আজ সংসদে উঠছে ‘৩৫ চাই’ প্রস্তাব: শহীদ মিনারে চাকরিপ্রত্যাশীরা
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার প্রস্তাব জাতীয় সংসদে উঠছে আজ। জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া দিনের কার্যসূচিতে বিষয়টি রাখা হয়েছে। এদিকে এ খবরে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন ৩৫ চাই আন্দোলনকারীরা। তারা সকাল থেকেই রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন।
জাতীয় সংসদের কার্যসূচী অনুযায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে আজ বগুড়া-৭ আসনের এমপি মো. রেজাউল করিম বাবলু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও উত্তর পর্বে ‘৩৫ চাই’ সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি সংসদে উত্থাপন করবেন। তিনি যে সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি আনবেন তা হল- ‘সরকারী চাকুরীতে নিয়োগে আবেদনের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩০ বৎসর থেকে ৩৫ বৎসর উন্নীত করা হোক।’
আরও পড়ুন: শহীদ মিনারে রাত কাটালেন ৩৫ চাই আন্দোলনকারীরা
এর আগে, গত জুনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৯ তম সভায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার সুপারিশ করা হয়। এর আগে কমিটির ২১ তম সভায় ৩২ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘৩৫ চাই’ আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারন ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আজ বৃহস্পতিবার দিনের কর্মসূচিতে আমাদের বহুল প্রত্যাশিত ৩৫ দাবির প্রস্তাবটি সংসদে আনা হবে। এজন্য আমরা সকাল ১০টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান করছি।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি ‘হ্যা ভোটে’র মাধ্যমে গ্রহন করার বিষয়ে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। কারণ সংসদে সাধারণত সরকারদলীয় কোন এমপি কোন বিষয়ে প্রস্তাব আনলে সেটা ‘হ্যা ভোটে’র মাধ্যমে গ্রহন করা হয়।’
আরও পড়ুন: আটককৃতদের না ছাড়লে টিএসসিতেই থাকবে ৩৫ আন্দোলনকারীরা
চাকরিপ্রার্থীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে কোনভাবেই ২২ বছরের আগে শিক্ষাজীবন শেষ হয় না। অথচ দেশে সরকারি চাকরিগুলোয় আবেদনের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর। হিসাব অনুযায়ী, মাত্র ৫ বছরে শিক্ষাজীবন শুরু হলেও শুধু মাধ্যমিক পড়তেই জীবনের ১৫ বছর চলে যায়। আর উচ্চমাধ্যমিক (১৭বছর), স্নাতক (২১বছর) ও স্নাতকোত্তর পড়তে লাগে ২২ বছর।
সেক্ষেত্রে নন-পিএসসি চাকরি ক্ষেত্রে আবেদন শুরুর বয়স ১৮ বছর রাখার আইনটি একেবারেই অকার্যকর। আবার বর্তমানে ক্যাডারের ক্ষেত্রে ২১ বছর বয়সে আবেদনের আইনটিও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে বলে তাদের দাবি।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, সরকারি চাকরিতে আবেদন করার আগেই যদি জীবনের ৪টি বছর চলে যায়; তবে প্রবেশের বয়স কেন ৩৫ হবে না? এ দাবি একেবারেই ‘যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত’। তারা বলছেন, কর্মে যোগদানের অধিকার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার; সুনির্দিষ্ট বয়স দিয়ে তা থামিয়ে দেয়ার অধিকার কারো নেই। তাছাড়া চাকরিতে ৩০ রাখাটা তারুণ্যকে বেঁধে রাখার মত একটা ব্যাপার। এটা অনুচিত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তান আমলে চাকরি শুরুর বয়স ছিল ২৫ বছর। নতুন দেশে সরকারি চাকরি করার জন্যে দক্ষ লোক পাওয়া যাবে না বলে সেটা বাড়িয়ে ২৭ করা হয়েছিল। পরে ১৯৯১ সালে সেটাও তো বাড়িয়ে ৩০ করা হয়েছে। ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে সেটা বাড়িয়ে করা হয় ৩০ বছর। ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবসরের বয়স ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়; যা এর কয়েকদিন পর ২৬ ডিসেম্বর কার্যকর হয়।
মূলত এরপর থেকেই চাকরি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর দাবি ওঠে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেন তারা। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের দাবিতে গত ৭ বছর ধরে আন্দোলন চলছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান কিছুই করা হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে।