সকালটা শিশুদের, দুপুরের পর জমজমাট
ছুটির দিনে জমজমাট আর বেচাবিক্রির ধুম। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এ চিত্র নতুন নয়। শুক্রবার এমন একটি দিন অতিবাহিত হলো গ্রন্থমেলার। এইদিন সকালটা ছিল কোমলমতিদের দখলে আর দুপুরের পর থেকে বইপ্রেমীদের ঢল নামে। স্টলগুলোতেও বেচাবিক্রিও ছিল বেশি ছিল বলে জানায় প্রকাশকরা।
শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল মেলার শিশুপ্রহর। বেলা ১১টায় মেলার দ্বার উন্মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিভাকরা শিশুদের নিয়ে প্রবেশ করতে থাকেন। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে শিশু চত্বরকে সাজানো হয়েছে বিচিত্র সাজে। অভিভাবকরা ছোটবেলা থেকেই তাদের শিশুদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে এইদিন নিয়ে এসেছেন মেলায়।
সিসিমপুরের হালুম, টুকটুকি আর ইকরি-মিকরিকে নিয়ে মাতামাতি ছিল শিশু প্রহরে। তারা নানা রকম অঙ্গভঙ্গি, নাচ-গান আর মজা করে আনন্দে মুখর করে তোলে শিশুদের। মেলায় শিশুদের বই কেনার ঝোঁকও ছিল চোখে পড়ার মতো। এর আগে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। তাই গ্রন্থমেলার সকালটা কোমলমতিদের দখলে ছিল।
এদিকে, দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত গ্রন্থমেলায় লোকসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। ছুটির দিন হওয়ায় রাজধানীর কর্মজীবীরা মেলায় এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। শুধু রাজধানী নয়, রাজধানী বাইরে থেকেও গ্রন্থমেলায় এসেছেন বইপ্রেমীরা।
ময়মনসিংহ থেকে সস্ত্রীক মেলায় এসেছেন খালিদ চৌধুরী। তিনি বলেন, একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের ঐতিহ্য। প্রতিবছরই মেলায় আসি। অন্যদিকে, স্টলগুলোতেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। বেচাবিক্রিও ছিল বেশি। প্রতিলেখ প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি মাহমুদ বলেন, ছুটির দিন থাকাতে বেচাবিক্রি ভালোই হচ্ছে। দম ফেলানোর সুযোগও পাচ্ছি না! সব মিলিয়ে শুক্রবার গ্রন্থমেলা ছিল জমজমাট। এদিন মেলায় আজ নতুন বই এসেছে ২৬৩টি।
শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা: অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন চিত্রশিল্পী আবুল বারক্ আলভী। এতে ক-শাখায় ৪০৬, খ-শাখায় ৩৪৭ এবং গ-শাখায় ১৫৭ জন সর্বমোট ৯১০জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হবে।
গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চ: শুক্রবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় চিত্রশিল্পী পরিতোষ সেন: জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবুল মনসুর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মতলুব আলী এবং সৈয়দ আবুল মকসুদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রফিকুন নবী।
সন্ধ্যায় কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি অঞ্জনা সাহা এবং রনজু রাইম। আবৃত্তি পরিবেশন করেন মীর বরকত। সঞ্জয় রায়ের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘গীতিসত্র’ এবং ফারহানা চৌধুরীর পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন: ‘বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা)’ নৃত্যশিল্পীবৃন্দ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনা করেন।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন নাসরীন জাহান, মিনার মনসুর, রফিকুর রশিদ, আহমাদ মোস্তফা কামাল এবং দ্রাবিড় সৈকত।
কালকের অনুষ্ঠানসূচি: শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার নবম দিন। মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে, বিকেল ৪টা গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে লেখক অনুবাদক আবদুল হক: জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সৈয়দ আজিজুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন অজয় দাশগুপ্ত, সোহরাব হাসান এবং আহমাদ মাযহার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সুব্রত বড়–য়া। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন: শনিবার সকাল ১০টায় একাডেমি প্রাঙ্গনে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
শিশু-কিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন: শনিবার সকাল ১০টায় একাডেমি প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন।