একুশে বই মেলা

ধোঁয়াশা সরিয়ে স্বপ্ন দেখাবে রাবি শিক্ষার্থীদের সাত বই

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

প্রতীক্ষার প্রহর শেষে বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) শুরু হচ্ছে দেশের অন্যতম উৎসব ‘অমর একুশে বই মেলা-২১। করোনা মহামারীর কারণে এবছর নির্ধারিত সময়ে মেলা শুরু করা সম্ভব না হলেও সকল প্রতিকূলতা শেষে আজ তা উদ্বোধন করবে বাংলা একাডেমি। রকমারি বইয়ে পাঠকদের তৃপ্ত করতে এবার মেলায় আসছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত শিক্ষার্থীর বই। যেগুলো পাঠককে ধোঁয়াশার চাদর থেকে বের করে স্বপ্ন জয়ের দিকে করবে উদ্ভাসিত এমন প্রত্যাশা তরুণ এই লেখকদের।আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই কি থাকছে সেই বইগুলোতে...

ধোঁয়াশা

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জাকিউল অন্তু লিখেছেন উপন্যাস ‘ধোঁয়াশা’। বইটি আসছে ভূমি প্রকাশ প্রকাশন থেকে। এই ‘ধোঁয়াশা’ আসলে একটা শহরের নাম। এই শহরের সবাই কী ধোঁয়া ভালোবাসে?  মোটেই না। ধূমপান খুব কড়াভাবে নিষিদ্ধ এই শহরে। ধোঁয়াশা শহরের সব যন্ত্রপাতির চালিকাশক্তি হলো বাষ্পীয়  ইঞ্জিন। স্টিম ইঞ্জিনের ব্যাপক ব্যবহারের কারণেই শহরটা হয়তো এরকম নাম পেয়েছে। এই শহর কোলাহলে মুখরিত থাকে সারাক্ষণ।

দ্বিতীয় প্রহর

একজন প্রমিথিউস কেন দগ্ধ হতে যাবেন? কেন আলোর মশাল জ্বালাতে গিয়ে নিজেকে বিপন্ন করবেন? উত্তর আছে। একজন কবির দিকে তাকালে এমন উত্তর পাওয়া যাবে। ‘দ্বিতীয় প্রহর’ নামের এমনই একটি কাব্যগ্রন্থ লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার শামীম। কাব্যগ্রন্থটি আসছে অনুভব প্রকাশন থেকে।

শাহরিয়ার শামীম জানান, দ্বিতীয় প্রহর কাব্যে কিছু ব্যতিক্রমী চিন্তা চেতনা পাঠককে ভাবাবে, নির্যাস নিংড়ানোর পর ভালো লাগবে।

শিকলে বাঁধা আর্তস্বর

আমাদের এমন কিছু ব্যথা থাকে; সমাজকে বোঝাতে পারি না। কিছু সমস্যা আমরা নিজেরাই তৈরি করি নিজের অজান্তেই আবার কিছু আমাদেরই পরম প্রিয়জনের সৃষ্টি। আবার কিছু সমাজের শান্তিকামী নামধারী প্রতিনিধিদের ইচ্ছাকৃত সৃষ্টি। আধুনিক মানুষের ব্যথাগুলো আপেক্ষিক। সে কেন কাঁদে, কেন চুপ থাকে, কেন হাসে সেটির পরিমাপ করতে পারেনা। আধুনিক যন্ত্রণাগুলো অধিকাংশই মনস্তাত্ত্বিক। আমাদের মনে চলে নানারকম মনস্তাত্ত্বিক অনুরণন। পাশে থাকি, পাশে চলি তবুও যেন কেউ কারো না। কখনো অপরিচিতদের মনে হয় অনেক চেনা আবার কখনো পরিচিতদেরও মনে হয় বড্ড অচেনা। ঠিক এমনই গল্প নিয়ে প্রথম গল্পগ্রন্থ লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল মৃধা। বইয়ের নাম ‘শিকলে বাঁধা আর্তস্বর’। বইটি আসছে কালের রোদ্দুর প্রকাশন থেকে।

