ব্যাংকে কেন আপনার চাকরি হচ্ছে না?
ব্যাংকে বারবার পরীক্ষা দিয়েও চাকরি হচ্ছে না এমন প্রার্থী যেমন আছেন, এক ধাপ পেরিয়ে প্রতিবার আরেক ধাপে গিয়েই বাদ পড়ছেন এমনও নজির আছে। বেশির ভাগ প্রার্থীর অবস্থা মূল্যায়ন করে বাদ পড়ার হাফ ডজন কারণ খুঁজে বের করেছেন সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র অফিসার নাজিরুল ইসলাম নাদিম
১। প্রথম কথা হলো—আপনি গণিতে কাঁচা! শুধু ব্যাংকেই না, বেশির ভাগ চাকরির ক্ষেত্রে গণিতটাই বড় বাধা। গণিতে আপনার দুর্বলতা থাকাটা সমস্যা না, দুর্বলতা কাটানোর চেষ্টা বা সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়াটাই আসল সমস্যা। হয়তো ভেবে বসে আছেন, বাজারের দু-একটি বই ঘাঁটলেই গণিতের ম্যাজিক্যাল শর্টকাট পেয়ে যাবেন, আর সে ম্যাজিক দিয়েই সপ্তাহখানেকের মধ্যে গণিতে এক্সপার্ট হয়ে যাবেন! গণিত বিষয়টাই তো বোঝার। ঠিকঠাক উপায় ছাড়া কিভাবে বুঝবেন? তাই বলব, প্রতিদিনই গণিত চর্চা করেন। গণিতের নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই—সামনে যে অঙ্কটা পাবেন করবেন। শুধু গাইডের ওপর ভরসা করে নতুন নতুন বই কিনে মাথা আউলাবেন না। ক্লাস ফাইভের বই দিয়ে শুরু করুন। এরপর মাধ্যমিক পর্যায়ের গণিতের সব ক্লাসের বই শেষ করে বিভিন্ন লেখকের বই প্র্যাকটিস করার চেষ্টা করুন। সঙ্গে বিভিন্ন সাইট থেকেও নিজে নিজে গণিত চর্চা করতে পারেন। গণিত শুধু নিয়ম দেখলেই চলবে না, খাতায় নিজে নিজে করে দক্ষতা ঝালাই করতে হবে।
২। গণিতের মতো ইংরেজিতেও অনেকের দুর্বলতা আছে। অনেকে অভিজ্ঞদের কাছে জিজ্ঞেস করেন কোন বইটা ভালো, কোনটা থেকে প্রশ্ন কমন পড়বে! এভাবে কমনের আশায় বই খুঁজে নিজেকে ধোঁকা দেবেন না। ইংরেজিতে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলুন, তখন আর কমন নিয়ে টেনশন করতে হবে না—প্রশ্ন যেভাবেই আসুক পারবেন।
আগে গ্রামারটা ভালো করে বুঝুন। সবচেয়ে ভালো হয় অষ্টম-নবম শ্রেণির বই দিয়ে প্রস্তুতি শুরু করলে। গত বছরের ব্যাংকের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করুন, তাহলে একদিকে ধারণা পাবেন আর এর জন্য কোন লেভেলের প্রস্তুতি দরকার, সেটাও আন্দাজ করতে পারবেন। গ্রামারের আবশ্যিক বিষয়গুলো নিয়মিত গুরুত্ব দিয়ে চর্চা করুন। প্রিলি ও রিটেনে ভালো করতে অনুবাদেও বাড়তি জোর দেবেন। ইংরেজি পত্রিকার দু-তিনটা কলাম প্রতিদিন অনুবাদ করার চেষ্টা করুন। এভাবে চলতে থাকলে দু-তিন মাসেই নিজের অগ্রগতি টের পাবেন।
৩। আপনি বাছাই পরীক্ষার রিটেনেও টিকতে পারছেন না। হতে পারে— রিটেনের ক্রিয়েটিভ রাইটিং বা বাংলা রচনায় সাদামাটা কিছু কথা লিখে দিয়ে এসেছেন। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এভাবে লিখেছেন আর ভাবছেন ‘ভালো নম্বর পাবেন’, কিভাবে? এভাবে ভালো মার্কস না-ও আসতে পারে।
তথ্য-উপাত্ত, গ্রাফ-চার্ট দিয়ে লেখা আরো সমৃদ্ধ করতে হবে। দরকার পড়লে নীল কালি দিয়ে তথ্য-উপাত্তগুলো লিখে হাইলাইটস করতে পারেন। একবার ভাবুন, নিজেই যদি পরীক্ষক হতেন, তাহলে কোন খাতায় বেশি মার্কস দিতেন? যে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মতো মুখস্থ কথা লিখেছেন তাঁর খাতায়, নাকি তথ্যসমৃদ্ধ ও গোছানো লেখায়?
