আলোর পথে নীরব পথ প্রদর্শক রাবিপ্রবির লাইব্রেরি
পৃথিবীতে জ্ঞান অর্জনের শ্রেষ্ঠ স্থান হিসেবে লাইব্রেরি শীর্ষে। পিন-পতন নীরবতা পালনের মাধ্যমে জ্ঞানের সমুদ্রে প্রবাহমান ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার শব্দ হয়তো এখানে নেই, তবে জ্ঞানের গভীরতায় ডুবে গিয়ে বহুপথ পাড়ি দিয়ে কিছু মুহূর্তের জন্য জ্ঞানের সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়ার তীব্র আকুলতা এখানে বহমান।
পৃথিবীর সমস্ত শব্দ গুচ্ছ যেন এখানে নকশী কাঁথার মাঠের ন্যায় একটি আরেকটির সাথে জুড়ে আছে। সৃষ্টিকর্তা আমাদের যা কিছু দিয়েছেন তার মধ্যে শব্দই কেবল সব কিছুকে খুব যত্ন করে আলাদা করে দেয়। শব্দের পিরামিড তৈরী করেই তো আমরা বলতে শিখি, লিখতে শিখি, আর গড়ে তুলতে পারি জ্ঞনের ভান্ডার।
জ্ঞান অর্জনের জন্য রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি যেন হঠাৎ কোন বসতিহীন বনের মাঝে পাহাড়ী প্রবাহমান স্রোতধারার ঝর্ণার মতো, যার প্রবাহমান শব্দে মুখরিত হয় চারপাশ।
মূল শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির অবস্থিত। কিন্তু ভৌগলিক পরিবেশ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতুলতার কারণে আশেপাশের বই-খাতার দোকানতো দূরের কথা মাঝে মাঝে ঠিকঠাক যানবাহন পাওয়াটাই দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। সেখানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির শব্দের তরঙ্গ ও জ্ঞানের আলো কতদূর আলোকিত করতে পারে তার চিন্তা কেবল প্রখর মস্তিষ্কেই উপলব্ধি করা সম্ভব।
মাত্র দুটি বিভাগ নিয়ে শুরু হওয়া রাবিপ্রবির এখন পাঁচটি বিভাগ। বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে লাইব্রেরির বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। প্রায় তিন হাজারেরও অধিক বই নিয়ে জ্ঞান পিপাসুদের প্রতিনিয়ত ডেকে যায় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরিতে কেবল বিদ্যার্থীরা নয়, বরং অবসরে দেশের খবর, নিজেদের পছন্দের সাহিত্য, গল্প, ম্যাগাজিন পড়তে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ নিয়মিত ভিড় করেন।
আরও পড়ুন: ৪৭ বছরের লাইব্রেরি যে কারণে বিক্রি করছেন স্কুল শিক্ষক গোকুল
অন্যান্য বইয়ের পাশাপাশি রাবিপ্রবির লাইব্রেরিতে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ সহ আরো তিনটি বিভাগের বইয়ের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টির শুরু থেকে একে অন্যের বন্ধুত্বের বন্ধনের মতো পাশে থাকা সিএসই ও ম্যানেজমেন্টে বিভাগের পরিবার যে আজ অনেকটা বড় তার ধারণা বুক সেল্ফের বইয়ের সংখ্যা দেখেই বোঝা যায়।
লাইব্রেরির নতুন সংযোজন হিসেবে যুক্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধু-ই-রির্সোস সেন্টার। যেখানে শিক্ষার্থীবৃন্দ গবেষণার কাজে বিনা খরচে ইন্টারনেট সেবা পেয়ে থাকেন। মোট ৬ টি কম্পিউটারের সন্ময়ে সদ্য গড়ে ওঠা এই ডিজিটাল প্লাটফর্ম ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শিক্ষার্থীদের কাছে। এছাড়াও এখানে স্থান পেয়েছে প্রক্তন শিক্ষার্থীদের গবেষণাপত্র।
লাইব্রেরির কার্ড ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সামনে ডিজিটাল লাইব্রেরি হিসেবে গড়ে উঠতে যাচ্ছে এই লাইব্রেরি। ছোট্ট পরিসরে গড়ে ওঠা এই লাইব্রেরির ধারণ ক্ষমতা যদিও কম, কিন্তু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় ধারণ ক্ষমতা মানিয়ে নেওয়ার মতো।
একটি লাইব্রেরিতে বইয়ের পাতায় থাকা শব্দ,শব্দের প্রতীকি, মাহাত্ব যেন বুক সেল্ফের স্তরের পর স্তর সাজিয়ে রাখা বিশেষ কোন গল্পের বইয়ের মতো, যেটা বাকী সেল্ফের চেয়ে একটু আলাদা করে জানান দেয় মেঘ রৌদ্দুর এই শ্রাবণ মাসে বৃষ্টিরভেজা অলস সময়ে গা এড়িয়ে নীরবে চোখ দিয়ে পড়া মনের সে কবিতা। শব্দের গুনগান আর অর্থ জানিয়ে দেয় হয়তো কোলাহলের এই শহরে নীরাবতায় পার করা জ্ঞানের গভীরতায় রাবিপ্রবির লাইব্রেরির ধূলো পড়া সে বইয়ের গল্প।
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার সময় তার। যুদ্ধ তো আগে হতো, এখনো হয়! প্রযুক্তি বনাম শব্দের খেলা নামক যুদ্ধ। প্রযুক্তির এই যুগে গুগল সার্চে সব অঙ্কের সমীকরণ হয়তো মিলে যায়, তবুও একখানা বইয়ের মলাট থেকে যায় অনন্ত যৌবন, পছন্দের প্রিয় সে মানুষের মতো! যার স্পর্শ হয়তো অন্ধকারকে বদলে দিয়ে আলোর উজ্জ্বলতায় জীবন পাল্টে দেয়।
রাবিপ্রবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি হয়তো নিঃশব্দে বয়ে যাওয়া নদীর মতো যার উপরের অথৈই পানির আড়ালে নিচে জমে থাকে শিক্ষার প্রকৃত নুড়ি। সুশিক্ষা জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। স্বশিক্ষিত জাতি দেশ গঠনে ভূমিকা রাখে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিক্ষায় এগিয়ে যাক রাবিপ্রবি। সুশিক্ষায় বেড়ে উঠুক রাবিপ্রবিয়ানরা। ৬৪ একর ছাড়িয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির আলো ছড়িয়ে পড়ুক শিক্ষিত জাতি গঠনে।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়