চাকরিতে প্রবেশের বয়স কি ৩৫ হচ্ছে?
- এম টি রহমান
- প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০১৯, ১২:২৫ PM , আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯, ০১:১২ PM
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে বাংলাদেশ সাধারন ছাত্র পরিষদ (বাসাছাপ)। এতে সমর্থন জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
সমর্থন রয়েছে ডাকসুর সহ সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরেরও। এতে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। শিগগিরই তাদের দাবি পূরণ হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
এরই প্রেক্ষিতে এবং চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে সরকারের কাছে আরো জোরালোভাবে দাবি জানানোর লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে বাসাছাপ। সে অনুযায়ী আগামি ১২ এপ্রিল থেকে ‘৩৫ চাই’ দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে টানা তিন দিনব্যাপি বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
এতে ডাকসুর সহ সভাপতি নুরুল হক নুর ও জিএস গোলাম রব্বানিসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ থাকতে পারেন বলে জানিয়েছেন তারা। এ কর্মসুচি সফল করতে ব্যাপক প্রচারণাও শুরু করেছেন আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীরা।
রবিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড আইডিতে ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ এ উন্নীত করার দাবি আমার কাছে অত্যন্ত যৌক্তিক মনে হয়। আমি নৈতিকভাবে এই দাবিকে সমর্থন করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রত্যাশা রাখি, লাখো বেকার ভাইবোনদের প্রাণের চাওয়াটি সরকার অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যদি চাকরিতে ৫৯ বছর বা অবসরের আগের দিন পর্যন্ত রাখতে পারে। তাহলে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কেন চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করতে পারবে না?’
গোলাম রব্বানীর এ স্ট্যাটাস দেওয়ার পর চাকরিতে প্রবেশের বয়স যেকোন সময় ৩৫ করার ঘোষণা আসতে পারে অনেকে মনে করছেন। অতীতে এ ধরণের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব থেকে এমন সমর্থন আসলে তার বাস্তবায়ন হওয়ার নজির রয়েছে। এবারও তেমনটি হতে যাচ্ছে বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাসাছাপ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এটা অবশ্যই অত্যন্ত ভালো একটি ব্যাপার। এবার দাবি আদায় হওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। তবে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসলেও এখনো এ দাবি বাস্তবায়ন না হওয়াটা হতাশাজনক।’
তিনি বলেন, ‘আগামী ১২ তারিখ আমরা বড় আকারে কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে ডাকসুর ভিপি ও জিএস’র সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা নৈতিকভাবে আমাদেরকে সমর্থন জানিয়েছেন। এছাড়া আমরা সম্মিলিতভাবে আন্দোলন করলে সাথে থাকার কথাও জানিয়েছেন তারা।’
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে চলমান আন্দোলনে সমর্থনের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা ব্যাপারটি নিয়ে অবগত। তবে এ আন্দোলনে সমর্থন জানানোর ব্যাপারে এখনো আনুষ্ঠানিক কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। শিগগিরই বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ কোন সিদ্ধান্ত হলে তা জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান নুরুল হক।
আন্দোলন চালানোর পাশাপাশি এ নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন বাসাছাপের নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার জন্যও চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।
সর্বশেষ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা করে সংগঠনটি। তবে সেদিন পুলিশের বাঁধার কারণে সে কর্মসূচি সফল হয়নি। ওইদিন বাসাছাপ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেনসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
এর আগে গত ১১ মার্চ চাকরিপ্রত্যাশীদের দীর্ঘদিনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি জানান। এ ব্যাপারটি বিবেচনা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ করা হতে পারে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে সেটা হলে না মানার সিদ্ধান্তের কথা আগেই জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এজন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার যৌক্তিকতা জনপ্রাশসন প্রতিমন্ত্রীর কাছেও তুলে ধরেছেন তারা।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, সংসদীয় কমিটি পাঁচবার চাকরির বয়স ৩৫ করার বিষয়টি সমর্থন করে সুপারিশ করেছে। তারপরও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে এ ব্যাপারে জানানো হলে সেসময় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন বলে চাকরিপ্রার্থীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি।