কোটার জন্য আন্দোলন দেখে অবাক হতে হয়: জাফর ইকবাল
বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে তীব্র আনন্দ ছিল, তাতে চাকরি বা কাজ করার মতো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আমরা মাথা ঘামাইনি। কিন্তু এখন দেখি সরকারি চাকরিতে কোটার জন্য তরুণ ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে, আমি অবাক না হয়ে পারি না।
সোমবার ( ২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) পঞ্চম সমাবর্তনে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
জাফর ইকবাল বলেন, ‘খুব ভালো লাগতো যদি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সমাবর্তন তোমাদের মতো পালন করতে পারতাম। আমাদের কোনও সমাবর্তন হয়নি। সমাবর্তনে কত আনন্দ হয়, আমি তা জানি না। গাউন পরে বন্ধুর সঙ্গে ছবি তুলতে কেমন লাগে কিংবা সমাবর্তন বক্তা হিসেবে কেমন লাগে সেটাও জানি না। কাজেই তোমাদের দেখে যেমন আনন্দ অনুভব করছি, একইসঙ্গে একটুখানি হলেও হিংসা অনুভব করছি। ইউল্যাব কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই, এখানে তোমাদের সামনে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।’
বিশিষ্ট এই কথা সাহিত্যিক বলেন, “একটা সময় জীবনটা বেশ কঠিন ছিল। তখন স্বপ্ন দেখার কিছু ছিল না। আজ থেকে প্রায় অর্ধশতাব্দী বছর আগে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম, তখন আমার শিক্ষকরা বলেছিলেন, ‘বাবারা তোমরা পড়তে এসেছ খুব ভালো কথা, কিন্তু জেনে রাখো এখান থেকে পাশ করে তোমার কিন্তু কোনও চাকরি থাকবে না। দেশে তোমাদের জন্য কোনও চাকরি নেই, কাজ নেই।’ সেটি তখন ছিল সদ্য স্বাধীন হওয়া যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ। যতই যুদ্ধ বিধ্বস্ত হোক না কেন সেটি ছিল স্বাধীন দেশ। সেদেশে যখন ইচ্ছা আমি মাথা উঁচু করে হাঁটতে পারবো, পাকিস্তানি মিলিটারি আমাকে গুলি করে হত্যা করতে পারবে না। রাজাকার আলবদর আমাদের ধরে নিয়ে যাবে না। সেই আনন্দটি আমাদের কাছে এতো তীব্র ছিল যে, চাকরি বা কাজের মতো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আমরা একবারও মাথা ঘামাইনি। কাজেই এখন আমি যখন দেখি সরকারি চাকরিতে কোটার জন্য তরুণ ছাত্র ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে, অবাক না হয়ে পারি না।”
সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান। সমাবর্তনে আরও বক্তব্য রাখেন ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. কাজী আনিস আহমেদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে ইউল্যাবের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এইচ এম জহিরুল হক স্বাগত বক্তব্য রাখেন।