বিবেকের কাঠগড়া

‘বিবেকের কাঠগড়া’ মূলত একটি কাব্যগ্রন্থ। গ্রন্থটি লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদ সাকী। বইটি আসছে শব্দবুনন প্রকাশন থেকে। বইটি সম্পর্কে লেখক, একজন সাধারণ মানুষের চোখে দেখা জীবন দর্শন থেকেই নানান সময়ে সমাজের নানান সমস্যাবলী নিয়ে লেখা কবিতাগুলোই মূলত জমতে জমতে একটি পান্ডুলিপি তৈরি হয়েছে। এই বইটিতে মূলত সমাজ জীবনের চিত্র, ইহকাল, পরকাল, আধ্যাত্মিক দর্শন সহ জীবনবোধ নিয়ে লেখা কবিতাগুলো স্থান পেয়েছে।

রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

নব-সাহিত্য প্রকাশনীর নির্মিত ‘রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ’ একটি যৌথ কাব্যগ্রন্থ। সারা দেশের ১২ জন নির্বাচিত কবির ১০ টি করে মোট ১২০ টি কবিতার সংকলন এটি। এতে রাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান মিজানের ১০ টি কবিতা স্থান পেয়েছে।

মিজান জানান, বইয়ের নামের সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপট স্থান পেয়েছে বইটিতে। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাতির প্রতি কৃতিত্বগাথা অবদান, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মর্মকথা, ভাষা আন্দোলন ও নিরীহ বাঙ্গালীর ইতিহাস, মানবতাবোধ, প্রকৃতি প্রেম ও সামাজিক অসঙ্গতিগুলো তাঁর কবিতায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি।

প্রিয় পারমিতা

বইয়ের নাম ‘প্রিয় পারমিতা’। লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সোহানা হোসেন নিশি। বইটি আসছে সতীর্থ প্রকাশন থেকে। পারমিতা আর অমিতাভো। তুমুল বন্ধুতা দুজনের, দুজনই রাবিয়ান। পারমিতার ভাবনা জুড়ে পড়াশোনা আর অমিতাভোর দেশ, সমাজ, সময়, স্রষ্টা নিয়ে রয়েছে উপচে পড়া জ্ঞানগরিমা। অমিতাভোর প্রতি মুগ্ধতায় পারমিতাও একসময় হয়ে ওঠেন অমিতাভোর এসব ভাবনার অংশীদার। পড়াশোনার পার্ট চুকিয়ে এক যুগ আগে ওরা রাবি ছেড়েছে। পারমিতা বিদেশ বিভুঁইয়ে পড়াচ্ছেন, অমিতাভো ওদের বিশ্ববিদ্যালয়েরই দর্শন বিভাগের অধ্যাপক। কালক্ষেপণে দুজনের ভীষণ দূরত্ব বেড়েছে। 'প্রিয় পারমিতা'র গল্প মূলত এভাবেই এগিয়েছে।

স্বপ্নডানা

শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মোটিভেশনাল উপন্যাস লিখেছেন রাবির এগ্রনমী ও এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শাহীন শাহ। উপন্যাসটির নাম ‘স্বপ্নডানা’। উপন্যাসটি আসছে পাপড়ি প্রকাশন থেকে।

উপন্যাসটি সম্পর্কে লেখক জানান, যেসব শিক্ষার্থী অন্ধকারে ডুবে আছে, সামনে তাদের পাহাড় সম প্রতিবন্ধকতা।  সেসব শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করতে লেখক আইনুল নামে একজন শিক্ষার্থীকে পাঠকের সামনে দাঁড় করিয়েছেন লেখক। এ উপন্যাসে মূল চরিত্র আইনুল, সামির, মিনু আপা, মনজু স্যারের বাইরে সাদা কাগজে কালো অক্ষরে লেখা বইগুলি যেন পরশ পাথর হয়ে উঠেছে। বইয়ের সংস্পর্শে বদলে গিয়েছে সবার মন। হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, রহস্য ও রোমান্সের এই গল্পটি পাঠ করে পাঠক হৃদয় হতাশা ও ভয় কাটিয়ে নতুন স্বপ্নে বিভোর হবে এবং স্বপ্নপূরণে আত্মপ্রত্যয়ি হবে।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলামের সম্পাদনায় বইমেলায় আসছে কালের রোদ্দুর প্রকাশনীর একটি গল্পের বই এবং একটি কাব্যগ্রন্থ। পাশাপাশি বইমেলায় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অনিক সরকারের অঙ্কন করা ভিন্নধারা কমিক্স প্রকাশনার অমর্ষ-প্রোলোগ নামের একটি কমিক্স আসবে।


সর্বশেষ সংবাদ