প্রিলির আগের সপ্তাহ ও হলের ২ ঘন্টা: আমি যা করেছিলাম

মো. মাসুদুর রহমান
মো. মাসুদুর রহমান  © টিডিসি ফটো

কয়েকদিন পরই অনুষ্ঠিত হবে ৪০তম বিসিএস’র প্রিলিমিনারি ধাপের পরীক্ষা। বিসিএস’র কঠিনতম ধাপ হলো প্রিলিমিনারি পরীক্ষা, যেখানে আবেদনকারীর পরীক্ষার্থীর অধিকাংশই বাদ পড়ে যায়। শেষ মুহূর্তের কিছু প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস প্রার্থীদের জন্য কিছু কি নির্দেশনা দিয়েছেন ৩৭ তম বিসিএস’র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদুর রহমান-


একটা তথ্য দিয়েই শুরু করি, ৩৭তম বিসিএস-এ প্রার্থী ছিল ২,৪৩,৪৭৬ জন; পাশ করেছেন ৮,৫২৩ জন; প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ ছিল সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৬। ৩৮ তম বিসিএস- এ প্রার্থী ছিল ৩,৮৯,৪৬৮ জন (বেড়েছে ১,৪৫,৯৯২); পাশ করেছেন ১৬,২৮৬ জন; প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ ছিল ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭ (ব্যবধান- প্রায় ১ বছর ৩ মাস)।

এর অর্থ হচ্ছে, আপনি যদি সামনের এই প্রিলিমিনারি পরীক্ষাটিতে পাশ করতে পারেন; তাহলে অন্যদের থেকে এক বছর এগিয়ে গেলেন। আর যদি কোন কারনে ফেল করেন; তাহলে আপনাকে পরের পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে হবে অন্তত আরও একটি বছর। এবার আপনিই ঠিক করুন এক বছর আগাবেন না পিছাবেন! যাই হোক শেষ সময়ের প্রস্তুতি এবং প্রিলিমিনারি পরীক্ষার কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলব বলেই আজকের এই লেখা।

১. শেষ সময়ের প্রস্তুতির কিছু দিক

১. ১ : অবশ্যই মডেল টেস্ট দিতে হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটা বড় অংশ ঝরে পড়ে ভুল দাগানোর কারনে। ২০০টা প্রশ্ন অনেক প্রশ্ন, অনেকেই যেটা করে “ভুল না দাগানোর” অভ্যাস আগে থেকে তৈরি করে না; মনে করে থাকেন হলে গিয়েই একবারে ভুল না দাগিয়ে সব ঠিকগুলো দাগিয়ে ফেলবে। কিন্তু এটা একটা বড় অনুশীলনের বিষয়, আর এজন্য আপনাকে “ভুল না দাগানোর” এই অভ্যাসটা এখনই গড়ে তুলতে হবে। আমি যেভাবে এগিয়েছিলাম –

• উত্তর পত্রের ১০০ টার মত ফটোকপি করে নিয়েছিলাম।

• প্রতিটি উত্তর পত্রের উপর তারিখ, সঠিক দাগানোর পরিমাণ (সবুজ কালি দিয়ে) আর ভুল দাগানোর পরিমাণটি (লাল কালি দিয়ে) লিখে রাখতাম।

• প্রতি ৫ থেকে ৭ দিন পরপর আমি উত্তর পত্রগুলো যাচাই করে দেখতাম সঠিক দাগানোর পরিমাণ কতটা বাড়ল, আর ভুল দাগানোর পরিমাণ কতটা কমলো।

এভাবে অভ্যাস তৈরি করার কারণে পরীক্ষার হলে ভুল দাগানোর পরিমাণটা অনেক কমিয়ে আনতে পেরেছিলাম।

পরীক্ষার ঠিক আগে আগে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, প্রথম আলোসহ বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় কিছু মডেল টেস্ট আসবে, সেগুলোকে দেয়ার চেষ্টা করবেন। আর এখন যেহেতু নতুন বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করবার আর সুযোগ নেই সেক্ষেত্রে প্রতিদিনের পত্রিকা পড়ার সময়টা এখন অন্য প্রস্তুতির দিকে দিলে ভালো হবে।

১. ২ : গাইড বইগুলো বিস্তারিতভাবে এখন না পড়ে মডেল টেস্ট দেওয়ার সময় যে বিষয়গুলোতে আপনার সমস্যা হচ্ছে, নম্বর কম আসছে, সে জায়গাগুলো বারবার দেখে নিন।

১. ৩ : “প্রফেসর’স-এর বিশেষ সংখ্যা” বইটি শেষ সময়ের প্রস্তুতির জন্য খুবই ভালো একটি বই, পারলে এটা কয়েকবার শেষ করুন এবং বিশেষ বিশেষ অংশগুলো দাগিয়ে রাখুন যেন পরীক্ষার আগের রাতে (এবং সকালে) আপনি সেগুলো দেখে যেতে পারেন।

