নব্বই দশকের গল্পে লেখা ‘তুপা’ নিয়ে আসছেন মামুন
অমর একুশে বইমেলায় উপন্যাস ‘তুপা’ নিয়ে হাজির হচ্ছেন এম মামুন হোসেন। উপন্যাসে তুপা, হাসান, সজিবের গল্পের সময়টি সেই ৯০ দশকের। যখন সম্পর্কগুলো খুব সহজ-সরল। এখনকার মত এত বেশি টেকনোলজি নির্ভর নয়।
সময়টা আজ থেকে ২০ বছর আগে। খুব কী বেশি আগে? সে সময়ের সঙ্গে এই সময়ের হিসাবনিকাশ মেলাতে গেলেই বড্ড গন্ডগোল বেঁধে যায়। ৯০ দশকেও আমাদের জীবন কতো সহজ-সরল। মোবাইল, ল্যাপটপ, ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ইমো এসবের এতো দৌরাত্ম ছিলো না। সামাজিক এসব যোগাযোগ মাধ্যম সহজ-সরল সম্পর্কগুলো জটিল করেছে। কাছে আনেনি বরং আরও দূরে সরিয়ে নিয়েছে। কারো কারো এ নিয়ে ঘোর আপত্তি থাকতে পারে। সবাই ব্যস্ত ভার্চুয়াল জগতের লাইক, লাফ, এ্যাংরিতে।
বইটির প্রকাশক ও অনিন্দ্য প্রকাশ-এর স্বত্তাধিকারী আফজাল হোসেন বলেন, প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ লেখকদের সুযোগ করে দিতে অনিন্দ্য প্রকাশ সবসময় চেষ্টা করে। একজন লেখক তৈরি করতে একজন প্রকাশকের বিনিয়োগ করতে হয়। আর লেখককে টিকে থাকতে হলে তাঁর লেখনির শক্তিতে পাঠকপ্রিয়তা পেতে হয়। এম মামুন হোসেন-এর প্রথম উপন্যাস ‘তুপা’ নব্বই দশকের পরিবার, বন্ধু, পরিজনের সঙ্গে সহজ-সরল সম্পর্কগুলো প্রাধান্য পেয়েছে। লেখক হিসেবে আমি তাঁর সাফল্য কামনা করছি।
‘তুপা’ থেকে কিছু চম্বুক অংশ...‘রাস্তার পান সিগারেটের দোকান থেকে দুটো বেনসন অ্যান্ড হ্যাজেজ নিয়ে একটি ধরালো হাসান। আরেকটি পকেটে রেখে ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে লাগল। দোকানদার সিগারেটের দাম বেশি রেখেছে। ঘোষণা দিয়ে এখনো দাম বাড়ানো হয়নি। কিন্তু বাড়তি টাকা নেওয়া শুরু হয়েছে। আগে থেকেই ধূমাখোরদের সইয়ে নিচ্ছে। নতুন আরেকটি বাজেট চলে এলো। হুঁ, বাজেট এলেই এমনটা হয়।’
‘সজীবের রুমে দুটি চৌকি পাতা। চৌকির হাল খুব বেশি ভালো না। নৌকার মতো কাঁপে। শোয়ার সময়ে বেশ কসরত করতে হয়। ঢাকায় এসে নয়াবাজার থেকে চৌকিটা কিনেছিলো সজীব। ওর সঙ্গে হাসানও গিয়েছিল। তাঁতিবাজার মোড় থেকে নয়াবাজার যেতেই দোকানগুলো। ঢাকার অন্য এলাকায় কাঠের আসবাব বিক্রির অনেক দোকান আছে। কিন্তু চৌকি কিনতে নয়াবাজার যেতে হবে। মেস জীবনে এই চৌকির বেশ কদর। ঢাকায় মেসে যারা থাকেন তারাই এই চৌকির বড়ো কাস্টমার। চৌকি আর খাটের মধ্যে বড়ো পার্থক্য আছে। চৌকি হচ্ছে চার বা ছয় পায়ে দাঁড়ানো নকশাবিহীন সমান্তরাল কাঠের তৈরি। দামও কম।
একটা চৌকিতে রাকিব আর অন্যটায় সজীব থাকে। ঘরে একটা আলনা আছে। মাথার ওপর একটা সিলিংফ্যান। তবে ফ্যানটায় বাতাসের চেয়ে শব্দ হয় বেশি। সজীবের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায়। তিন ভাইবোনের মধ্যে সজীব সবার বড়ো।’
‘অদিতি হাসানকে পছন্দ করে। ইনিয়ে বিনিয়ে অনেকবার তা বোঝানোর চেষ্টা করেছে। হাসান সবই বোঝে। অদিতি সুন্দরী। ভরাট শরীর। উপচে পরা যৌবন। যে কোনো যুবকের হৃদয়ের ষ্পন্দন বন্ধ করার মতো শারীরিক গঠন। কিন্তু হাসানের ভালো লাগে না। পিড়িতের পেত্মীও সুন্দর। যখনি অদিতিকে দেখে তার মনে তৃষ্ণা জাগে। সেই তৃষ্ণা নগ্নতার। তাকে নিয়ে কয়েকবার রাজ্যের সব বাজে বাজে চিন্তা এসেছে। একবার তো অদিতিকে নিয়ে রাতে স্বপ্ন-ই দেখে ফেলেছে হাসান। কী সব হিজিবিজি। অবশ্য সেসব অনেক দিন আগের কথা।
