চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার পক্ষে ৮৮ শতাংশ ভোট
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করতে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এরইমধ্যে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ এবং কোটার ক্ষেত্রে ৩৭ বছর করার সুপারিশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এরপরই বিষয়টি নিয়ে আবারও আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
শুক্রবার (৩ মে) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আন্দোলনকারীরা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ ও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩৭ বছর করতে আগামী ১১ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। যদিও বয়সসীমা বৃদ্ধির বিপক্ষে কিছু চাকরিপ্রার্থী। অনেকে ৩২ বছর করার দাবি জানিয়ে আসছেন।
চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে মতামত জানতে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপে একটি পোলের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে দেখা যাচ্ছে, ৮৮ শতাংশ পাঠক চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার পক্ষে। এর বিপক্ষে মত দিয়েছেন মাত্র ৩ শতাংশ।
পোলে পাঠকদের কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী? আপনি কি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার পক্ষে?’ এতে ভোট দিয়েছেন ৬২০ জন পাঠক। এরমধ্যে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার পক্ষে ‘হ্যা’ ভোট দিয়েছেন ৫৪৯ জন, যা প্রায় ৮৮ শতাংশ।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপে একটি পোলের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে দেখা যাচ্ছে, ৮৮ শতাংশ পাঠক চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার পক্ষে। এর বিপক্ষে মত দিয়েছেন মাত্র ৩ শতাংশ।
চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার বিষয়ে ‘না’ ভোট দিয়েছেন ২৩ জন, যা মোট ভোটারের মাত্র ৩ শতাংশ। আর ৩৫ এর পরিবর্তে ৩২ করার পক্ষে আছেন ৪৫ জন বা ৮ শতাংশ। তিনজন বা এক শতাংশ পাঠন কোনও বয়সসীমা চান না।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আল্টিমেটাম দেন ৩৫ প্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থী সমন্বয়ক পরিষদের মুখপাত্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শরিফুল হাসান শুভ। তিনি জানিয়েছেন, এ সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।
শুভ বলেন, আগামী ১১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ বছর প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সমাবেশ আয়োজন করা হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় প্রজ্ঞাপন জারি না করলে সেই সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এর আগে, সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা নুন্যতম ৩৫ বছর করতে অনুরোধ জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেনকে সম্প্রতি চিঠি দেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। গত ২৯ এপ্রিল চিঠিটি পাঠানো হয়।
এতে শিক্ষামন্ত্রী লিখেছেন, এতে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স সাধারণভাবে ৩৫ ও কোটার ক্ষেত্রে ৩৭ বছর করার সুপারিশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সম্প্রতি এ সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।
চিঠিতে শিক্ষামন্ত্রী লিখেছেন, সরকারি, বেসরকারি, আধাসরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিতসহ বিদ্যমান সব ধরনের চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছরকে মানদণ্ড হিসেবে অনুসরণ করে। এ অবস্থায় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৩৫ বছর করার দাবির বিষয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।
আরো পড়ুন: চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করতে সুপারিশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী: মন্ত্রণালয়
বিষয়টি উপলব্ধি করে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের পাতা নম্বর ৩৩ এ শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অনুচ্ছেদে ‘সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ উল্লেখ করা হয়েছিল।
আরো বলা হয়েছে, বর্তমান বাস্তবতায় দেশের সব পর্যায়ে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৩ বছর আগে ১৯৯১ সালে ২৭ বছর থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়। তখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। বর্তমানে গড় আয়ু বেড়ে ৭৩ বছর বিধায় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানো যৌক্তিক বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী।