কোটা সম্পূর্ণ বাতিল কিংবা বহাল অযৌক্তিক: ছাত্র ইউনিয়ন
গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর আগে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে সরকার।
এছাড়াও গত ৯ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্ট বিভাগের রায় আপাতত বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ। একইসঙ্গে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ৪ জুলাই দিন ধার্য করা হয়।
তবে ইতোমধ্যে কোটা ব্যবস্থার পুনর্বহালে আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধের মত কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় প্রতিটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ পর্যায়ে হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত কোটা বাতিলের আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা।
কোটা পুনর্বহালের প্রতিক্রিয়া নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি (একাংশ) মাহির শাহরিয়ার রেজা। তিনি জানান, কোটা নিয়ে আমাদের পূর্বের যে মূল্যায়ন আমরা সেটি এখনও বহাল রেখেছি। অর্থাৎ আমরা ২০১৮ সালেও বলেছি কোটা সম্পূর্ণ বাতিল কিংবা বহাল রাখার সুযোগ নেই। বরং কোটা ব্যবস্থার একটি যৌক্তিক সংস্কার প্রয়োজন।
২০১৮ সালে তড়িঘড়ি করে কোটা বাতিল করা হয় উল্লেখ করে শাহরিয়ার রেজা বলেন, ২০১৮ সালে আমরা দেখেছিলাম কোটা বাতিলে প্রধানমন্ত্রীর চটকদার ঘোষণার পর সম্প্রতি হাইকোর্টি এটিকে অবৈধ ঘোষণা করেন। তাই আমাদের অবস্থান আগের মতই। তড়িঘড়ি করে কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে এটির যৌক্তিক সংস্কার জরুরি।
কোটা আন্দোলন কারীদের সাথে ছাত্র ইউনিয়নের কিছুটা মতপার্থক্যের কথা জানিয়ে রেজা বলেন, যারা কোটা বাতিল চায় তাদের সাথে আমাদের কিছুটা দ্বিমত রয়েছে। তবে কোটা সংস্কারের জন্য আমরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের নিয়ে ইতোমধ্যে কর্মসূচি পালন করেছি।
তিনি বলেন, যারা বর্তমানে আন্দোলন করছেন তাদের সাথে এখন পর্যন্ত আমাদের কোন সমন্বিত কর্মসূচি নাই, তবে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে হয়ত আমরা ভেবে দেখব। এসময় কোটা সংস্কারের দাবি বাস্তবায়নে শীঘ্রই দলের নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন অভিভাবক-অংশীজনদের নিয়ে ঢাকায় কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট অধিবেশনে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পক্ষে পবিত্র কোরআন থেকে 'দলিল' এবং ‘কোটা আন্দোলনকারীরা জামায়াত শিবির’ বলে আখ্যা দেয়ার প্রতিবাদ জানান মাহির শাহরিয়ার রেজা। তিনি বলেন, এ ধরনের মন্তব্য সাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিচয় দেয়।
শাহরিয়ার রেজার মতে, অধ্যাপক আবুল কাশেম জামাল উদ্দিনের বক্তব্য সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। কোন বিশেষ গোষ্ঠীর সাথে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের জুড়িয়ে দেয়া কিংবা বিশেষ ধর্মগ্রন্থের রেফারেন্স ব্যবহার করে মূলত তিনি আন্দোলনের গতিপথ পরিবর্তনের অপচেষ্টা করেছেন বলে আমি মনে করি। এ ধরনের মন্তব্যকে আমরা কোনোভাবেই সমর্থন করি না। ছাত্র ইউনিয়ন বরাবরই যেকোনো যৌক্তিক দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে দাবি আদায়ে জোরালো ভূমিকা রাখে।