০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৫৪

জীবনের চাকা ঘোরাতে ইজিবাইকের স্টিয়ারিং হাতে জাইদা

জীবনের চাকা ঘোরাতে ইজিবাইকের স্টিয়ারিং হাতে তুলে নিয়েছেন জাইদা খাতুন। ফিরে এসেছেন জীবনের অন্ধকার গলি থেকে। আগে যে মানুষজন তাকে অবজ্ঞার চোখে দেখতেন এখন তাদের কাছে সম্মানের পাত্র তিনি।

যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোলের একমাত্র নারী ইজিবাইকচালক তিনি। তাঁকে সবাই সম্মান করে ডাকেন ‘জাইদা ড্রাইভার’। এ পেশায় এসে এ পর্যন্ত তিনবার বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জয়িতা পুরস্কার পেয়েছেন জাইদা।

এই জাইদা জীবনের তাগিদেই একটা সময় এলাকায় চোরাচালানির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। অন্ধকার পথের সে চোরাগলি ছেড়ে এখন ইজিবাইকের হাতল ধরে দিনভর ছুটে চলেন শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

বেনাপোলের গাজীপুর গ্রামে ভাড়া বাড়িতে একা থাকেন জাইদা। ছোটবেলায় মা ও বাবাকে হারান। বিয়েও হয় অল্প বয়সে। এক ছেলে ও এক মেয়ের মা জাইদা। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় মারা যান প্রথম স্বামী। তখনই চোরাচালানের পথে পা বাড়ান।

জীবন চক্রে ফের এক বিজিবি সদস্যকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করে জাইদা। বিয়ের কিছুদিনের মাথায় স্বামী চাকরি হারালে সর্বস্ব বিক্রি ও ঋণ করে তাঁকে বিদেশ পাঠান। তবে ৯ বছরের সংসারটিও টেকেনি। তখন আবার চোরাচালান, লাগেজ ব্যবসাও করেন জাইদা। বিজিবির হাতে আটকও হয়েছেন।

জাইদা জানালেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে স্থানীয় এক ইজিবাইক শোরুমে কথা বলে কিস্তিতে কেনেন ইজিবাইক। প্রায় তিন বছর ধরে তিনি এটি চালাচ্ছেন। প্রথম নারী ইজিবাইকচালক হওয়ায় দ্রুত পরিচিতি পান। ঋণের টাকা অনেকটাই পরিশোধ করেছেন এই ইজিবাইক চালিয়ে।

জাইদা বেশ দৃঢ়ভাবেই জানালেন, তিনি এখন ভালো আছেন। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করছেন। চোরাচালানের কাজ বাদ দেওয়ায় স্থানীয় লোকজন সাধুবাদ জানিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। জাইদা বললেন, ‘এখন ভালোই আছি। মানুষ সমাদর করে। মানুষের এমন ভালোবাসা ও সহযোগিতা নিয়াই বাঁচতে চাই।’

জাইদার বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পুলক কুমার মণ্ডল বললেন, একসময় চোরাকারবারি হিসেবে কাজ করতেন। তবে সে পথ থেকে ফিরে এসে এখন তিনি ইজিবাইকচালক। এ বিষয়টি অন্যদের কাছে একটি উদাহরণ হতে পারে।

নিজের জীবনের মোড় পাল্টে দেয়া জাইদাও চান, যে নারীরা অন্ধকার পথে পা বাড়িয়েছেন, তাঁরাও ফিরে আসুক আলোর পথে, ভালোর পথে। তাঁর মতে, মানুষ চাইলে পারে না—এমন কিছুই নেই।