১৯ অক্টোবর ২০২২, ১২:৪৭

জেনে নিন স্বল্প পুঁজির ব্যবসা পরিকল্পনা

স্বল্প পুঁজির ব্যবসা  © সংগৃহীত

ব্যবসা বহুকাল ধরে সমাজস্বীকৃত এক ধরণের আদি পেশার নাম। প্রায় বহুবছর আগে থেকে থেকেই এই দেশের মানুষ ব্যবসার সাথে জড়িত। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতায় ঘেরা এই পেশা, মানুষের সাফল্য গড়ার এক অন্যতম কারিগর। ব্যবসা মানুষের মানুষের প্রাণের অস্তিত্বের সাথে জড়িতে আছে গভীরভাবে। অল্প পুজির ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে খুব বেশি মূলধনের প্রয়োজন হয় না। তাই ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনার যথেষ্ট দক্ষতা না থাকলে লাভজনক ব্যবসা করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি বিষয়টি সম্পর্কে আপনার আগ্রহ থাকাও জরুরি।

চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন ১৪টি ব্যবসার আইডিয়া, যা আপনি শুরু করতে পারবেন কম পুঁজিতে—

১. অনলাইন শিক্ষকতা

অনলাইনে আপনার পছন্দের বিষয়টি শিখিয়ে ঘরে বসেই ভালো রকমের আয় করা সম্ভব। বিষয়টি হতে পারে পড়াশোনা, বাদ্যযন্ত্র বা ভাষা শিক্ষা। আপনার দক্ষতা ও আগ্রহের ভিত্তিতে নির্ধারণ করুন বিষয়। নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল খুলে বিনা বিনিয়োগেই আয় করতে পারবেন।

অনলাইন শিক্ষকতার জন্য রয়েছে বিভিন্ন পোর্টাল। যেখানে খুব সহজেই শুরু করতে পারবেন শিক্ষকতা। সেক্ষেত্রে নিতে হবে না ভিউ বাড়ানোর দায়িত্ব। এতে রয়েছে ইউডেমির মতো অনলাইন টিচিং ও লার্নিংমার্কেট প্লেস। এই ধরনের প্ল্যাটফর্মে কোর্স আপলোড করেও শুরু করতে পারেন ব্যবসা। অঙ্ক, বিজ্ঞান, ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি আঁকা, প্রোগ্রামিং, মার্কেটিং, ফটোগ্রাফি ইত্যাদি নানা বিষয়ে কোর্স আপলোড করার সুযোগ রয়েছে এই ধরনের প্ল্যাটফর্মে। টেক্সট, ভিডিও, অডিও বা প্রেজেন্টেশনের আকারে আপলোড করতে পারেন কোর্স।

২. খাবারের হোম ডেলিভারি

আজকের কর্মব্যস্ততার যুগে বাড়িতে রোজ রান্না করার সুযোগ হয় না অনেকেরই, আবার প্রতিদিন হোটেলের খাবারও খেতে চান না বেশিরভাগ মানুষ। এই চাহিদা মেটাতেই শুরু হয়েছিল খাবারের হোম ডেলিভারির ব্যবসা। নিজের বাড়িতে রান্না করে পৌঁছে দিন বাড়ি কিংবা অফিসে, সময় মতো সুস্বাদু খাবার দিতে পারলে ব্যবসার অভাব হবে না।

কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন অঞ্চলে এ ব্যবসার সুযোগ বেশি। শহরের বাইরে থেকে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই রোজ রান্না করতে চান না, সেক্ষেত্রে তারা নির্ভর করেন হোম ডেলিভারির ওপর। এছাড়া অনেক ছোট পরিবারও প্রতিদিনের খাবারের জন্য হোমডেলিভারি খাবারের ওপরই নির্ভর করেন। তাই কম পুঁজিতে শুরু করুন এই ব্যবসা।

