গ্রুপিং ভুলে এক হচ্ছেন ৩৫ আন্দোলনকারীরা, ঈদের পরই কর্মসূচি
টানা কয়েক বছর ধরে কোটা সংস্কার ও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন সফলতার মুখ দেখলেও এখনো চলছে ‘৩৫ চাই’ আন্দোলন। চলতি বছরে এসেও কয়েক দফা কর্মসূচি পালন ও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটেছে গ্রেফতারের ঘটনাও। যদিও শেষ পর্যন্ত শুধু হতাশার ঝুলিই জুটেছে। জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে নাকচ হয়েছে ৩৫-এর সব চাওয়া-পাওয়া।
আন্দোলনকারীদের উপলব্ধি-দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করলেও তাদের মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধ প্রকট ছিল। আর এ কারণেই আন্দোলনের শক্তি কিছুটা কম ছিল; যেটা দাবি আদায় না হওয়ার অন্যতম কারণ। তবে সেই দ্বন্দ্বের অবসান যাচ্ছে। সব গ্রু মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে বিক্ষোভে নামছেন ৩৫ আন্দোলনকারীরা। দ্বন্দ্ব মেটাতে ইতোমধ্যেই নিজেদের মধ্যে কথা বলেছেন তারা। চেষ্টা করছেন একমত হয়ে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি দেওয়ার। ৩৫ আন্দোলনকারীদের দুটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্রের তথ্য, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব থাকায় পক্ষগুলো আলাদা কর্মসূচি ডাক দেওয়ায় বিভ্রান্ত হন সাধারণ আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীরা। কোন গ্রুপের কর্মসূচিতে যোগ দিলে দাবি আদায় হবে- তা নিয়েও অনেক সময় দ্বিধায় পড়েছেন তারা। শুধু তাই নয়, এক গ্রুপ কর্মসূচি দিলে তাতে অংশগ্রহণ তো দূরের কথা, তা প্রচার পর্যন্ত করেন না অন্যগ্রুপ। ফলে অধিকাংশ কর্মসূচিতেই কাঙ্ক্ষিত উপস্থিতি থাকে না। মূলত এসব কারণেই নতুন করে ভাবছেন সবাই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘সংসদে প্রস্তাবটি পাস না হওয়ায় লাখো চাকরিপ্রার্থী হতাশ হয়েছেন। মূলত এ কারণেই তারা একত্রিত হয়ে সারাদেশে কমিটি করতে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে জেলা পর্যায়ের কমিটি শক্তিশালী করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। জানতে চাইলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সবাই একসাথে বসেছিলাম, আমাদের মধ্যে আর কোন গ্রুপ নেই। এখন সবাই মিলে একটা কমিটি দেওয়ার চেষ্টা করছি। সারাদেশেও কমিটি দেওয়া হবে। বিচ্ছিন্ন আন্দোলন করে আসলে কোনো লাভ নেই। কিছু করতে হলে সবাই মিলেই করতে হবে। সেজন্য বাড়তি লোকবলও জড়ো করা দরকার। ঈদের পরে আমরা কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছি। সেখানে যতবেশি সম্ভব মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে।’
ঈদ পরবর্তী কর্মসূচিতে আন্দোলনে নামছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র কল্যান পরিষদ নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্ম শক্তিশালীকরণের কাজ শুরু করেছে তারা। প্ল্যাটফর্মের সংগঠক ফেরদৌস জিন্নাহ লেলিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বিসিএস ক্যাডার হওয়া সবারই স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে চাইলে ৪১তম বিসিএসর আগে ৩৫-এর জন্য কঠোর আন্দোলনে নামতে হবে।’
আন্দোলনের ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ’র আরেক প্ল্যাটফর্মও। এর নেতা সঞ্জয় দাস ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রকৃত ৩৫ প্রত্যাশীদের সাথে আমাদের কোন বিরোধ ছিল না, নেই, থাকবেও না। কারণ আমরা কেউ নেতা হতে আসিনি। পরিস্থিতির কারণে আমাদের বিভিন্ন জনের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আমাদের এই প্ল্যাটফরমে গণতন্ত্রের চর্চা করা হয়। এখানে সবাইকে মূল্যায়ন করা হয় মেধা, যোগ্যতা, পরিশ্রম ও সততার মাপকাঠিতে।’
তথ্যমতে, গত ২৫ এপ্রিল চাকরি প্রত্যাশীদের বহুল কাঙ্ক্ষিত চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার প্রস্তাব জাতীয় সংসদে ওঠে। তবে তা নাকচ করে দিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, পড়াশোনা শেষ করার পর একজন ছাত্র অন্তত সাত বছর সময় পেয়েছে। এটা অনেক সময়। তাছাড়া এর আগে চাকরির বয়স ২৫ বছর ছিল, সেখান থেকে ২৭ ও পরবর্তীতে ৩০ বছর করা হয়। সে হিসেবে এখন বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই।
এ সময় তিনি প্রস্তাব উত্থাপনকারী সংসদ সদস্যকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানান এবং প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। কিন্তু বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম বাবলু সেটি প্রত্যাহারে রাজি না হলে কণ্ঠভোটের আয়োজন করা হয়। কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটির বিপক্ষে ভোট দেন সংসদ সদস্যরা। মূলত প্রস্তাবটি পাস না হওয়াতেই তীব্র হতাশ হয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। যা নিয়ে তারা শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই ক্ষোভ নয়, নতুন করেও ভাবতে শুরু করেছেন। তার অংশ হিসেবে ঈদ পরবর্তী আন্দোলনে নামছেন তারা।