২৭ অক্টোবর ২০২৩, ২০:৪০

গ্রামের চেয়ে শহরে বেকারত্বের হার বেশি

  © সংগৃহীত

দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৮২ হাজার। বেকারত্বের হার শহরে ৪.১৯ শতাংশ আর গ্রামে ৩.৩২ শতাংশ। বেকারত্বের হারের দিক দিয়ে শহরের স্থান ওপরে। যদিও সংখ্যায় বেকার গ্রামে বেশি রয়েছে। বেকারের সংখ্যা গ্রামে ১৮ লাখ ১৩ হাজার শহরে সাত লাখ ৬৯ হাজার। 

গত বুধবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বাস্তবে বেকারের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। আমাদের বর্তমান যে শিক্ষাব্যবস্থা, এর চাহিদা বাজারে নেই বলে শিক্ষিত বেকার বেশি।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ও সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিগ্রিধারী উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের হার এখন ১২ শতাংশে পৌঁছেছে।

সংখ্যার বিচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বেকার বসে আছেন প্রায় আট লাখ নারী-পুরুষ। দেশে গ্রামীণ ও শিক্ষিত বেকার বাড়ার কারণ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আসলে এখানে বেকারের সংখ্যায় কিছু ঝামেলা রয়েছে। তাই হয়তো গ্রামে বেকারের সংখ্যা বেশি দেখাচ্ছে। তবে দেশে প্রতিনিয়ত শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে, তা ঠিক। কারণ প্রতিবছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হয়ে বের হচ্ছে, কিন্তু তারা চাকরি পাচ্ছে না।

এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ তারা যে শিক্ষাটা নিয়ে বের হচ্ছে, এর চাহিদা চাকরির বাজারে নেই।’
আইএলওর সংজ্ঞা অনুযায়ী, গত ৩০ দিনের মধ্যে কাজপ্রত্যাশী একজন মানুষ যদি সর্বশেষ সাত দিনে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টাও কাজ করার সুযোগ না পান, তাহলে তাঁকে বেকার ধরা হবে।

বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, এমন ব্যক্তিদের মধ্যে বেকার ১ শতাংশের একটু বেশি। সংখ্যার দিক থেকে এমন বেকার এক লাখ ৫৩ হাজার। এ ছাড়া প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনোদের মধ্যে ১.৬৯ শতাংশ বা তিন লাখ ২২ হাজার বেকার রয়েছে। পড়াশোনা করেনি বা স্বল্পশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব কম হওয়ার কারণ এই শ্রেণির মানুষ যা কাজ পায়, তা-ই করে।

বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, মাধ্যমিক পাস করেছে, এমন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২.৮২ শতাংশ বা সাত লাখ ৩৯ হাজার বেকার। উচ্চ মাধ্যমিক পাস বেকার ৪.৯৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে ২০২২ সালে দেশে ২৫ লাখ ৮২ হাজার বেকার রয়েছে। বেকারত্বের হার ৩.৫৩ শতাংশ।

বিবিএস বলছে, শ্রমশক্তিতে দুই কোটি ৬৮ লাখ ২৪ হাজার যুবক-যুবতী রয়েছে, যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর। তাদের মধ্যে দুই কোটি ৪৬ লাখ ৭৫ হাজার কাজের মধ্যে আছে। যুবক-যুবতীদের মধ্যে ২১ লাখ ৪৮ হাজার বেকার, যা দেশের মোট বেকার গোষ্ঠীর ৮৩ শতাংশ।

পরিসংখ্যান বলছে, বাসাবাড়িতে নারীরা সংসারের নানা কাজ করে, কিন্তু মজুরি পায় না। এমন অবৈতনিক পারিবারিক শ্রম কমে আসছে। ২০১০ সালে ৯১ লাখ নারী এমন মজুরিবিহীন পারিবারিক কাজ করত।

শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, এই সংখ্যা ৩১ লাখে নেমে এসেছে। এক যুগের ব্যবধানে এই সংখ্যা ৬০ লাখ কমেছে, যা শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। ২০১০ সালে এক কোটি ৭২ লাখ নারী শ্রমশক্তিতে ছিল। এখন তা বেড়ে দুই কোটি ৫৮ লাখ হয়েছে।

শ্রমশক্তি জরিপে উঠে এসেছে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চিত্রও। দেশে আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান হয় মাত্র ১৫.১ শতাংশ। বাকি প্রায় ৮৫ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান হয়। যেখানে কোনো চাকরির নিশ্চয়তা নেই।