৩৬ কোটি পাঠ্যবই রাখতে একটি গুদামও নেই
এক দশকের বেশি সময় ধরে বছরের প্রথম দিনই বিনামূল্যের ৩৫ থেকে ৩৬ কোটি কপি পাঠ্যবই যাচ্ছে দেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থীর হাতে। প্রতিবছর এক হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করে পাঠ্যবই দেওয়া হচ্ছে ঠিকই। তবে ৩৬ কোটি কপি পাঠ্যবই রাখার জন্য গুদাম বা সংরক্ষণের জায়গা নেই একটিও! প্রতিবছর প্রায় তিন মাস আগে দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বই পাঠানো শুরু হলেও সেখানে নেই বই রাখার কোনো ব্যবস্থা। গুদাম না থাকায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিবছরই নষ্ট হচ্ছে বিপুল সংখ্যক পাঠ্যবই।
শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, পাঠ্যবই রাখার সঙ্কট উত্তরণে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এ সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ‘পরীক্ষা কেন্দ্র ও সংরক্ষণাগার’ নির্মাণের একটি উদ্যোগও ঝুলে আছে। অথচ পাঠ্যবই জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সারাদেশের স্কুলে বিতরণের আগে চার থেকে পাঁচ মাস জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংরক্ষণ করে রাখার কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে কোনমতে জোড়াতালি দিয়ে প্রতিবছর চলছে এ ব্যবস্থা।
প্রতিবছর আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে সঙ্কট শুরু হলে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান জটিলতার কথা। তারা জানানোর পরই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের একটি তাগাদা দুই মন্ত্রণালয় অনুভব করলেও জানুয়ারিতে বই বিতরণ হয়ে গেলে আর থাকছে না সেই আগ্রহ।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, এই সমস্যার সমাধান হলে একটি বড় কাজ হয়। কারণ প্রতিবছর এই সমস্যায় পড়তে হয় সারাদেশের শিক্ষা কর্মকর্তা-শিক্ষকদের। দীর্ঘ সময় বই সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। জানুয়ারির প্রথম দিন বই বিতরণের আগে পুরো সময় বই রাখার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সে স্থান নেই। সরকারও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। একটি উদ্যোগও আছে। যেখানে জেলা-উপজেলায় পরীক্ষা কেন্দ্র ও সংরক্ষণাগার করার এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সমস্যাটির সমাধান হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
এনসিটিবির আরেক কর্মকর্তারা বলছিলেন, সরকারের বিনামূল্যের ৩৬ কোটি কপি পাঠ্যবই রাখার জন্য এনসিটিবি ও মাউশি’র নিজস্ব কোনো সংরক্ষণাগার নেই। ফলে বিতরণের এলাকার বইগুলো দুই একটি স্থানে জায়গায় হয় কোনো মতে। ফলে পাঠ্যপুস্তক সংরক্ষণ নিয়ে বড় ধরনের সঙ্কট রয়েছে এনসিটিবির। অথচ প্রতিবছর বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তকের চাহিদা বাড়ছে, ছাপার পরিধিও বাড়ছে।