৩. অনলাইন বেকারি

রকমারি কেক, কুকিস বানাতে ভালোবাসেন? আত্মীয়-বন্ধুদের জন্মদিন-অ্যানিভারসারিতে আপনার বানানো কেকের কদর রয়েছে? তাহলে এই ছোট ব্যবসা আপনার জন্য। ওভেন-ফ্রেশ বেকারি আইটেমের চাহিদা প্রচুর, আর তা যদি আপনি একেবারে ক্রেতার ঘরে পৌঁছে দিতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই। নিত্যনতুন রেসিপি চেষ্টা করুন। ঘরের ওভেনেই বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি করুন।

৪. ফলের রসের কিয়স্ক

প্রথমেই বেছে নিতে হবে জায়গা। এমন জায়গায় নিতে হবে যাতে সহজেই চোখে পড়ে। আসে পাশে অফিস, স্কুল, কলেজ থাকলে বিক্রি হওয়ার সুযোগ বেশি। ওই জায়গায় কিয়স্ক বসানোর অনুমতিপত্র যোগাড় করতে হবে, ভাড়া নিতে হবে জায়গা। এরপর দরকার কাঁচামাল আর ফলের রস তৈরির যন্ত্র।

৫. ট্রাভেল এজেন্সি

অল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করতে হলে বাসের টিকিট বুকিংয়ের ব্যবসার কথা ভাবতে পারেন। স্বল্প মূলধনে ব্যবসা করতে চাইলে সব থেকে সহজ উপায় হোস্ট এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া। প্রাথমিক বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ভর করে হোস্ট এজেন্সির উপর, কিন্তু তা ১০ হাজার টাকার মধ্যে রাখা সম্ভব।

৬. ট্যুর গাইড

বাঙালি ঘরতে ভালোবাসে। আর তার জন্য অনেক সময় নির্ভর করে ট্যুর গাইডের ওপর। ফ্লাইট, ট্রেনের টিকিট বুকিং, হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ ট্যুরটি প্ল্যান করা পুরোটার দায়িত্ব আপনার। অফিস, স্কুল বা কলেজের ট্যুর করাতে পারলে নিয়মিত ব্যবসা পাওয়া সম্ভব। আপনাকে শুধু একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে, আর যোগাযোগ তৈরি করতে হবে বিভিন্ন জায়গার হোটেলের সঙ্গে, জেনে নিতে হবে তাদের ট্র্যাভেল এজেন্ট কমিশনের রেট। খুঁজে বের করুন নতুন নতুন জায়গা। বর্তমানে সব থেকে লাভজনক ব্যবসার একটি ট্যুর অপারেটিংয়ের ব্যবসা।

৭. অনলাইনে হস্তশিল্প সামগ্রী বিক্রি

দেশে রয়েছে হস্তশিল্পের বিপুল সম্ভার। অল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করতে ছোট ছোট ঘর সাজানোর সামগ্রী সংগ্রহ করুন, অথবা ছোট গয়না। গ্রামীণ শিল্পীরা অনেক কম দামেই বিক্রি করেন তাদের তৈরি সামগ্রী। তাই অত্যন্ত কম খরচে লাভের ব্যবসা করা সম্ভব।

৮. বিউটিশিয়ান

উপযুক্ত দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ থাকলে অল্প পুঁজিতে এই ব্যবসা করা সম্ভব। প্রথমেই কিনে ফেলুন প্রাথমিক পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ। বাড়িতে গিয়ে ফেসিয়াল, পেডিকিওর, ম্যানিকিওর, অয়েল ম্যাসাজ বা ওয়্যাক্সিংয়ের মতো পরিষেবা দিন ক্রেতাকে। অনেকে বিউটি পার্লারে না গিয়ে বাড়িতেই এই সমস্ত পরিষেবা পেতে পছন্দ করেন। পরিষেবার মান ভালো হলে লোক মুখেই প্রচার হবে।

