বছরজুড়ে পৌনে এক লাখ শিক্ষক নিয়োগ
বাংলাদেশের শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে শিক্ষক সংকটের বিষয়টি বহুল আলোচিত। শিক্ষক সংকটের কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ায় অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন এসেছে মনে জানিয়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
২০২২ সালে এসে শিক্ষক সংকটের পরিমাণ কিছুটা হলেও কমেছে। কারণ এবছর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৭৩ হাজার শিক্ষক। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনও এক বছরে এত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে তুলনামূলক কম। ২০২০ সাল ও তার আগের কিছু নিয়োগের কার্যক্রম আটকে ছিল করোনার কারণে। ২০২২ সালে এসে সেগুলোর কয়েকটি বড় নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে সক্ষম হয়েছে নিয়োগদানকারী সংস্থাগুলো।
আরও পড়ুন : প্রাথমিকের নিয়োগে ৮০ শতাংশই কোটা, ভালো করেও বাদ পড়ছেন অনেকে
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ১ হাজার ৯০৩টি পদে নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এই বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারের পদ ছিল ৭৪৮ টি।
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৯৬৩ জন প্রার্থীকে পিএসসি এ বছরের মার্চে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল। তাদের মধ্যে থেকে ৩৪ জনকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৯২৯ জনকে নিয়োগ দিয়ে ৪০তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালায়। এই ১ হাজার ৯২৯ জন ক্যাডারের মধ্যে ৭৪৮ জন শিক্ষা ক্যাডার চলতি ডিসেম্বর মাসে দেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজে যোগদান করেছেন।
অন্যদিকে, এবছর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। জানা যায়, ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের ৩২ হাজার ৫৭৭টি শূন্যপদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এ নিয়োগ পরীক্ষায় মোট আবেদন করেন ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ জন প্রার্থী।
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর এবছরের ১৪ ডিসেম্বর ৩২ হাজার ৫৭৭টি শূন্যপদের বিপরীতে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রায় ৫ হাজার পদ বাড়িয়ে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়। আগামী বছরের ২২ জানুয়ারি এই শিক্ষকদের পদায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এছাড়া, ২০২২ সালের শুরুতে আরেকটি বড় নিয়োগ দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। চলতি বছরের (২১ জানুয়ারি) দুপুরে চূড়ান্ত সুপারিশ পায় ৩৪ হাজার ৭৩ জন শিক্ষক।
সবমিলিয়ে এবছর পিএসসি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগ পেয়েছেন মোট ৭২ হাজার ৩৯৫ জন শিক্ষক।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবছর শুধু শিক্ষক নিয়োগই বাড়েনি, নিয়োগের প্রক্রিয়াও অনেকটা স্বচ্চ হয়েছে। যোগ্যরাই নিয়োগ পেয়েছেন। এর ফলে শিক্ষায় গতি সঞ্চার হবে, শিক্ষার মানে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
আরও পড়ুন : নামমাত্র প্রশিক্ষণের ফল ভালো হবে না
তবে, এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের পরও শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে এখনও লক্ষ্যাধিক শূন্য পদ রয়েছে। অনতিবিলম্বে এসব শূণ্যপদ পূরণের জন্য নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ ডিসেম্বর দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬৮ হাজার ৩৯০ পদে শিক্ষক নিয়োগে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
যোগ্য প্রার্থীদের আগামী ২৯ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের শেষ তারিখ আগামী ২৯ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে বলে এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন চিন্তাবিদ ও জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষক সংকট প্রকট। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সংকট বেশি। শিক্ষকরা গ্রামের প্রতিষ্ঠানগুলোতে থাকতে চান না। কাজেই শুধু নিয়োগ দিলেই হবে সেখানে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকের শূণ্য পদগুলো যত দ্রুত পূরণ হবে শিক্ষার মানে তত পরিবর্তন আসবে। এক্ষেত্রে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা জরুরি। প্রশিক্ষণ ছাড়া নতুন শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষা দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এখন মূল কাজ হলো শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে শিক্ষকের শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণ করা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন করা।