০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:১৯

যে কারণে কোনো পুরস্কার গ্রহণ করতেন না বদরুদ্দীন উমর

বদরুদ্দীন উমর  © ফাইল ছবি

দেশের প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী, লেখক-গবেষক ও ইতিহাসবিদ বদরুদ্দীন উমর মারা গেছেন আজ রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর)। তাঁর মৃত্যুতে জাতি হারাল এক অকৃত্রিম চিন্তক ও সত্যনিষ্ঠ ইতিহাসলেখককে। আমৃত্যু তিনি দেশের রাজনীতি, ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধসহ নানা প্রসঙ্গে অকপটে মত প্রকাশ করেছেন। লেখালেখি ও গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একাধিকবার রাষ্ট্রীয় পদক ও পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। তবে জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি কোনো পুরস্কার গ্রহণ করেননি। এমনকি এ বছর (২০২৫) স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেও তিনি তা নেননি।

এক  বিবৃতিতে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাখান করে বলেছিলেন, “১৯৭৩ সাল থেকে আমাকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমি সেগুলোর কোনোটিই গ্রহণ করিনি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ, কিন্তু তাদের দেওয়া এই পুরস্কারও গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

পুরস্কার গ্রহণ না করার কারণ বিষয়ে বদরুদ্দীন উমর তাঁর যুক্তি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছিলেন বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে। ‘প্রতিধ্বনি’ নামের এক ম্যাগাজিনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন “আমি পুরস্কার নেই না এ কারণে যে, প্রথমত, আমি যে লেখালেখি করি—এটা আমি নিজের আন্তরিক তাগিদ থেকে করি। এর জন্য আমাকে কেউ পুরস্কার দেবে, এটা আমার ভালো লাগে না। একজন লেখকের আসল পুরস্কার হলো—মানুষ তার লেখা পড়বে, আলোচনা করবে এবং উপকৃত হবে।”

তিনি আরও বলেন, “পুরস্কার সাধারণত দেওয়া হয় লেখকদের চিন্তাকে সীমাবদ্ধ করার জন্য। ধনিকশ্রেণি কিংবা রাষ্ট্র এসব পুরস্কার দেয় লেখককে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখতে। একবার পুরস্কার নিলে আবার অন্য পুরস্কারের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়, আর সেটা লেখালেখির স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।”

নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বদরুদ্দীন উমর পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা লেখক মহাশ্বেতা দেবীর উদাহরণও টেনেছিলেন। তিনি বলেন, “মহাশ্বেতা দেবী প্রথমে পুরস্কার না নেওয়ার অবস্থান নিলেও পরে নোবেল থেকে শুরু করে ম্যাগসেসে পুরস্কার নিয়েছেন। এর ফলে তাঁর লেখার মান নষ্ট হয়েছে এবং তিনি রাজনৈতিকভাবে আপসহীনতা হারিয়েছেন।”

বদরুদ্দীন উমরের মতে, লেখককে মুক্ত থাকতে হলে পুরস্কার প্রত্যাখ্যানই প্রকৃত শক্তি ও সততার বহিঃপ্রকাশ।