অর্ধযুগেও মেলেনি চাকরি, অনশনে প্রতিবন্ধী কণা

এ বছরই শেষ হচ্ছে চাঁদের কণার সরকারি চাকরির বয়সসীমা। তাই একটা সরকারির আক্ষেপে একরকম বাধ্য হয়েই আমরণ অনশনে বসেছেন তিনি। শিশুকাল থেকে চাঁদের কাণা শারীরিক প্রতিবন্ধী। কিন্তু হাতের উপর ভর দিয়ে হেঁটেই ২০১৩ সালে ইডেন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। যোগ্যতা অনুযায়ী একটি সরকারি চাকরির জন্য ছুটে বেরিয়েছেন এ দুয়ার থেকে ও দুয়ার। কিন্তু যেন মিলছেই না তার স্বপ্নের সোনার হরিন।

চাঁদের কণা সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত বিয়াড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের মেয়ে। বুধবার সকালে নিরূপায় হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন তিনি। চাকরি না হওয়া পর্যন্ত তিনি অনশনেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন।

কণার স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা যায়, মাত্র নয় মাস বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে দুই পায়ের কার্যক্ষমতা হারান চাঁদের কণা। তবুও বাবা-মায়ের সচেতনতা আর তার প্রতিবন্ধিতা জয়ের অদম্য প্রচেষ্টায় চলতে থাকে হাতে হেঁটে পড়ালেখা। তিনি যখন অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী তার স্কুলশিক্ষক মা হাসনা হেনা বেগম মারা যান। এর কয়েক বছর পর তার বাবা ব্রেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এবং বাবার অসুস্থতাজনিত কারণে তার জীবনে প্রতিবন্ধিতার সঙ্গে নেমে আসে চরম দরিদ্রতা। অবশেষে পড়ালেখার খরচ জোগাতে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সামান্য বেতনে চাকরি নেন তিনি। শত কষ্টের মাঝেও গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে সফলতার সঙ্গে অর্জন করেন উচ্চতর ডিগ্রি।

চাঁদের কণা জানান, সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তিনি মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। অর্জন করেছেন প্রথম বিভাগ। শুধু তাই নয়, পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলেছেন। ভারোত্তোলন থেকে শুরু করে টিভি-রেডিওতে সংবাদ পাঠ; টিভি প্রোগ্রাম গ্রন্থনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনা; নাটক, গল্প ও কবিতা লেখা; অভিনয় করা ও কবিতা আবৃতি করা; গল্প বলা; ছবি আঁকা এবং কম্পিউটারে সব কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তিনি।

তিনি আরো জানান, রাজশাহী মাদার বক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে তিনি অনার্স পড়েছেন। পঞ্চম তলায় তার ক্লাস হতো। অন্যসব ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজে আসতেন ৯টার দিকে। অথচ তিনি কলেজে যেতেন সকাল ৭টার দিকে। কারণ হাতে ভর দিয়ে পঞ্চম তলায় উঠতে তার দের ঘণ্টার মতো সময় লেগে যেত।

চাঁদের কণা বলেন, স্কুলজীবন থেকে শুরু করে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন পর্যন্ত এমন লক্ষ্য-কোটি বাধা পেরিয়ে প্রতিবন্ধিতাকে জয় করেছি একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য। যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেছি। এ বছরই আমার সরকারি চাকরির বয়স শেষ। তাই বাধ্য হয়ে আমরণ অনশনে বসেছি।

অনশনে বসা চাঁদের কণার হুইলচেয়ার ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন বার্তা লেখা ২০টির মতো প্ল্যাকার্ড। গলায় ঝুলছে, আমি আমার মা প্রধানমন্ত্রীর ভালোবাসা চাই। তার সাথে দেখা করতে চাই।


সর্বশেষ সংবাদ