১. ৪ : ম্যাথের কিছু প্রশ্ন সবসময়ই আসে, যেমন বীজগণিতের সূত্রের উপর ভিত্তি করে কিছু প্রশ্ন আসে, জ্যামিতির কোণের উপর কিছু প্রশ্ন থাকে, সংখ্যাতত্ত্বের উপরও বেশ কিছু প্রশ্ন থাকে, এই বিষয়গুলোর উপর শেষ সময়ের দ্রুত প্রস্তুতি নেবার জন্য “Math Without Calculator” এই বইটা দেখতে পারেন।

২. পরীক্ষার ব্যাপারে কিছু প্রস্তুতি

২. ১ : প্রবেশ পত্রটি প্রিন্ট করে রাখুন, এক্ষেত্রে আমি সবসময় যেটা করতাম ২/৩টা কপি সাথে রাখতাম, এতে সুবিধা হল– কোন কারণে এক কপি নষ্ট হলে কিংবা ছিঁড়ে গেলে অন্য কপিটা আপনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ থেকে বাঁচাবে। আর একটা সুবিধা আমি পেয়েছিলাম ম্যাথের রাফ করার জন্য পিছনের সাদা অংশটা ব্যাবহার করেছিলাম (তবে এক্ষেত্রে সতর্কতার জন্য অবশ্যই পরিদর্শকের অনুমতি নিয়ে নিতে হবে)।

২. ২ : ম্যাথে যদি খুব ভালো প্রস্তুতি থাকে; তাহলে একদম শুরুতে উত্তর দিবেন, অন্যথায় আমার মত শেষেও উত্তর দিতে পারেন, কারণ সেক্ষেত্রে মাথা গরম হয়ে গিয়ে পারা প্রশ্ন ভুল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

২.৩ : নৈতিকতার প্রশ্নগুলো এমন হয় যে, এর প্রতিটা অপশনকেই সঠিক উত্তর বলে মনে হয়। তাই এক্ষেত্রে খুব বেশি সতর্কতার সাথে শুধু মাত্র ১০০% সঠিক প্রশ্নটিই দাগানো উচিত এবং ১০-এ ৫ পেলেও এক্ষেত্রে এটা খুব ভালো নাম্বার।

২. ৪ : কিছু প্রশ্ন বাদ দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে, পুনরায় দ্রুত সেই প্রশ্নটা খুঁজে পাবার জন্য একটা ছোট দাগ দিয়ে রাখুন প্রশ্নে।

২. ৫ : পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময়ের কমপক্ষে ১৫ মিনিট আগে হলে যাবেন এবং আপনার পাশের (সামনে, পিছনে, ডান ও বামের) মানুষগুলোর সাথে অবশ্যই একটা ভালো সম্পর্ক রাখবেন। বিশ্বাস করুন প্রিলি, রিটেন, ভাইভা এই সবগুলো ধাপ পেরিয়ে আপনার পাশের কোন একজনকে যদি আপনি আপনার সাথে একসাথে দেখতে পারেন। তাহলে সেই মানুষটার সাথে বাকি সবার থেকে আলাদা একটা আন্তরিকতা কাজ করবে সারাজীবন।

আমি সবসময়ই এটা বিশ্বাস করি যে, মানুষের চেষ্টা যেখানে গিয়ে শেষ হয়, সৃষ্টিকর্তার সাহায্য সেখান থেকে শুরু হয়। তাই শেষ এই সময়টুকুতে অপ্রয়োজনীয় ইন্টারনেটের ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখুন এবং নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেই দেখুন না একবার। আর একটা ব্যাপার হলো- কারো বলে দেয়া নিয়মগুলো যে লিখিত কোন সংবিধান তা কিন্তু নয়, আপনি নিজ থেকে যে পথটাকে অনুসরণ করে প্রস্তুতি নেবেন, ভবিষ্যতে হয়ত সেই পথটাই অন্য অনেককে অনুপ্রাণিত করবে। শুভকামনা রইল সবার জন্য

 

‘৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ৩ মে শুক্রবার একযোগে দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হবে। এই বিসিএসের মাধ্যমে মোট ১ হাজার ৯০৩ জন ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। ক্যাডার অনুসারে প্রশাসনে ২০০, পুলিশে ৭২, পররাষ্ট্রে ২৫, করে ২৪, শুল্ক আবগারিতে ৩২ ও শিক্ষা ক্যাডারে প্রায় ৮০০ জনকে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’

পুলিশ ক্যাডারের পরামর্শ পড়ুন:‘কনফিউশন উত্তর’ না দাগানোই প্রিলির প্রধান কৌশল!


সর্বশেষ সংবাদ