সরকারি চাকরিতে ৫ শতাংশ আদিবাসী কোটা পুনর্বহালের দাবি
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে আগের মতো ৫ শতাংশ আদিবাসী কোটা পুনর্বহালের দাবি উঠেছে। আজ রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানায় আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তারা কোটা সংস্কার চান, তবে তা যৌক্তিক পর্যায়ের হতে হবে। আদিবাসী কোটা ৫ শতাংশ বহাল রেখে কোটা সংস্কার করতে হবে। ২০১৮ সালের আগে ৫ শতাংশ কোটা থাকাকালীন আদিবাসীরা যে হারে নিয়োগ পেতো তা এখন অনেক কমেছে। এই দাবি আদায়ে আগামী মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় রাজু ভাস্কর্য প্রাঙ্গণে মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক অলিক মৃ বলেন, বৈষম্য বিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলন উল্টো বৈষম্য তৈরি করছে। আমরা আদিবাসীরা জন্মের পর নিজেদের মাতৃভাষা শেখার পর- স্কুলে ওঠার পর বাংলা ভাষা শিখতে হয়। সহপাঠীদের সাথে কথা বলার জন্য আমাদের বাংলা ভাষা রপ্ত করতে হয়।
“তাছাড়া আমাদের জীবনমান ও সাধারণ জনগণের জীবনমান সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা জন্মের পর থেকেই প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করে বড় হতে হয়। তাই আমি মনে করি, আমাদের ৫ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ যৌক্তিক এবং তার বাস্তবায়ন দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেখতে চাই।”
এসময় তিনি লিখিত বক্তব্যে তিনটি দাবি তুলে ধরেন- প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৫ শতাংশ কোটা পুনর্বহাল করতে হবে; সেই ৫ শতাংশ কোটা যাতে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হয়, সেজন্য আদিবাসীদের মধ্যে অনগ্রসর ও অধিকতর অনগ্রসর জাতি চিহ্নিত করতে হবে। অধিকতর অনগ্রসর জাতিকে এ সুবিধার আওতায় আনতে উদ্যোগ নিতে হবে; আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে শিক্ষা অবকাঠামো নির্মাণ ও শিক্ষক সংকট দূর করতে হবে।
জানা যায়, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫৬ শতাংশ পদে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক ১০ শতাংশ, আদিবাসীদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা ছিল।
ওই বছর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারীরা। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাদ দেওয়া ছিল তাদের মূল দাবি।
শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব কোটা বাতিলের অনুশাসন দেন। পরে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে এখনো ৫৬ শতাংশ কোটা বহাল আছে।
এখন কোটা সংস্কারের দাবিতে যারা আন্দোলন করছেন, তারা অনগ্রসর গোষ্ঠীর (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী) জন্য সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রেখে সব ধরনের কোটা বাতিলের দাবি তুলেছেন।
এই দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য নিপুন ত্রিপুরা বলেন, যেখানে ৫ শতাংশ কোটা আমাদেরই দাবি, সেখানে সর্বমোট ৫ শতাংশ কোটার দাবি অযৌক্তিক। সেক্ষেত্রে আমরা আদিবাসীরা ১ শতাংশও ঠিকঠাক পাব কি না সন্দেহ।
“কোটা বাতিলের পর থেকেই আমরা পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছি, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। চাকরির সেক্টরগুলোতে আগের চেয়ে এখন নিয়োগপ্রাপ্ত আদিবাসীদের সংখ্যা অনেক কমেছে। আমরা আমাদের প্রাপ্য কোটার পুনর্বহাল চাই।”
আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য সতেজ চাকমা বলেন, যৌক্তিক কোটা কখনও বৈষম্য তৈরি করে না, বরং সাম্যতা বজায় রাখে। দেশের ১৮ কোটি মানুষের জীবনমান একই না। কেউ জীবনমানে সুবিধা পাবে, কেউ পাবে চাকরিতে, এটাই স্বাভাবিক। আজ আমাদের অমেধাবী বলা হচ্ছে, যা একদম অনুচিত।
“আদিবাসীরা দেশের সকল পর্যায়ে নিজেদের মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। কোটা বাতিলের পর থেকে আমরা আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী পুনরায় পিছিয়ে পড়ছি, যা খুবই দুঃখজনক। আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে, দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিন।”