১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:৩৯

কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ঠুকঠাক শব্দ

  © ফাইল ফটো

বছর ঘুরে আবার দরজায় কড়া নাড়ছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’—রক্তে রাঙানো সেই ভাষা আন্দোলনের মাস শুরু হবে সপ্তাহ দুয়েক পর। আবারও মাসজুড়ে বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। পুরোমাস বইপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর থাকবে বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।

এদিকে, বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নির্দিষ্ট জায়গায় পুরোদমে চলছে স্টল তৈরির প্রস্তুতি। বর্তমানে ওই এলাকায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ঠুকঠাক শব্দ। গ্রন্থমেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য স্বস্তিদায়ক করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। মেলায় এসে বইপ্রেমীরা যেন কোন ভোগান্তিতে না পড়তে হয় সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মেলায় আগত পাঠক, লেখক ও দর্শনার্থীদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেয়ার জন্য নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। এ নিয়ে প্রশাসনের সাথে কর্তৃপক্ষের চলছে দফায় দফায় আলোচনা। মেলাকে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে গঠিত হয়েছে সৃজনশীল কমিটি। আন্তর্জাতিক মানের গ্রন্থমেলার আদলে সাজাতে কাজ করছে স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর।

সর্বোপরী দর্শনার্থীদের জন্য এবার একটি মজার গ্রন্থমেলা উপহার দেয়ার কথা জানালেন বাংলা একাডেমির নব নিযুক্ত মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। সোমবার ‘দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে’ তিনি বলেন ‘মেলায় আগত দর্শনার্থীরা যেন বই কেনার পাশাপাশি মেলায় এসে একটু বসতে পারে ও স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারে সেজন্য এবার স্টলগুলো নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তাদের সন্তানরা যেন এখানে এসে মজা করতে পারে সে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। দর্শনার্থীদের নিরপাত্তার ব্যাপারে প্রশাসনের সাথে আলোচনা চলছে। আজকেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।’

বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে চলছে প্রস্তুতি পর্ব

ইতোমধ্যেই মেলার দু’অংশেই সমান তালে শুরু হয়ে গেছে স্টল নির্মাণের কাজ। সোমবার মেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দি প্রাঙ্গণ সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, স্টল নির্মাণে ব্যস্ত শ্রমিকরা।

বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার মেলার বিন্যাসে কিছু পরিবর্তন এসেছে। মেলার সব জায়গা যেন সমান গুরুত্ব পায় সে কথা বিবেচনায় রেখে এবার মেলার ডিজাইন করা হচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা আছে ৩১ জানুয়ারির আগেই সব স্টল নির্মাণের কাজ শেষ করার।’

স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে গ্রন্থমেলার থিম করা হয়েছে ‘বিজয়’। এবার পুরো বইমেলা থাকবে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের (জিপিএস) আওতায়। জিপিএস সিস্টেমের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা জেনে নিতে পারবেন তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা।

এবারের মেলার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে প্রথমবারের মত ‘লেখক পরিচয়’ মঞ্চ। এতে প্রতিদিন ৫টি মানসম্মত বইয়ের লেখক তাদের বই নিয়ে কথা বলবেন। প্রথম বারের মত দায়িত্ব নেয়া হাবীবুল্লাহ সিরাজীর জন্য সফলভাবে গ্রন্থমেলা সম্পন্ন করা চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অনেকেই।

বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে, গতবারের মত এবারও মেলা বিকাল ৩টায় শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর আর কেউ মেলায় প্রবেশ করতে পারবে না। সমালোচনার মুখে এবার মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভের পাশ ঘেঁষে টিনের প্রাচীর থাকছে না। মেলাপ্রাঙ্গণ থেকে রাতে সহজেই দর্শনার্থীরা অবলোকন করতে পারবে স্বাধীনতা স্তম্ভের আলো।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও চলছে মেলার প্রস্তুতি

কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে দুই ক্যাটাগরিতে প্যাভিলিয়ন থাকবে ২৩টি। আর শিশু কর্নারে শিশু বিষয়ক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য থাকছে ৭৫টি ইউনিট। প্যাভিলিয়ন বরাদ্ধ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-আগামী, অবসর, অনুপম, ঐতিহ্য, তাম্রলিপি, শোভা প্রকাশ, কথাপ্রকাশ, অনন্যা, অন্বেষা, পাঠক সমাবেশ, অন্য প্রকাশ, সময়, মাওলা ব্রাদার্স, কাকলী প্রকাশনী, বাংলা প্রকাশ, উত্স প্রকাশন, অনিন্দ্য প্রকাশ, নালন্দা, জার্নিম্যান বুকস, প্রথমা, পার্ল পাবলিকেশন্স, ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ ও পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স।

২১ জানুয়ারি লটারির মাধ্যমে দেওয়া হবে স্টল বরাদ্ধ। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ মিলিয়ে মোট ৬৯০টি ইউনিট বরাদ্ধ পাবে ৪৫০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে নতুন প্রতিষ্ঠান ১৯টি। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী, আপত্তিকর ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ায় ইউনিভার্সাল একাডেমি ও আদর্শ প্রকাশনী বাদ পড়েছে স্টল বরাদ্ধ পাওয়া থেকে।