২১ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:৪০

তিন মাসেই কর্ম হারিয়েছে ৪ লাখ মানুষ

সবচেয়ে বেশি কাজ হারিয়েছেন নারীরা।   © সংগৃহীত

দেশে চলতি ২০২৩ পঞ্জিকাবর্ষের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কাজে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১১ লাখ। দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) শেষে এ সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজারে। সে অনুযায়ী তিন মাসের ব্যবধানে কর্মহীন হয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ত্রৈমাসিক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।  

বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কর্মসংস্থান হারানোদের মধ্যে সিংহভাগই নারী, যার সংখ্যা ৩ লাখ ৭০ হাজার। অন্যদিকে কর্মসংস্থান হারানো পুরুষের সংখ্যা ২০ হাজার। মাঠ পর্যায়ে পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে প্রতি প্রান্তিকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিএস। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক চলাকালে জেলা পর্যায়ের ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা থেকে প্রশ্নপত্র ব্যবহার করে এ জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। 

তিন মাসের ব্যবধানে শ্রমবাজারে প্রায় ৪ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ার কারণ জানতে অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি ও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ চাপে পড়াকে দায়ী করছেন সবচেয়ে বেশি। 

এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য, ডলার সংকটে শিল্প খাতে কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্নমুখী ব্যক্তি খাতের ভোগ। এ দুয়ের সম্মিলিত চাপে পড়েছে শিল্প খাতের চাহিদা ও উৎপাদন। কাজ হারাচ্ছেন শিল্প খাতে নিয়োজিত শ্রমিকের অনেকে। আবার গ্রামাঞ্চলেও মৌসুমি কৃষি শ্রমিকদের একাংশ বছরের একটি সময় পার করেন কর্মহীনতায়। এসব বিষয়েরই সম্মিলিত প্রভাব দেখা যাচ্ছে বিবিএসের দ্বিতীয় প্রান্তিকের শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদনে।  

জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় স্বল্প আয়ের শ্রমজীবীদের জন্য নগরাঞ্চলে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে। তাদের অনেকে ফিরে যাচ্ছেন গ্রামে। এমনই একজন খুলনার তেরখাদা উপজেলার নাওডুবি গ্রামের লিজা সুলতানা। রাজধানীর একটি বিউটি পার্লারে কাজ করতেন তিনি। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় সম্প্রতি চাকরি ছেড়ে নিজ গ্রামে ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, ‘সবকিছুর দাম অনেক বেড়ে গেছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে এ শহরে কীভাবে টিকে থাকব! আমার বেতন বাড়েনি। কিন্তু খরচ কয়েক গুণ বেড়েছে। উপায়ান্তর না দেখে গ্রামে চলে এসেছি।’ 

মূল্যস্ফীতির চাপ শ্রমিকদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তার। বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার বলেন, ‘‌শহরে থেকে যদি শ্রমিকরা তাদের জীবন ধারণের ব্যয় নির্বাহ না করতে পারেন তাহলে কেন তারা শহরে থাকবেন? বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ক্রেতাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ কমে গেছে। এর ফলে অনেক শ্রমিক কাজ হারাচ্ছে। আবার কর্মসংস্থান কমায় জীবনযাত্রা খারাপ হয়ে পারিবারিকভাবেও সমস্যায় পড়ছেন অনেক  শ্রমিক। তাই অনেকে গ্রামে চলে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই কাজ বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন।’ 

শিল্পোদ্যোক্তারাও বলছেন, শ্রমিকের সংখ্যা এখন কমছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনমাফিক শ্রমিক পাওয়াও যাচ্ছে না। কোনো কোনো উদ্যোক্তা এখন অটোমেশনের মাধ্যমে শ্রমিকের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। 

বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শ্রমিক সবচেয়ে বেশি কমেছে কৃষি খাতে। এ সময় কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা ৩ কোটি ১৯ লাখ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ১১ লাখে। সে অনুযায়ী তিন মাসের ব্যবধানে খাতটিতে শ্রমিক কমেছে প্রায় ৮ লাখ।