২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:২৫

চট্টগ্রামে শেষ প্রহরে জমজমাট লেখক-পাঠক সন্ধ্যা

চট্টগ্রামের বইমেলায় শেষ প্রহরে জমজমাট লেখক-পাঠক সন্ধ্যায় অতিথিরা  © টিডিসি ফটো

অমর একুশে বইমেলার শেষ দিনে শিশু-কিশোর গল্পগ্রন্থ ‘সানবির রংতুলি’র লেখক শেখ আব্দুল্লাহ ইয়াছিনের আয়োজনে লেখক পাঠক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘শিশুর জন্য রঙিন পৃথিবী সাজাই’ শ্লোগানকে সামনে রেখে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম অমর একুশে বইমেলার লেখক আড্ডা প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। 

আড্ডায় শিশু-কিশোর গল্পগ্রন্থ ‘সানবির রংতুলি’ গ্রন্থের লেখক শেখ আব্দুল্লাহ ইয়াছিনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট ও শিশু সাহিত্যিক কামরুল হাসান বাদল। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও শিশু সাহিত্যিক মাহবুব এ রহমান।

এছাড়াও আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন ছড়াকার শফিকুল আলম সবুজ, শিশু কিশোর মাসিক ম্যাগাজিন ‘দিন দুনিয়া’র সহ সম্পাদক আজাদ শেখ, কবি ও লেখক কামরান চৌধুরী, কবি কাজী আমির হোসেন রিপন, বি এফ শাহীন কলেজের শিক্ষক ও উপন্যাসিক রেহানা পারভিন, সমাজকর্মী ও উপন্যাসিক জেবুন্নেসা সুইটি, লেখক কামরুল ইসলাম, লেখক শিপন নাথসহ ‘বইবন্ধু’ দলের সদস্যরা। এ আয়োজনের সহ আয়োজক ছিল বইবন্ধু। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কামরুল হাসান বাদল বলেন, বর্তমানে তরুণদের নিয়ে একটা নেতিবাচক ধারণা আছে। তারা পড়ে না, লেখে না তারা সবসময় মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়; যারা সৃষ্টিশীল তরুণ তারা ভালো কিছু করার চেষ্টা করছে সবসময়। এই যেমন আপনারা এত দূর থেকে বইমেলা এসেছেন এবং এমন আয়োজনে শরিক হয়েছেন অবশ্যই তা প্রশংসনীয়। যতদিন আপনাদের মতো তরুণেরা দেশে আছে ততদিন বাংলাদেশ পথ হারাবে না। 

তিনি বলেন, মানুষ জন্মের পর মানুষ হয়ে উঠে না; তাকে মানুষ হতে হয়, মানুষ হওয়ার চেষ্টা করতে হয়। আর মানুষকে সেই বোধটুকু শিখাতে পারে একজন সাহিত্যিকেরা। আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা সবসময় সৎ থাকবেন। লেখক হওয়ার পূর্ব শর্ত সৎ হওয়া। আপনি যদি সৎ না হতে পারেন তবে ঘুণে ধরা সমাজকে কি শিক্ষা দিবেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাহবুব এ রহমান বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম আমাদের শৈশব কেটেছে মায়ের মুখের ছড়া শুনে। গল্প পড়ে আমরা ভাবতে শিখতাম, আমাদের মনন বিকশিত হতো। একজন শিশু সাহিত্যিককে প্রতিটা শব্দ, অক্ষর, শব্দচয়ন শিশুর মতো ভাবতে হবে। আমি মনে করি প্রত্যেক মানুষের মাঝে একজন শিশু আছে। আর তা জাগাতে পারে একজন শিশু সাহিত্যিক। একজন শিশু সাহিত্যিক শিশুদের ভালো কাজে উৎসাহিত করতে পারেন। 

লেখক পাঠক সন্ধ্যায় বক্তারা শিশুকে বই তুলে দেওয়া ও বইমুখী করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, শিশুদের বিকাশের জন্য ডিভাইসের পরিবর্তে তাদের হাতে বই তুলে দিতে হবে। এখন অনেক শিশুরা ভালো ভাবে কথা বলতে শিখে না, তাদের মাঝে জড়তা কাজ করে। সেজন্য অভিভাবকদের শিশুদের সব কিছু ধরে ধরে শেখাতে হবে, শেখার প্রতি শিশুদের ভালো লাগা, উৎসাহ তৈরি করতে হবে। আর সমাজের এই কাজটি করতে হবে শিশু সাহিত্যিকদের। শিশু সাহিত্যিকেরা এতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও অভিমত বক্তাদের।

প্রসঙ্গত, গতবছর বইমেলায় অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনী হতে গল্পগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। মেলায় বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য ড. শিরীন আক্তার চৌধুরী।

শিশু-কিশোর গল্পগ্রন্থ ‘সানবির রংতুলি’তে শিশুদের হীনমন্যতা, বাবা-মা কিংবা অভিভাবকদের শিশুদের ইচ্ছে বা চাওয়া-পাওয়াকে চাপিয়ে সন্তানদের উপর তাদের ইচ্ছে ছাপিয়ে দেওয়ার অবশ্যম্ভাবী ফলের বিপরীতে শিশুদের প্রতিক্রিয়া এবং তার থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে সাজানো হয়েছে গল্পগ্রন্থটি। তরুণ লেখক শেখ আব্দুল্লাহ ইয়াছিন তার বইটিতে দেখিয়েছেন, এসব থেকে বেরিয়ে এসে কিভাবে সন্তান ও অভিভাবকের মাঝে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গঠন করা যায়-তা নিয়ে।