বুক রিভিউ: নাসরিন খন্দকারের ‘পুতুলখেলার রাজনীতি’
আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে গ্রামে প্রতিটি মেয়ে শিশুর শৈশব কেটেছে নিজ হাতে বানানো কাপড়ের পুতুলের সাথে। সেই পুতুলের বিয়ে, সংসার, পোশাক নিয়ে ছিল নিত্যকার বিনোদনের নিজস্বতা চর্চা।
সেখান থেকে, বর্তমান সময়ে মেয়ে শিশু থেকে শুরু করে অনেক তরুণীর অত্যাধিক পছন্দের পুতুল হয়ে গেলো এই ‘বারবি ডল’। এই পুতুলেরও যে একটা ক্ষমতার, ভোগবাদের কিংবা পুরুষতান্ত্রিকতার ইতিহাস থাকতে পারে, সেটা কি কখনো ভেবে দেখেছেন? এই বইয়ের আলোকে দেখানো হয়, বারবি কেবলমাত্র একটা খেলনার উপাদান না, বরং এটি গভীরভাবে ভোগবাদের দালাল হিসাবে এর ক্রেতাকে নানা উপায়ে বারবার ক্রয় করে।
১৯৪৫ সালের মার্কিন জাতীয়তাবাদী চেতনার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া ‘নরম্যান’ এবং ‘নরমা’র আদর্শ থেকে পরবর্তীতে বিজ্ঞাপন, বিনোদন শিল্পের কল্যাণে নারীর শরীরের আদর্শ বদলে যেতে থাকে তার একটা চমৎকার ধারাবাহিক বর্ণনা এই বইতে পাওয়া যায়।
বর্তমান সময়ে বারবি একটা নিমজ্জিত আইকনিক স্বত্বা হিসাবে ব্যাপকভাবে ভোগবাদের এজেন্ট হিসাবে কর্মক্ষম। কারণ বারবি একদিকে পেশাজীবী, প্রচন্ড কর্মক্ষম, স্বাধীনচেতা আবার অন্যদিকে দিকে ব্যাপক যৌনাবেদন সৃষ্টকারী, কোমল, নান্দনিক স্বভাবের। চরিত্রের এই বৈপরীত্য আধুনিক নারীস্বত্তাকে স্বাধীনতার নামে পুরুষের নিত্য আবেদনের খোরাকিতে পরিণত করছে।
এই কারণে জিয়াউদ্দিন সরদার হয়তো বলেছিলেন, ‘গত কয়েক শতকের নারী যদি বন্দী হয় রান্নাঘরের বন্দীশালায়, এই শতকের নারী বন্দী তার নিজ দেহের কারাগারে’। নিজের শরীরকে নিজের মত সাজানোর প্রবল ইচ্ছা আসলেই কি নারীর স্বাধীনচেতাকে প্রকাশ করে নাকি আধুনিক পুরুষালি বাসনার এক লুকায়িত ইচ্ছাকে পূর্ণ করে, সেটাই এই প্রবন্ধে পুতুলখেলার রাজনীতি হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
খেলারছলেও যে পুঁজিবাদ তার কর্তৃত্ব এখনো ব্যাপকভাবে ক্রিয়াশীল রেখেছে, তার একটা অসাধারণ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এই বইতে উঠে এসেছে।
বারবি কোন বাচ্চাদের খেলনা পুতুল হয়েও কিভাবে এটি যথেষ্ট এডাল্ট, আবেদনীয় এক বিশেষ নারীত্বের প্রতিক হিসাবে কর্তৃত্ববান এই প্রবন্ধে সেটিই আলোচিত হয়েছে।
লেখক: শিক্ষার্থী নৃবিজ্ঞান বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়