সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটায় কার কত হার
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে কয়েকদিন ধরে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সড়কে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। আজও বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নির্বাহী আদেশে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি চালু করা হয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। তবে ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক কোটা-বিরোধী আন্দোলন হয়।
বিক্ষোভের মুখে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকার পরিপত্র জারি করে। সেই পরিপত্র গত ৫ জুন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট বিভাগ। হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর বুধবার (১০ জুলাই) চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এ সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে সরকারের দেওয়া পরিপত্র বহাল থাকবে। পাশাপাশি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে ২০১৮ সালের অক্টোবরে ৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অবশ্য তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে কোটা বহাল ছিল এবং এখনো আছে।
সরকারি তথ্যানুসারে, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ২০ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হতো। বাকি ৮০ শতাংশ পদে কোটায় নিয়োগ হতো। ১৯৭৬ সালে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ৪০ শতাংশে বাড়ানো হয়। ১৯৮৫ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করা হয়। বাকি ৫৫ শতাংশ অগ্রাধিকার কোটায় নিয়োগ দেয়া হয়।
এই অগ্রাধিকার কোটার মধ্যে রয়েছে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা ও ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা। পরে ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের নিয়ম চালু করে মোট কোটা দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশ। শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল। পরে এ কোটায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তারপর নাতি-নাতনি যুক্ত করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোটার বিপুল পদ শূন্য থাকত। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়, কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে তা মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ ৭জন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। রিট আবেদনকারী পক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন আপিল বিভাগ নট টুডে (৪ জুলাই নয়) বলে আদেশ দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী গতকাল মঙ্গলবার আবেদন করেন।
আরও পড়ুন: সরকারি চাকরিতে কোটা কীভাবে এলো
কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষে করা আবেদন শুনানির জন্য বুধবার (১০ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় সময় নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ। পরে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেন আপিল বিভাগ। ওই রায়ের পর আইনজীবীদের ভাষ্য, সব কোটা, নাকি শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরছে, তা হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে বলা যাবে।