৪। অনেকে আছেন, প্রশ্ন বিশ্লেষণ না করেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাই খাটুনির ফল পাচ্ছেন না। ব্যাংকের গত বছরগুলোর প্রশ্ন নিয়ে বসুন, একটার সঙ্গে আরেকটার তুলনা খুঁজুন, বিশ্লেষণ করুন। সাধারণত কোন টাইপের ম্যাথ এসেছে, সেগুলো কেমন পারেন আর আপনার দুর্বলতা কোন টাইপের ম্যাথে। ক্রিয়েটিভ রাইটিংসে কি টাইপের টপিক এসেছে, সেগুলো লিখতে গেলে কী কী জানতে হবে, কেমন ডাটা লাগবে, সেগুলো আপনার নাগালে বা জানাশোনা আছে কি না। না থাকলে করণীয় কী—এসব নিয়ে চিন্তাফিকির করুন। সাধারণ জ্ঞান বা বাংলা কোথা থেকে বেশি এসেছে, কোথায় কোথায় আপনার দুর্বলতা—খুঁজে বের করুন। যেসব জায়গায় দুর্বলতা আছে, সেগুলোতে বেশি সময় দিন। এরপর নির্দিষ্ট সময় পর পর দুর্বল টপিকগুলোর ওপর তৈরি প্রশ্ন নিয়ে বাসায় মডেল টেস্ট দিন।
তথ্য-উপাত্তে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে বাজেট, অর্থনীতি নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত, পত্রিকার অর্থনীতি, বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির খবর ও তথ্যগুলো নিয়মিত নোট করে রাখুন। এভাবে কয়েক মাস গেলেই দেখবেন—অনেক ডাটা আপনার সংগ্রহে চলে এসেছে। নোট করার কারণে এবং মাঝেমধ্যে চোখ বোলানোর কারণে সেসব ডাটা আপনার একেবারেই আয়ত্তে চলে এসেছে। পরে পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন এলে উপযুক্ত তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে সাজিয়ে সমৃদ্ধ করে লিখতে পারবেন।
৫। আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট ঠিক আছে তো? সময় ব্যবস্থাপনায় ঘাপলা থাকলে প্রস্তুতির বেলায় যেমন গড়বড় হবে, পরীক্ষার হলেও ঠিক তা-ই। পরীক্ষায় অনেকে কোনো কোনো প্রশ্নের পেছনে বেশি সময় দেন, পরে অন্যগুলোর উত্তর দেওয়ার সময় পান না! প্রিলিতে প্রতিটা প্রশ্নের সমান মার্ক। একটা অঙ্ক ৫ মিনিটে সমাধান করেও আপনি ১ পাবেন, আবার একটা সাধারণ জ্ঞান ৫ সেকেন্ডে উত্তর করেও একই নম্বর পাবেন। আগে ঠিক করুন—কোনটায় আগে সময় দেবেন, কতক্ষণ দেবেন।
রিটেনে যদি গণিতের পেছনেই বেশি সময় দেন, তাহলে বাকিগুলো টাচ করতে পারবেন না। পরীক্ষার আগেই সময় বণ্টন করে নেবেন। ধরুন, গণিতের জন্য ৫০ মিনিট বরাদ্দ রেখেছেন। পরীক্ষায় এ সময়ের মধ্যে না কুলাতে পারলে এ অবস্থায় রেখে ইংরেজি অনুবাদ ও ক্রিয়েটিভ রাইটিং শুরু করে দিন। সেগুলো শেষ করার পর যদি সময় থাকে তখন আবার গণিত ধরুন। গণিতে হয়তো একটায় ১০ নম্বর পাবেন। কিন্তু এই ১০ নম্বরের জন্য অতিরিক্ত সময় দিতে গিয়ে ১৫ নম্বরের একটা অ্যাপ্লিকেশনই ছেড়ে আসতে হতে পারে!
৬। আপনি প্রিলি পাস করতে পারছেন না কিংবা প্রিলিতে টিকেছেন কিন্তু রিটেনে বাদ পড়ছেন বারবার। প্রিলি পাস করতে পারছেন না, এর মানে হতে পারে—আপনি দ্রুত অঙ্ক করতে পারছেন না, ইংরেজি প্রস্তুতিতে ঝামেলা আর বাংলা-সাধারণ জ্ঞানে পড়াশোনা কম। ব্যাংক জবের প্রিলিতে যাচাই করা হয়—প্রার্থীরা কত দ্রুত অঙ্ক করতে পারেন। অন্যান্য বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে বাংলা সাহিত্য ও সাধারণ ব্যাকরণে সময় দেন না অনেকে। অনেক সময় দুটি ম্যাথ না পারলেও বাংলার দুটি প্রশ্ন বেশি পারলে প্রিলিতে টেকা যায়! এর মানে গণিত-ইংরেজিতে কিছুটা দুর্বলতা থাকার পরও বাংলা বা সাধারণ জ্ঞানে ভালো করলে প্রিলি টপকানো সহজ হয়। আবার এমনও হয়, প্রার্থী গণিতে বেশ এক্সপার্ট। তাই মনে মনে ভাবছেন, ‘রিটেনে কে আটকায়?’ বাস্তবতা হলো—গণিত পারলে পরীক্ষায় ভালো করা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে, তবে বাকি রাইটিং পার্টগুলোতে ভালো না করলে চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
(দৈনিক কালের কণ্ঠের সৌজন্যে)