৯. বিদেশি ভাষা শিক্ষা

আপনার যদি কোনও বিদেশি ভাষা জানা থাকে, তাহলে সেই দক্ষতা ব্যবহার করে সহজেই লাভজনক ব্যবসা করতে পারবেন। ছোট থেকে বয়স্ক, বিভিন্ন বয়সের ছাত্রছাত্রী পাওয়া সম্ভব। বিনা বিনিয়োগে আয় করতে পারবেন এই ব্যবসায়। তবে এই ব্যবসা করতে সংশ্লিষ্ট ভাষায় আপনাকে যথেষ্ট দক্ষ হতে হবে নিশ্চিতভাবেই, হতে হবে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ও ধৈর্যশীল।

আরও পড়ুন: এনজিওতে বিশাল নিয়োগ, নেবে ৮৩৭ কর্মী

১০. ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটিং

ইংরেজিভাষায় যথেষ্ট দক্ষতা থাকলে কন্টেন্ট রাইটিংয়ের কাজ পাওয়া সহজ। ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা করা যায়। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স সাইটের মাধ্যমে এই কাজ পাওয়া যেতে পারে। ইদানিং আঞ্চলিক ভাষায়ও কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এই লেখার নিজস্ব কিছু কৌশল রয়েছে, যেমন সার্চ ইঞ্জিনে যাতে আপনার লেখা ওপরের দিকে স্থান পায় তার জন্য জানতে হয় সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের কৌশল। তবে চর্চা করলে রপ্ত করে নেওয়া কঠিন হবে না। ভাষার ও শব্দভাণ্ডারের ওপর দখল থাকাই এই ব্যবসায় সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। বিনা বিনিয়োগে ঘরে বসে আয় করতে পারবেন এই ব্যবসায়।

১১. ইউটিউব চ্যানেল

অনলাইনে আয় করার আরও একটি সহজ উপায় ইউটিউব চ্যানেল। শিক্ষামূলক থেকে রান্না শেখানো, লাইফ হ্যাকস থেকে বেড়ানো, বিষয় হতে পারে যে কোনও। চ্যানেলের ফলোয়ার বাড়াতে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করতে হবে। স্মার্টফোনে ভিডিও তুলেও আপলোড করতে পারেন চ্যানেলে। তবে শব্দ ও ছবির গুণমান ভালো হওয়া জরুরি। ভিডিওর যথেষ্ট ভিউ হলে বিজ্ঞাপন বাবদ টাকা পাবেন।

১২. গ্রাফিক্স ডিজাইনিং

বলা হয়, পূর্ণ সময়ের চাকরির চেয়ে আয় বেশি করেন গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা। কম্পিউটার আর প্রয়োজনীয় সফ্টওয়্যার থাকলে শুরু করতে পারেন ব্যবসা। এতে আলাদা কোনও অফিসেরও প্রয়োজন নেই, ব্যবসা করতে পারেন ঘরে বসেই। অর্ডার পেতে পারেন অনলাইনে অথবা চুক্তিবদ্ধ হতে পারেন বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যাদের নিয়মিত গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের কাজের প্রয়োজন। আজকের ডিজিটাল যুগে গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের কাজের সুযোগ প্রচুর।

১৩. চকলেটের ব্যবসা

চকলেট পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। ছোট বড় সকলের পছন্দের তালিকায় রয়েছে এই চকলেট। চকলেটের দোকান দিতে পারেন, অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। এছাড়া, চকলেটের গিফট বক্স তৈরি করেও বিক্রি করতে পারেন।

১৪. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট 

আপনি যদি খুব ঘর সাজাতে পছন্দ করেন এবং এই ক্ষেত্রে থেকে থাকে আপনার পুরোপুরি দক্ষতা তাহলে খুব সহজে শুরু করতে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর ব্যবসা। খুব অল্প দিনের মাথায় লাভবান হতে পারবেন।

ব্যবসার উপায় আছে অনেক, আপনাকে বুঝতে হবে বাজারের চাহিদা আর চিহ্নিত করতে হবে নিজের দক্ষতা আর আগ্রহ। এই ছোট ব্যবসায় আপনার দক্ষতা আর উদ্ভাবনী শক্তিই আপনার পুঁজি। সেই পুঁজিকে কাজে লাগিয়েই শুরু করতে পারেন ব্যবসা। দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গেই বাড়বে আয়।