২০ জানুয়ারি ২০২০, ১০:১৪

চাকরিতে কোটা সংক্রান্ত বিধিবিধান আবারও পরিবর্তন হচ্ছে

২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন  © ফাইল ফটো

সরকারি চাকরিতে কোটাসংক্রান্ত বিধিবিধান আবারও পরিবর্তন করা হচ্ছে। আজ সোমবার এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে জারি করা পরিপত্রে যেসব গ্রেড অন্তর্ভুক্ত না করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, তা অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সরকারের রুলস অব বিজিনেসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেই ক্ষেত্রে বিষয়টি মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে সংশোধন করতে হবে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের যুগ্মসচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, সরকারি চাকরিতে সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি থেকে সব ধরনের কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্রে একটু ভুল আছে। ওই সময় কম সময় নিয়ে কাজ করায় এ ত্রুটি হয়েছে।

বাতিল করা পরিপত্রে নন ক্যাডার প্রধান পরিদর্শক, কম্পিউটার প্রোগ্রামার, সিনিয়র প্রোগ্রামারসহ কারিগরি সেক্টরের কিছু কিছু পদে কর্মরত ৮ম গ্রেডের কর্মরতদের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর আমরা সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব শিগগিরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করা হবে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর প্রথম দ্বিতীয় শ্রেণির সব ধরনের চাকরি থেকে কোটা তুলে দেওয়া হয়। ওই সময় জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, ৯ম গ্রেড অর্থাৎ সাবেক প্রথম শ্রেণি এবং ১০ থেকে নিয়ে ১৩তম গ্রেড অর্থাৎ সাবেক দ্বিতীয় শ্রেণির সব পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা তুলে দেওয়া হয়েছে।

ওই সময় ভুলক্রমে সাবেক প্রথম শ্রেণিভুক্ত ৮ম গ্রেড ও তদূর্ধ্ব পদে কর্মরতদের বিষয়ে কোনো বক্তব্য কোটা বাতিল সংক্রান্ত পরিপত্রে কিছুই উল্লেখ ছিল না। অথচ ৯ম গ্রেড এবং ১০ থেকে ১৩তম গ্রেড ছাড়াও ৮ম গ্রেড ও তদূর্ধ্ব পদেও সরকারি কর্মকমিশন সরাসরি জনবল নিয়োগ দিয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব হচ্ছে ৯ম গ্রেডের স্থলে ৯ম ও তদূর্ধ্ব পদে জনবল নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হলো। এ প্রস্তাব অনুমোদনের পর ফের পরিপত্র জারি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে বেতন কাঠামো অনুযায়ী মোট ২০টি গ্রেড রয়েছে। এর প্রথম গ্রেডে অবস্থান করেন সচিবরা। আর প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে যারা নিয়োগ পান তাদের শুরুটা হয় ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের মধ্যে। একজন গেজেটেড বা নন গেজেটেড প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা ৯ম গ্রেডে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। এসব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা ও শর্ত সাপেক্ষে ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা অর্থাৎ মোট ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের বিধান ছিল।

শুধু তাই নয়, সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা তুলে দেওয়ার পর এবার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি চাকরিতে শর্ত সাপেক্ষে কোটা তুলে দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা সংরক্ষণ করা হবে না। আগে নিয়ম ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির কোটায় যোগ্য চাকরি প্রার্থী না পাওয়া গেলে ওই পদে কাউকে নিয়োগ না দিয়ে শূণ্য রাখা হতো। ওই পদে কাউকে নিয়োগ না দিয়ে পদগুলো সংরক্ষণ করা হতো। এখন যদি কোটার কোনো যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যায় তাহলে জেলার সাধারণ মেধাবীদের মধ্যে যারা মেধা তালিকার শীর্ষে রয়েছেন, তাদের মধ্যে থেকে পূরণের বিধান চালু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালের ৫ মে জারি করা এক পরিপত্রে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সব ধরণের কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলনের মধ্যে ৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় পুলিশ ও ছাত্রলীগের। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেল বছর ১১ এপ্রিলে জাতীয় সংসদে বলেন, কোটা নিয়ে যেহেতু এত কিছু, সেহেতু কোনো কোটাই আর রাখা হবে না। কোটা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করার কথাও ওই দিন বলেন সরকার প্রধান। পরদিন কয়েকটি দাবি রেখে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। পরবর্তীতে গেল বছর ৪ অক্টোবর প্রজ্ঞাপনমূলে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদের সকল কোটাই বিলুপ্ত করা হয়।

২০১০ সালে জারি করা আদেশে যা বলা হয়েছে: ২০১০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সরকারি আধা সরকারি দফতর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা প্রতিষ্ঠান এবং করপোরেশনে সরাসরি জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ করতে হবে। যদি সরকারি পদে জনবল নিয়োগের সময় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না যায়, তাহলে ওই সব সাধারণ কোটার জনবল নিয়োগ দেওয়া যাবে না। বরং মুক্তিযোদ্ধা কোটার পদগুলো অবশ্যই শূণ্য রাখতে হবে। এমনকি বিভাগীয় পদগুলোতে জনবল নিয়োগেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।