সকালে ঘুম থেকে উঠে তো ভেবেছিলো বিছানায় হিসু করে দিয়েছে। কী হলো, কী হলো ভাবতে ভাবতেই গেলো সারাদিন। লজ্জায় কাউকে বলতে তো পারছে না। কী করবে? কলেজে যাবার সময় ফুলবাড়িয়ায় সুন্দরবন স্কোয়ার মার্কেটের সামনে একজন কী সব ছবি দেখিয়ে ওষুধ বিক্রি করছিলো। লোকজন সবাই গোল করে দাড়িয়ে আছে। বিক্রেতার হাতে থাকা একটি অ্যালবাম থেকে একের পর এক ছবি দেখিয়ে বর্ণনা দিচ্ছে। একটু দূরে দাড়িয়ে সেসব শুনতে থাকে হাসান। খুব ভয় পাচ্ছিলো। এখনো কানে বাজে ‘আগা চিকন, গোড়া মোটা’। পূর্ণ সুখ দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ঘন ঘন স্বপ্নদোষ।’ সব কিছু মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। একটি শব্দ তার মগজে ঢুকে গিয়েছিলো স্বপ্নদোষ। এটা আবার কী? স্বপ্ন তো স্বপ্ন-ই। রাতে স্বপ্ন দেখলে এতে দোষের কী? এ নিয়ে একা একা গবেষণা করেও কিছু উদ্ধার করতে পারেনি। এক সময় কলেজের বন্ধুদের কাছ থেকেই জানা হলো। এমন কতো ঘটনা সেই কিশোর বয়সের। এগুলো ভেবে হাসানের নিজেরই লজ্জা লাগে। ছিঃ এসব কী ভাবছে? জয়নাল সাহেবকে ঢুকতে দেখে হাসানের ভাবনায় ছেদ পড়লো। হাত উচিয়ে সালাম দিল হাসান, আসসালমু আলাইকুম।’
এম মামুন হোসেন পেশায় সাংবাদিক। পৈতিৃক ভিটে বিক্রমপুর (মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা) হলেও জন্ম ও বেড়ে উঠেছেন পুরান ঢাকায়। তাই পুরান ঢাকার প্রতিটি অলিগলিতে রয়েছে তার শেকড় পোতা। উত্তরাধিকার সূত্রেই তার আগ্রহের বিষয় ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এম মামুন হোসেন একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও এমবিএ করেছেন। অ্যাকাউন্টিং অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্য। দীর্ঘ এক যুগ ধরে সাংবাদিকতা করা এম মামুন হোসেন নানান বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য পেয়েছেন স্বীকৃতি। সাংবাদিকতায় তার আগ্রহের বিষয় হচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য, গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ, মানবাধিকার, স্থানীয় সরকার ও সুশাসন। ভারত, দুবাই, ডেনমার্ক, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন।
এম মামুন হোসেনর প্রকাশিত প্রথম বই ‘নিজের শব বহন’ (কবিতা)। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত এ বইটির জন্য ‘দিগন্ত ধারা সাহিত্য পুরস্কার-২০১৯’ পান তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নানা পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে—
- ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড-২০১৭
- ডিআরইউ-গ্রামীণফোন রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড-২০১৪
- শিক্ষাবিষয়ক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার-২০১১
- ইউএনডিপি অ্যাওয়ার্ড-২০১৪
- ল্যাপ্রসি মিশন অ্যাওয়ার্ড-২০১৪
- দ্যা ফ্রেড হলোস ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড-২০১৪
- ডিআরইউ লেখক সম্মাননা-২০১৯