০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২০:৫০

গ্রন্থমেলায় ব্যতিক্রমধর্মী স্টল

স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা বই দেখছেন  © টিডিসি ফটো

হরেক রকম বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসে আছে স্টলগুলো। পাঠকরা আসছেন, দেখছেন এবং কিনছেন তাদের পছন্দের বই। মোটামুটি এটাই অমর একুশে গ্রন্থমেলা পুরো চিত্র। কিন্তু গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি অংশে একটি ব্যতিক্রমধর্মী স্টল রয়েছে। যার নাম স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরাও যাতে মেলার আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয় এই স্টলে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন লেখকের গল্প, উপন্যাস, কবিতার প্রায় অর্ধশত ব্রেইল বই রাখা হয়েছে এখানে। ফলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাও প্রতিদিন জানার আগ্রহে ভিড় জমাচ্ছেন এই স্টলে। সকলের মতো ব্রেইল পাঠকেরাও বইয়ের পাতায় পাতায় হাত বুলিয়ে খুঁজে নিচ্ছেন তাদের প্রিয় বই।

বুধবার সন্ধ্যায় কথা হয় তেমনি একজন, সরকারি বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী বাপ্পি মুহাম্মদ সাফরান খানের সাথে। তিনি বলেন, নতুন নতুন বই পড়তে পেরে অনেক ভালো লাগছে। তিনি আগামীতে যেন প্রত্যেক স্টলে কমপক্ষে একটি করে ব্রেইল বই রাখা হয় এ দাবী জানান।

এদিকে, গ্রন্থমেলা শুরু কয়েকদিনে তেমন বেচা-বিক্রি না থাকলেও বুধবার বইয়ের কাটতি বেশ ভাল ছিল বলে জানান প্রকাশকরা। বুধবার সন্ধ্যায় মেলার বেশিরভাগই দর্শনার্থীদের এসেছে দল বেঁধে। কেউ কেউ সহপাঠীদের নিয়ে আবার কেউ পরিবার-পরিজন ও প্রিয় মানুষকে নিয়ে। শিশু, কিশোর-কিশোরী এসেছে তাদের মা-বাবার সঙ্গে।

নতুন বই: অমর একুশে গ্রন্থমেলার ষষ্ঠ দিন বুধবার নতুন বই এসেছে ১শ’ ৫২টি। এরমধ্যে গল্প ৩১টি, উপন্যাস ২২টি, প্রবন্ধ ৪টি, কবিতা ৪০টি, গবেষণা ২টি, ছড়া ১০টি, শিশুসাহিত্য ১টি, জীবনী ৪টি, মুক্তিযুদ্ধ ৮টি, নাটক ১টি, বিজ্ঞান ৪টি, ভ্রমণ ৩টি, ইতিহাস ২টি, রাজনীতি ১টি, চি:/স্বাস্থ্য ২টি, রম্য/ধাঁধা ১টি, সায়েন্স ফিকশন ৩টি এবং অন্যান্য ১৩টি।

গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চ: বুধবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবুল হাসনাত। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিমল গুহ, গোলাম কিবরিয়া পিনু এবং শোয়াইব জিবরান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ চৌধুরী।

প্রাবন্ধিক বলেন, ‘প্রিয় ফুল খেলার দিন নয় অদ্য’ কিংবা ‘কমরেড নবযুগ কি আনবে না’-তাঁর এসব অবিনাশী পঙ্ক্তিমালার মধ্যে আমাদের অনেকেরই মানস পুষ্টি অর্জন করেছিল ও আমরা এর মাধ্যমে সময়ের দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে উপলব্ধি করেছিলাম, নবচৈতন্যের আলোকে। আমরা এসব কবিতার মর্মভেদী আবেদনকে অনুভব করেছিলাম জীবনকে মেলাবার আবেদন; প্রিয়ার সান্নিধ্য ও তার বাহুডোরকে পরিত্যাগ করে স্বপ্ন ছিঁড়ে জনমানুষের কল্যাণ ও মঙ্গলের চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার আকাক্সক্ষায়।

আলোচকবৃন্দ বলেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায় বাংলা কবিতায় নতুন যুগের উদ্গাতা। তিনি জনমানুষের আকাক্সক্ষাকে কবিতার শব্দে, ছন্দে শিল্পরূপ দিয়েছেন। কবিতা তার কাছে কোনো উপরিতলার প্রসাধন ছিল না বরং কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি নিজের জীবন এবং একই সঙ্গে সমষ্টির জীবন যাপন করেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে আসাদ চৌধুরী বলেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায় কবিতার মধ্য দিয়ে সময়কে ধারণ করেছেন। কবিতার পাশাপাশি গদ্য ও অনুবাদে তিনি রেখেছেন স্বাতন্ত্র্যের স্বাক্ষর। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের তিনি ছিলেন এক ঘনিষ্ঠ সুহৃদ। তার মতো কবিমানুষের জন্মশতবর্ষে বাংলা একাডেমির এ আয়োজন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও প্রশংসনীয়।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি ফারুক মাহমুদ এবং ফারহান ইশরাক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আশরাফুল আলম এবং শিরিন ইসলাম। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আবুবকর সিদ্দিক, স্বপ্না রায়, আজগর আলীম, শফিউল আলম রাজা, অনিমা মুক্তি গোমেজ। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন শাহ্নূর আলম রাজন (তবলা), এস. এম. রেজা বাবু (বাংলা ঢোল), ডালিম কুমার বড়–য়া (কী-বোর্ড), নির্মল কুমার দাস (দোতারা)।

কালকের অনুষ্ঠানসূচি: বৃহস্পতিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার সপ্তম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪:০০টা গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ভাষাবিজ্ঞানী মুহম্মদ আবদুল হাই : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. সৌমিত্র শেখর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, জীনাত ইমতিয়াজ আলী, শহীদ ইকবাল এবং তারিক মনজুর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

গ্রন্থমেলা বিষয়ে সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলন: বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমির শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯’ বিষয়ে সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী গ্রন্থমেলার বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।