চৌর্যবৃত্তি— যে কারণে একাডেমিক জগতে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:১৫ AM , আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:১৫ AM
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক ‘গবেষণামূলক নিবন্ধে’ চৌর্যবৃত্তির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ ঘটনায় শাস্তির সুপারিশ করতে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গবেষণায় হুবহু অন্যের লেখা কপি করাকে একাডেমিক জগতে ‘প্লেইজারিজম’ বা ‘চৌর্যবৃত্তি’ বা ‘চুরি’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। সম্প্রতি এ বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বিষয়টি নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন।
একাডেমিক জগতে ‘প্লেইজারিজম’ একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। পাশ্চাত্যের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এই ধরণের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী, অন্য কারো কাজ বা লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেওয়াকে ‘প্লেইজারিজম’ জম বলা হয়। এটা ইচ্ছাকৃত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিংবা অনিচ্ছাকৃতও হতে পারে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এ কাজ করে তাহলে সেটি শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে বলা আছে, ‘প্লেইজারিজম’ একটি গুরুতর অ্যাকাডেমিক অপরাধ। কেউ যদি এই অভিযোগে অভিযুক্ত হয়, তাহলে সে শুধু অকৃতকার্যই হবে না, তাকে বহিষ্কারও করা হতে পারে।
পশ্চিমের যে কোন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্লেইজারিজমের জন্য গুরুতর শাস্তির বিধান আছে।
ঢাবির অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন, যিনি নিউজিল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তিনি বলেন, তিনি যখন পিএইচডি করতে গিয়েছিলেন তখন গবেষণাপত্র লেখার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, আমি যদি সরাসরি কারো কোন বাক্য ব্যবহার করি তাহলে অবশ্যই কোটেশন মার্ক ব্যবহার করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকে ভালো একাডেমিক চর্চা থাকলে ‘প্লেইজারিজম’ এড়ানো সম্ভব। গবেষকরা মনে করেন, পরীক্ষক যাতে বুঝতে না পারে সেজন্য অন্যের লেখা থেকে ভাষা পরিবর্তন করে দিলেই ‘প্লেইজারিজম’ এড়ানো যায় না।
‘প্লেইজারিজম’ এড়ানোর অর্থ হচ্ছে, নিজের কাজ বা লেখাকে ভালো করার জন্য অ্যাকাডেমিক দক্ষতা দেখানো।
ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড মনে করে, প্লেইজারিজমের ফলে একটি প্রতিষ্ঠানের মান ক্ষুণ্ণ হয। তাছাড়া সে প্রতিষ্ঠান যে ডিগ্রি প্রদান করে সেটিও প্রশ্নের মুখে পড়ে।
ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, প্লেইজারিজমের ফলে একাডেমিক সততার গুরুতর লঙ্ঘন হয়। অন্যের কাজকে নিজের বলে চালিয়ে দেওয়া শুধু একাডেমিক দীনতাই নয়, এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শেখার প্রক্রিয়ায় গলদ আছে। অর্থাৎ তিনি শিখতে ব্যর্থ হয়েছেন।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষায় প্লেইজারিজমের বিষয়টি গুরুতর অন্যায়। এ ধরণের বিষয়গুলো তদন্ত করা হয়।
প্লেইজারিজমের অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরীক্ষায় নম্বর কাটা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার পর্যন্ত করা হয়।
প্লেইজারিজম যাচাই করার জন্য এক ধরণের সফটওয়্যার রয়েছে যেটি বিশ্বজুড়ে ব্যবহার করা হয়। কয়েকবছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই সফটওয়্যার কিনেছে।
ঢাবির অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন বলেন, আমার কাছে যখন কোন রিসার্চ পেপার আসে আমি তখন সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে রাখা সফটওয়্যারে পাঠিয়ে দেই চেক করার জন্য। টেকনিশিয়ান সেটি চেক করে আমাকে জানিয়ে দেয় যে সেখানে কত পার্সেন্ট প্লেইজারিজম রয়েছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা