কোটা পুনর্বহাল রাখার যৌক্তিকতা দেখছি না: অধ্যাপক আবুল কাসেম
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই দুই শ্রেণির নিয়োগে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল, সেটি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে উচ্চ আদালত। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার (৫ জুন) এ রায় দেন।
কোটা পুনর্বহালের আদেশের পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম ফজলুল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, প্রথমত আদালতের প্রতি আমি শ্রদ্ধা রাখি। কিন্তু এ সংক্রান্ত বিতর্ক নিয়ে যদি বলি, যারা মুক্তিযোদ্ধা কোটা রহিত করার পক্ষে তাদের কথায় আমি যৌক্তিকতা খুঁজে পাই। কিন্তু যারা পুনর্বহালের পক্ষে কথা বলছেন তাদের কথায় কোন যৌক্তিকতা দেখছি না।
অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের ৫২ বছর পার করেছি। যারা প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধে গিয়েছিলেন তারা অনেকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সত্য, কিন্তু তাদেরকে আর্থিক কিংবা অন্যান্য সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন সেটি কি অনন্তকাল চলমান থাকবে?
“প্রকৃতপক্ষে আমার মনে হয় সেই ক্ষতির বিপরীতে সুবিধা ভোগ করার কোন মানসিকতা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ছিল না। আবার এটিকে পুঁজি করে উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তি থেকে বিভিন্ন স্তরে মিথ্যা প্রমাণ জোগাড় করে সুবিধা ভোগের যে মানসিকতা আছে সেটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করা উচিত। প্রকৃতপক্ষে আমাদের উচিত অন্য যে-সকল দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে কিংবা সেটির ইতিহাস রয়েছে তাদের দিকে তাকিয়ে একটা নৈতিক অবস্থান সৃষ্টি করা।”
তিনি আরও বলেন, সামগ্রিকভাবে আমি মনে করি এটি আমাদের রাজনৈতিক নিম্নগামীতাকে সামনে নিয়ে আসে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বলি, মুক্তিযুদ্ধকে যারা রাজনীতিতে অস্বীকার করে তাদের প্রতিও জনগণের সমর্থন থাকা উচিত নয়।
জানা যায়, ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। তবে, ওইবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত চাকরির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা পুরোপুরি বাতিল করে দেয় সরকার।
তার আগে এসব পদে চালু থাকা কোটার ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তাদের নাতি-নাতনিদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর বাইরে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ আসন থাকতো। কিন্তু, আজকের এই রায়ের ফলে শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটাই ফিরবে নাকি বাকি সব কোটাই বহাল হবে সেটি এখনো পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।