৩৫ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক সোমবার
চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। প্রথমে ৩৫ বছর করার দাবিতে এ আন্দোলন শুরু হয়। পরে ৩২ বছরের দাবিতে আরেকটি অংশ আন্দোলন শুরু করে। তবে এখন সবাই ৩৫ বছর করার দাবি জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানোর কথা বলেছিল। তবে সরকারের মেয়াদ শেষ হতে চললেও তার বাস্তবায়ন হয়নি বলে দাবি করছেন আন্দোলনকারীরা। এবার আন্দোলনের মুখে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা চাকরি প্রার্থীদের সাথে একটি জরুরি বৈঠক করতে যাচ্ছে সোমবার (৩০ অক্টোবর)। বৈঠকের পর চাকরির বয়স সীমা বৃদ্ধির ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত আসবে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।
সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ৩৫ চাই আন্দোলনকারীরা। এ সময় চাকরি প্রত্যাশী এক নারী বিষপান করেন। বিষপান করা ওই শিক্ষার্থীর নাম আয়শা সিদ্দিকা উর্মী (৩০)। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আয়েশা সিদ্দিকা কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার মিন্টু মিয়ার মেয়ে।
এর আগে ৩৫ চাই আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য প্রাঙ্গনে আমরণ অনশন করে আসছিলো। এরই জেরে তারা নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে।
দীর্ঘ প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টারও বেশি সময় পর পুলিশের আশ্বাসে নীলক্ষেতের সড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছেন চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী আন্দোলনকারীরা। শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) রাত ১১:৪০ মিনিটে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর নিউমার্কেট জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শাহেন শাহ্ মাহমুদের আশ্বাস মেনে নিয়ে নীলক্ষেত ত্যাগ করেন তারা।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার যাচাই করলে দেখা যায় ২০১৮ সালে দেওয়া ইশতেহারের ৩৩ নম্বর পাতায় এ সংক্রান্ত প্রতিশ্রতির বিষয়টি পাওয়া যায়। ৩.১১ নম্বর পয়েন্টে তরুণ যুবসমাজ : ‘তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’র শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অংশে বলা হয়েছে, ‘সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরীখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
৩৫ চাই আন্দোলনকারীদের সংগঠনের সভাপতি শরিফুল হাসান শুভ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গতকাল আন্দোলনের এক পর্যায়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর নিউমার্কেট জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শাহেন শাহ্ মাহমুদ ঘটনাস্থলে এসে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেন যে আগামী সোমবার (৩০ অক্টোবর) সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিটিং করবেন এবং চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সরকারের সিদ্ধান্ত জানাবেন। তাই আমারা আমাদের কর্মসূচী এখন স্থগিত রেখেছি। আশানুরূপ কোন সিদ্ধান্ত না আসলে আমরা আবারও কঠোর কর্মসূচী চালিয়ে যাব।
আরও পড়ুন: রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল
এসময় আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শুভ বলেন, সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার দেখে ২০১৮ সালে আমরা বুক ভরা আশা নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে ভোট দিয়েছিলাম। ইশতেহারে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ ছিল। কিন্ত এই পাঁচ বছরে আমাদের সেই আশা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই এবার আমরা হার্ড লাইনে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
চাকরিপ্রত্যাশীরা বলছেন, বয়স বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি তারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায় ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি তাদের জানিয়েছেন। ইশতেহারের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কার্যকর কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরং একাধিকবার বয়স বৃদ্ধির দাবি নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সকল কলেজসহ অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো রয়েছে তীব্র সেশন জট। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে বের হতে হতে শিক্ষার্থীদের ২৮/২৯ বছর চলে যায়। এরপর মাত্র ২/১ বছর চাকরির বয়স নিয়ে তাদের পক্ষে আর ভালো চাকরি জোগাড় করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো এখন সময়ের ন্যায্য দাবি বলে মনে করেন আন্দোলনকারীরা।
এর আগে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জাতীয় সংসদে বিভিন্ন সময়ে বলেছেন সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা নেই। তার মতে, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশনজট নেই বললেই চলে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর বিধায় আবেদনের জন্য ছয় থেকে সাত বছর সময় পান। এখন বয়সসীমা বৃদ্ধি করলে চাকরি প্রার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ফলে নিয়োগের ক্ষেত্রে অধিক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হতে পারে।