পরীক্ষায় ভালো কিছু করার আশা নিয়ে। কোচিংয়ে ভর্তিও হয়েছিলাম কিন্তু করোনার এই বৈশ্বিক মহামারীর কারনে হঠাৎই কেচিং হোস্টেল সবই বন্ধ হয়ে গেল। এখন না পারছি বাড়িতে যেতে না পারছি একা থেকে পড়ালেখা গুছিয়ে নিতে। আপাতত অনলাইন থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেই প্রস্তুতি গ্রহণের চেষ্টা করছি।’
তবে বিপরীত চিত্র তুলে দরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী জয়নুল হক জানি বলছিলেন, মানসিক অশান্তি আছে, তবে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। লকডাউনে বাইরে যেতে হয় না। বাইরের কেউ-ও তেমন বাসায় আসে না। সে হিসেবে চাকরির প্রস্তুতি ভালোই চলছে।
একই কথা জানালেন বেসরকারি ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ফরিদুল ইসলাম। তার বক্তব্য- সামগ্রিক পরিস্থিতি খারাপ হলেও গ্রামে ওই অর্থে করোনার প্রভাব নেই। সে হিসেবে কিছুটা স্বস্তিতে আছেন তিনি। রমজান মাস চলছে। রাতে না ঘুমালেও চলে। সবমিলিয়ে পড়ালেখা ভালোই চলছে।