শহীদ মিনারে রাত কাটালেন ৩৫ চাই আন্দোলনকারীরা
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাত কাটিয়েছেন ১১ আন্দোলনকারী। এর আগে আটককৃতদের মুক্তি দাবিতে শনিবার রাত ১১টা পর্যন্ত রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান করে তারা। কিন্তু সেখান থেকে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের চাপে শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান নিতে বাধ্য হয় তারা। তাদের ভাষ্য, শহীদদের এই স্মৃতিচিহ্ন থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
আন্দোলনকারীরা জানান, গতকালের সমাবেশস্থল থেকে থেকে ৭ জনকে আটক করেছিল পুলিশ। মূলত সেই প্রতিবাদেই টিএসসিতে অবস্থান করছিলেন তারা। কিন্তু তাদের একজন হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ছেড়ে দিলেও বাকিদের কাউকেই ছাড়েনি শাহবাগ থানা। যদিও সে সময় শাহবাগ থানার ওসি আবুল হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেছিলেন, আমরা তাদের আটক করিনি, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।
রবিবার সকালে আন্দোলনকারী ইউসুফ জামিল সোহেল জানান, তারা নিদ্রাহীন রাত কাটিয়েছেন। আজও সেখানে অবস্থান করবেন। সকালের কাছে আহ্ববান, তারা যেন সকাল ৯টার মধ্যে শহীদ মিনারে চলে আসে। এরপর সেখান থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। আগামী ২৪ এপ্রিল সংসদ অধিবেশন শুরু না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চালানোর কথাও জানান তারা।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের দাবিতে গত ৭ বছর ধরে আন্দোলন চলছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান কিছুই করা হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়স বৃদ্ধির বিষয়টির প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। যেহেতু চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং সরকারের নীতি নির্ধারণী বিষয়; তাই উচ্চ পর্যায়ের সম্মতি প্রয়োজন। তবে বিষয়টি নিয়ে যেকোন সময় সিদ্ধান্ত হতে পারে। জানা যায়, গত জুনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৯ তম সভায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার সুপারিশ করা হয়। এর আগে কমিটির ২১ তম সভায় ৩২ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছিল। তবে সরকার ইচ্ছা করলে সেটা আরও বাড়াতে পারে। কারণ, এটা নীতিনির্ধারণী বিষয়।
হিসাবে কষে দেখা গেছে, বাংলাদেশে কোনভাবেই ২২ বছরের আগে শিক্ষাজীবন শেষ হয় না। অথচ দেশে সরকারি চাকরিগুলোয় আবেদনের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর। হিসাব অনুযায়ী, মাত্র ৫ বছরে শিক্ষাজীবন শুরু হলেও শুধু মাধ্যমিক পড়তেই জীবনের ১৫টি বছর চলে যায়। আর উচ্চমাধ্যমিক (১৭বছর), স্নাতক (২১বছর) ও স্নাতকোত্তর পড়তে লাগে ২২ বছর। সেক্ষেত্রে নন-পিএসসি চাকরি ক্ষেত্রে আবেদন শুরুর বয়স ১৮ বছর রাখার আইনটি একেবারেই অকার্যকর। আবার বর্তমানে ক্যাডারের ক্ষেত্রে ২১ বছর বয়সে আবেদনের আইনটিও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, সরকারি চাকরিতে আবেদন করার আগেই যদি জীবনের ৪টি বছর চলে যায়; তবে প্রবেশের বয়স কেন ৩৫ হবে না? এ দাবি একেবারেই ‘যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত’। তারা বলছেন, কর্মে যোগদানের অধিকার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার; সুনির্দিষ্ট বয়স দিয়ে তা থামিয়ে দেয়ার অধিকার কারো নেই। তাছাড়া চাকরিতে ৩০ রাখাটা তারুণ্যকে বেঁধে রাখার মত একটা ব্যাপার। এটা অনুচিত।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যমতে, পাকিস্তান আমলে চাকরি শুরুর বয়স ছিল ২৫ বছর। নতুন দেশে সরকারি চাকরি করার জন্যে দক্ষ লোক পাওয়া যাবে না বলে সেটা বাড়িয়ে ২৭ করা হয়েছিল। পরে ১৯৯১ সালে সেটাও তো বাড়িয়ে ৩০ করা হয়েছে। ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে সেটা বাড়িয়ে করা হয় ৩০ বছর। ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবসরের বয়স ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়; যা এর কয়েকদিন পর ২৬ ডিসেম্বর কার্যকর হয়। মূলত এরপর থেকেই চাকরি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর দাবি ওঠে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেন তারা।
জানা গেছে, বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫। অধিকাংশ দেশেই এই বয়স ৪০ বা তারও বেশি। অথচ বাংলাদেশে তার চেয়েও কমিয়ে ৩০ বছরে রাখা হয়েছে। দেশের গড় আয়ু, মাথাপিছিু আয়সহ সার্বিক সূচক বাড়লেও বাড়ানো হয়নি এ বয়সসীমা। ছাত্র পরিষদের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৫৯ বছর। পার্শবর্তী দেশ ভারতে (পশ্চিমবঙ্গ) বয়সসীমা ৪০ বছর। উন্নত দেশ ফ্রান্সেও চাকরির এ বয়স ৪০ বছর। এছাড়া চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৫৫ বছর রাখা হয়েছে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে। এ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন, অস্ট্রেলিয়া, মালায়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাতার, ওমান, কুয়েতসহ বেশ কয়েকটি দেশ। একমাত্র দেশ সুইডেন চাকরির বয়স ৪৭ বছর রেখেছে। চাকরির বয়স ৪৫ বছর রেখেছে যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কা। এছাড়া চাকরির সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর রেখেছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। যার মধ্যে কাতার, তাইওয়ান, এঙ্গোলা, ইতালী ও নরওয়ে উল্লেখযোগ্য।
এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন, স্থায়ী কমিটির সুপারিশ যৌক্তিক। আমরা সেটা যাচাই-বাছাই করছি। তবে সিদ্ধান্ত নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে আসবে।