উদ্দেশ্য সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ

লাগাতার কর্মসূচিতে যাচ্ছে ‘৩৫ চাই’ আন্দোলনকারীরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রার্থীরা
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রার্থীরা  © ফাইল ছবি

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে চলতি মাস থেকেই নতুন করে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন শুরু করতে যাচ্ছেন তারা। কোটা সংস্কারসহ কয়েকটি আন্দোলন অনেকটা সফল হওয়ায় তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের (বাসাছাপ) ব্যানারে তারা দ্রুত সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইছেন। এজন্য সোমবার রাতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর সাথে দেখা করে তাদের দাবির বিষয়েও কথা বলেছেন।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোঃ ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ‘জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সাথে ন্যাম ভবনে দেখা করে দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেছেন, তরুণরা কিছু চাইলে তা অবশ্যই দেওয়া হবে। তবে এজন্য সবার জোরালো সমর্থন প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তিনি।’

ইমতিয়াজ বলেন, তাদের দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। এটি দ্রুতই সমাধানের দিকে যাচ্ছে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। প্রতিমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এম এ আলিসহ ২০-২৫জন উপস্থিত ছিলেন বলেও তিনি জানান।

আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচী পালন করার ঘোষণা আগেই দিয়েছেন চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীরা। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমান সংসদ অধিবেশন চলাকালেই তাদের দাবির বিষয়ে যাতে একটা সমাধান আসে সে বিষয়ে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ২৩ ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সারাদেশ থেকেই চাকরিপ্রার্থীরা অংশ নেবেন। এছাড়া মার্চের মধ্যেই একটি মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা করছেন তারা।

আন্দোলন সফল করতে ইতোমধ্যে সমমনা বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করেছেন ৩৫ চাই আন্দোলনকারীরা। এরমধ্যে ছাত্রলীগ ও যুবলীগও রয়েছে। তাদেরকে ২৩ ফেব্রুয়ারির আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীরা জানিয়েছেন। যদিও তাদের পক্ষ থেকে এখনো সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি মেলেনি।

বাসাছাপ সভাপতি মোঃ ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, চলমান আন্দোলনের পাশাপাশি তাদের দাবির বিষয়গুলো যাতে জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে উত্থাপিত হয়, সে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এজন্য সংসদ সদস্য হাজী সেলিম, রুস্তম আলী ফরাজী কিংবা শামীম ওসমানের সাথে দেখা করার চেষ্টা করা চলছে।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার দাবিতে চলমান আন্দোলনের বিষয়ে যৌক্তিক সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো বর্তমান সরকার। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। এজন্য চলতি সংসদ অধিবেশনকে লক্ষ্য করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং দাবি মেনে নেওয়ার আহবান জানাতে কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ করা হতে পারে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। তবে সেটা হলে না মানার সিদ্ধান্তে অনড় ‘৩৫ চাই’ আন্দোলনকারীরা। ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ করা হলে তা মানা সম্ভব নয়। এ সংক্রান্ত যে খবর প্রকাশিত হচ্ছে সেগুলোর তেমন কােন ভিত্তি নেই। আর তা হলে আন্দোলনকারীরা কোন সুফল পাবে না। এজন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার যৌক্তিকতা জনপ্রাশসন প্রতিমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, সংসদীয় কমিটি পাঁচবার চাকরির বয়স ৩৫ করার বিষয়টি সমর্থন করে সুপারিশ করেছে। তারপরও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। যে কারণে কয়েকমাস বিরতি দিয়ে ফেব্রুয়ারিতেই নতুন কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছেন তারা। এছাড়া দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এ বিষয়ে সংগঠনটির ফেসবুক গ্রুপে এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘গতকাল (সোমবার) ন্যাম ভবনে রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন স্যারকে ৩৫ এর দাবির ব্যাপারে অকাট্য যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন এবং এও বলেছেন যে, তোমরা মাঠ পর্যায়ে জোরালো দাবি তোলো। তাই ২৩ তারিখে শাহবাগের কর্মসূচি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

এদিকে ৩৫ চাই আন্দোলনকারীদের নামে একাধিক ফেসবুক গ্রুপ থাকায় তা নিয়ে বিভ্রান্তিও তৈরি হচ্ছে। এ নিয়ে অনেকে তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। জানতে চাইলে ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, অনেকে ফেসবুক গ্রুপ খুলে নিজেদের প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে আমরা ‘৩৫ই হোক চাকরিতে প্রবেশের বয়স। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ (কেন্দ্রীয় কমিটি)’ নামে একটি গ্রুপের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এনিয়ে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