বিসিএস প্রিলি পাসে শুধু পড়া নয়, কৌশলও লাগে
আর কিছুদিন পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪০তম বিসিএস’র প্রিলিমিনারি ধাপের পরীক্ষা। বিসিএস’র সবচেয়ে কঠিনতম ধাপ হলো, প্রিলিমিনারী পরীক্ষা যেখানে আবেদনকারী পরিক্ষার্থীর প্রায় ৯৫-৯৬ শতাংশ পরীক্ষার্থীই বাদ পড়ে যায়।
তাই প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে শুধু দরজা জানালা বন্ধ করে পড়াশোনা করলেই হবেনা, হতে হবে কৌশলী ও পরিশ্রমী। এতো এতো পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রিলি পরীক্ষায় টিকতে হলে থাকতে হবে কনফিডেন্স, পেতে হবে কাঙ্ক্ষিত কাট মার্কস। আসন্ন ৪০তম বিসিএস প্রিলি পরিক্ষার জন্য যা গুরুত্বপূর্ণঃ
#বাংলাঃ ব্যকরণ অংশে ধবনি ও বর্ণ, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, বানান প্রভৃতি অধ্যায় থেকে প্রতি বিসিএস’র প্রশ্ন পাওয়া যায়ই; সাহিত্য অংশে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের সাহিত্যসমূহ এবং বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের জন্য পিএসসি’র পুরাতন লিখিত সিলেবাসে বর্ণিত ১১ জন সাহিত্যিকে বেশি বেশি জোর দিন।
#ইংরেজিঃ ইংরেজী ব্যকরণ এ Parts of Speech, Clause, Synonym, Spelling অধ্যায়সমূহ জোর দিন। ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করবেন না। সাহিত্য অংশে মোটামুটি পড়লেই ৮/১০ পাবেন, আর সামনের সব দিন টানা শুধু এই ইংরেজি সাহিত্য পড়লেও এই পার্টে ১৫ তে ১৫ পাবেন না। তাই কৌশলী হোন, কিছু নাম্বার ছেড়ে দেয়ার মানসিকতা রাখুন।
#গণিতিক_যুক্তি_ও_মানসিক_দক্ষতাঃ গাণিতিক যুক্তি পার্টে ১০০ ভাগ মার্কস তোলার চেষ্টা করুন, এই পার্ট আপনাকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই পার্টের জন্য লগারিদম, বিন্যাস-সমাবেশ, বীজগাণিতিক সূত্রাবলি ভাল করে দেখুন। মানসিক দক্ষতার জন্য ইংরেজি সাহিত্যের মতো থিওরি অনুসরণ করুন। মোটামুটি পড়লেই ১০-১২ পাবেন, সারাদিন পড়লেও ১৫ পাবেন না।
#সাধারণ-বিজ্ঞান_এবং_কম্পিউটার_ ও_তথ্য-প্রযুক্তিঃ প্রশ্নের এই পার্টে বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে প্রচুর কমন পাবেন। সো এই সাবজেক্ট দুটোতেই প্রিভিয়াস প্রশ্ন কয়েকবার করে পড়ুন। সাধারণ বিজ্ঞান থেকে ধাতব ও অধাতব পদার্থ, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস, বায়ুমন্ডল টপিকগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি’র জন্য কম্পিউটারের অঙ্গসংগঠন, ই-কমার্স, বুলিয়ান এলজ্যাবরা, লজিক গেইট প্রভৃতি বার বার চোখ বুলিয়ে নিন।
#বাংলাদেশ_ও_আন্তর্জাতিকঃ ৩৪তম বিসিএস পর্যন্ত এই দুই সাবজেক্টে বিগত বছর থেকে প্রচুর রিপিট আসলেও ৩৫ বিসিএস’র পর থেকে এই দুই সাবজেক্ট এ কারেন্ট ঘটনা এবং আনকমন প্রশ্ন বেশি আসে। তবুও বই থেকে ভালই কমন পাবেন। যে কোন প্রকাশনীর বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বই থেকে পড়ুন, যা কমন পাবেন, তাতেই সন্তুষ্ট থাকুন, বাকীটা স্কিপ করুন। ভয় নেই, অন্যকেউও সেগুলো পারবে না, অনুমানে দিয়ে নিগেটিভ মার্কিংয়ে পড়বে অনেকেই।
তবে বাংলাদেশ পার্টের জন্য বাংলাদেশের অভ্যুদয়, বাংলাদেশের অর্থনিতি, সংবিধান, জনসংখ্যা ও জনগোষ্ঠী অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। আর আন্তর্জাতিকের জন্য জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্মেলন, পরিবেশগত ইস্যু থেকে সর্বাধিক প্রশ্ন কমন পাওয়া যায়।
#ভূগোল_ও_নৈতিকতাঃ ভূগোল পার্টে যা আসে, বাংলাদেশ-আন্তর্জাতিক থেকেই কমন পাবেন ইনশাআল্লাহ্। আর নৈতিকতা পার্টটা দেয়াই হয়েছে, আপনাকে কনফিউজড করার জন্য।কোনটা যে সঠিক উত্তর হবে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আর পিএসসিই জানে। তাই এই পার্টটা সাবধানে হ্যান্ডেল করতে হবে।
প্রিলি প্রস্তুতির জন্য যে সিরিজের বইগুলো পড়ছেন, সেগুলোই পড়তে থাকুন। তবে পরীক্ষার আগের সাতদিনের জন্য ডাইজেস্ট এবং কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিশেষ সংখ্যা বেশি বেশি পড়ুন, অনেক উপকার পাওয়া যাবে। আগামী দিনগুলোতে পড়বেন যতটুকু, পরীক্ষা দিবেন তার চেয়েও বেশি।
প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় অর্ধেক প্রশ্ন কমন পাবেন, বাকী অর্ধেক প্রশ্ন আপনাকে উত্তর করতে হবে সিক্স সেন্স এপ্লাই করে। তাই যত বেশি মডেল টেস্ট দিবেন, ততো বেশি আপনার সিক্স সেন্স ডেভেলপমেন্ট হবে।
শেষকথা হলো, বিসিএস ক্যাডার হতে হলে অলরাউন্ডার হতে হয় সত্য, কিন্তু প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় টিকতে হলে, অলরাউন্ডার না হলেও চলে, কেউ যদি ইংরেজী আর গণিতে (৩৫+৩০=৬৫) জিরোও পায়, তবুও ২০০-৬৫=১৩৫ পেয়ে যে প্রিলি টিকতে পারবে। সো, আপনার উইকনেস কে ভয় না পেয়ে, স্ট্রেংথকে কাজে লাগান, সফল হোন। সবার জন্য শুভ কামনা।
আরো পড়ুন: মঞ্চ নাট্য অভিনেতা যখন সফল বিসিএস ক্যাডার
লেখক: রবিউল আলম লুইপা
৩৫ তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)