এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি নীতিমালার জন্য শিক্ষা সচিবকে স্মারকলিপি
বাংলাদেশের সকল পেশায় বদলি থাকলেও কেবলমাত্র বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত ইন্ডেক্সধারি শিক্ষকদের বদলি নেই। বদলির নীতিমালা তৈরি করতে আজ মঙ্গলবার ৭ম বারের মতো শিক্ষা সচিব বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।
উল্লেখ্য বদলি প্রথা চালুর দাবিতে ২০১৯ সালে উচ্চ আদালতে একটি রিট করলে সেই রিটের রায় আসলেও আবার শুনানির জন্য আবেদন করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এভাবে বছরের পর বছর ঝুলে আছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির নীতিমালা। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর স্মারকলিপিতে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, বদলি প্রত্যাশি লক্ষাধিক শিক্ষকদের মধ্যে বেশিরভাগই নিজ জেলা থেকে ৩০০-৮০০ কিলোমিটার দূরে শিক্ষকতা করছেন। অনেকের বৃদ্ধ বাবা মা অসহায়ভাবে বাড়িতে একাকি থাকেন অথচ তাদের দেখার কেউ নেই। পার্বত্য জেলায় কর্মরত নারায়ণগঞ্জের নারী শিক্ষক নাজমা খাতুনের সংসার ভাঙ্গার মত অবস্থা। নিকট আত্মীয়-স্বজন মারা গেলেও শেষ দেখার সুযোগ থাকে না। বদলি না থাকায় দূরে শিক্ষকতার কারণে স্বল্প বেতন, মানসিক নির্যাতন ও চরম হয়রানির কারণে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়েছেন খুলনায় কর্মরত রংপুরের এক শিক্ষক। কুমিল্লা ও চাঁদপুরে শিক্ষকদের এমপিও ও পদন্নোতি আটকে রেখেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। সিলেটে কর্মরত কুড়িগ্রামের এক শিক্ষকের মা বাবা দুজনেই ক্যান্সার আক্রান্ত। বদলি না থাকায় তিনি দিশেহারা।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ রয়েছে, বদলি প্রথা চালুর দাবিতে মহামান্য উচ্চ আদালতে একটি রিট ২৭৯/২০১৯ দাখিল করি এবং আদালত শিক্ষকদের পক্ষে রায় প্রদান করে ০৮/১০/২০২০ইঃ তারিখে। ২০২২ সালে এনটিআরসিএ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ তা খারিজ করে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।
মহামান্য হাইকোর্ট রায়ে উল্লেখ করেছেন,"দরখাস্তকারীগণ নিজ নিজ বাড়ি-ঘর থেকে অনেক দূরে বিভিন্ন জেলার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় কর্মরত আছেন। প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে সুবিধামতো কাছাকাছি কোথাও যেতে পারলে দরখাস্তকারীগণের মানসিক স্বাস্থ্য যেমন রক্ষা পাবে তেমনি সুস্থ, সুন্দর ও উন্নত মননশীল পরিবার গঠনে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কারণ সুস্থ, সুন্দর ও উন্নত মননশীল পরিবার ছাড়া উন্নত রাষ্ট্রে উন্নিত হওয়া সম্ভব নয়। ন্যায়পরায়ন এবং সকল মানুষের জন্য কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনই জাতির পিতার স্বপ্ন। চাকরিরত এমপিওভুক্ত ইন্ডেক্সধারি শিক্ষকগণ বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে তাদের নিজ নিজ কর্মস্থল পরিবর্তন করে "পদ খালি থাকা সাপেক্ষে " নিজস্ব পছন্দের প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে আইনত অধিকারী।"
অতএব,মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন, বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত ইন্ডেক্সধারি শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন অথবা বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন তথা বদলি প্রথা চালুর জন্য নীতিমালা প্রণয়নে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিনীত অনুরোধ রইল।
জানতে চাইলে বদলি প্রত্যাশি এমপিওভুক্ত ইন্ডেক্সধারি শিক্ষক কমিটি - বদলি ৭১ এর সভাপতি গৌতম কুমার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা আজকে মঙ্গলবার কুরিয়ারে স্মারকলিপি পাঠিয়েছি। এ পর্যন্ত ৭ বার স্মারকলিপি দিয়েছি। ২২ অক্টোবরের মধ্যে আমরা সরাসরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দিব। আমরা আসা করি আমাদের যৌক্তি দাবি এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবে।