অমর একুশে গ্রন্থমেলা
প্রাণের খোরাক জোগাতে বইপ্রেমীদের ভিড়
- রাইহান আহমেদ
- প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৩৯ PM , আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০২:১৭ AM
দিন যতই গড়াচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ততই প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন হিসেবে পরিচিত এ মেলাতে প্রতিদিনই প্রাণের খোরাক জোগাতে ভিড় করছেন বইপ্রেমীরা। কেউ আসছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। আবার কেউ আসছেন সহপাঠীদের নিয়ে।
প্রতিদিন বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠছে মেলাপ্রাঙ্গণ। তাদের পদচারণায় বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি, দোয়েল চত্বরসহ মেলার আশপাশের এলাকাও মুখরিত হয়ে ওঠে।
সোমবার মেলা ঘুরে দেখা যায়, বিকেলে তিনটায় মেলার দ্বার খুলা হয়। মেলার দ্বার খুলতেই লোক সমাগম বেশ ভালো ছিল। অনেকে বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে বইয়ের তালিকা সংগ্রহ করছেন। কেউ কেউ পছন্দের লেখকের দেখা পেয়ে অটোগ্রাফ নিচ্ছেন এবং ছবি তুলছেন।
ত্রয়ী প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি শুভ বলেন, প্রসিদ্ধ ও পুরান লেখকদের বই তুলনামূলকভাবে বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে নতুন লেখকদের বইও মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মেলায় ঘুরতে আসা সুমী আক্তার নামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, মেলায় নতুন নতুন লেখকদের অনেক বই বের হয়েছে। কিন্তু এগুলোর গুণগতমান তেমন ভালো না হওয়ায় দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করতে পারছে না। বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে বইয়ের তালিকা সংগ্রহ করছেন বলে জানান তিনি।
মেলায় নতুন বই: মেলার চতুর্থ দিন সোমবার নতুন বই এসেছে ১৪১টি। এর মধ্যে-গল্প ২৬টি, উপন্যাস ২৫টি, প্রবন্ধ ৭টি, কবিতা ৪৫টি, গবেষণা ৩টি, ছড়া ২টি, শিশুসাহিত্য ৩টি, জীবনী ১টি, মুক্তিযুদ্ধ ২টি, নাটক ৪টি, বিজ্ঞান ১টি, ভ্রমণ ৪টি, ইতিহাস ১টি, রম্য/ধাঁধা ২টি, সায়েন্স ফিকশন ৩টি এবং অন্যান্য ১২টি।
মূলমঞ্চের অনুষ্ঠান: সোমবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. নূহ-উল-আলম লেনিন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সুভাষ সিংহ রায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তোফায়েল আহমেদ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন মাকিদ হায়দার এবং ইকবাল আজিজ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাহমুদা আখতার। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা, খায়রুল আনাম শাকিল, ইয়াকুব আলী খান, লীনা তাপসী খান এবং ক্যামেলিয়া সিদ্দিকা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন স্বরূপ হোসেন (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশী), রবিনস্ চৌধুরী (কী-বোর্ড), ফিরোজ খান (সেতার)। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের সাহিত্যকর্ম বিষয়ে আলাপনে অংশ নেন জাকির তালুকদার, নাসিমা আনিস, বিধান রিবেরু, তিথি আফরোজ এবং গিরিশ গৈরিক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সায়েরা হাবীব।
কালকের অনুষ্ঠানসূচি: আগামীকাল মঙ্গলবার মেলার পঞ্চম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে কবি সিকান্দার আবু জাফর: জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কবি নাসির আহমেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান, ড. শিরীণ আখতার এবং কবি বায়তুল্লাহ কাদেরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সন্ধ্যায় রয়েছে কবি কণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।