০৬ মার্চ ২০১৯, ১৬:৩৫

আদিত্য পিয়াসের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যখন থামবে কোলাহল’

কবির সাথে এক পাঠক

বছর দশেক আগে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ছিলো আদিত্য পিয়াস। গুটিগুটি হাতে জীবনের প্রথম কবিতাটি লিখেছে। কবিতার নামও দিয়েছে ‘হাত’। আর সেই কবিতার সারমর্ম ছিলো ‘হাত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যন্ত্র’। প্রাইমারিতে পড়া আদিত্যের কবিতাটি স্থান পেল হাইস্কুলের দেয়ালিকায়। আনন্দে আত্মহারা আদিত্যকে সেদিন সবাই প্রশংসার জোয়ারে ভাসিয়েছিলেন। সেই তৃপ্তিটা আজও জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হয়ে আছে আদিত্যের কাছে। তারপর থেকে পরিবার, সহপাঠী, শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা এবং লেখকদের সংস্পর্শে লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে। আর সেই ‘হাত’ কবিতা ধরেই আজ ‘যখন থামবে কোলাহল’ কাব্যগ্রন্থের লেখক আদিত্য পিয়াস।

তিনি যখন মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে উঠেছিলেন, তখন লেখালেখির প্রতি আরও বেশি ঝুঁকে পড়েন। এরপর বিভিন্ন সাহিত্য, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক সংগঠনের সাথে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। এবার নিজের নামটিই লেখালেন সাহিত্য অঙ্গনে। প্রকাশ করলেন ‘যখন থামবে কোলাহল’ নামক নিজের প্রথম কাব্যগ্রন্থটি। এবছর ‘অমর একুশে বই মেলায় প্রকাশিত এই কাব্যগ্রন্থটি পাঠকদের মাঝে বেশ সাড়াও জাগিয়েছিলো।

ছদ্মনাম আদিত্য পিয়াস, মূল নাম মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন পিয়াস। বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার অম্বর নগর গ্রামে। বাবা আবদুল মান্নান ও মা রেজিয়া বেগমের আদরের ছোট সন্তান তিনি। গ্রামের শহীদ আমান উল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষে চট্টগ্রামের সাউথ এশিয়ান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন আদিত্য পিয়াস। পড়াশোনার পাশাপাশি  বিভিন্ন সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের সাথে কাজ করছেন তিনি। এছাড়াও শিল্প, সাহিত্য ও শিক্ষাবিষয়ক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘কালের ক্যানভাস’র সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।

চলতি বছরের ‘অমর একুশে বইমেলায় আদিত্য পিয়াসের ৬৪ পৃষ্টার কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে দীপরাণী প্রকাশন। এর আগে ‘কবি সাহিত্যিক ফোরাম বাংলাদেশ’ কর্তৃক চন্দব বড়ুয়ার সম্পাদনায় ‘ছায়া তরুণ’ যৌথ কাব্যগ্রন্থে ছিলেন তিনি। এছাড়াও সমসাময়িক বাংলাদেশের ১০১ কবির শ্রেষ্ঠ কবিতার একটা সংকলনে কাজ করেছেন।

তবে এবার নিজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পর আরও কিছু লেখা প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এরমধ্যে রয়েছে দুটি উপন্যাস ‘এক আকাশ শূন্যতা’ ও ‘শ্রাবন্তী’। দুটি কাব্যগ্রন্থ ‘কাফনে মোড়ানো হাসি’ ও ‘মুখের কথা হয় যে গান’। একটি গল্পগ্রন্থ ‘আলোকিত অন্ধকার’, একটি প্রবন্ধগ্রন্থ ‘সহমত ভাই!’ এবং একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘একজন হুমায়ূন আহমেদ’। ভালো প্রকাশনী পেলে এক বছরের মধ্যেই এসব প্রকাশ করতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি।

কাব্যগ্রন্থের শুরুতেই তিনি পাঠকদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘আমিতো কবিতা লিখিনা,ঈশ্বর আমাকে দিয়ে কবিতা লেখান’ প্রত্যেক কবির জীবনে সম্ভবত এই মহান উক্তিটির যথার্থতা রয়েছে। প্রত্যেক কবির কাছে কবিতা যেন এক ঐশ্বরিক দান; যা তার একনিষ্ঠ ধ্যান, সাধনার ফসল। এই গ্রন্থের কবিতাগুলোর মাঝে পাঠকরা খুঁজে পাবেন প্রেমের তীব্রতা এবং বিরহের গভীরতার এক মিশ্র অনুভূতি। কিছু কবিতায় জীবন,মৃত্যু,হাহাকার ইত্যাদি বিষয় অঙ্কিত হয়েছে। বর্তমান প্রজন্ম প্রচন্ড কবিতা বিমুখ। এর অন্যতম কারণ কবিতার দুর্বোধ্যতা। এই গ্রন্থের কবিতাগুলোতে কঠিন শব্দ এড়িয়ে সহজ ভাষায় লেখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। পাঠকদের আলোচনা, সমালোচনা এবং পরামর্শের অপেক্ষায় থাকলাম।’

কভার ফটো

 

নিজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পর দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের  সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় আদিত্য পিয়াস বলেন, ছোট বেলার সেই ‘হাত’ কবিতাটাই ছিলো সবচেয়ে অনুপ্রেরণার। তারপর নিজে থেকেই কম বেশি লিখেছি। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরুনোর পর থেকে লেখালেখির প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হই। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর সেই পরিসরটা আরও বাড়তে থাকে। বিভিন্ন সংগঠনের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়। পাশাপাশি কবি সাহিত্যিকদেরও অনেকবেশি সংস্পর্শ পাই। এরপর বেশ কয়েকটি যৌথ সংকলন এ কাজ করেছি। ফলে আমি আরও বেশি উদ্ভুদ্ধ হই। পরবর্তীতে দীপরাণী প্রকাশনীর মাধ্যমে আমি আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যখন থামবে কোলাহল’ প্রকাশ করি। নিজের প্রথম বইয়ে পাঠকদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। এর জন্য সকলের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।

তিনি বলেন, বাংলা ভাষা অনেক সমৃদ্ধ একটি ভাষা। এই ভাষায় অনেক কবি সাহিত্যিকের জন্ম হয়েছে। ১৯৪৭,৫২,৭১ সহ ঐতিহাসিক সব ঘটনাগুলোর সময় বাংলা সাহিত্য অনেক সমৃদ্ধ ছিলো। সেটা ক্রমাগত পিছিয়ে পড়েছে। ষাটের দশক ছিলো বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে সমৃদ্ধ সময়। এরপর আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় কিছু লেখালেখি হলেও একবিংশ শতাব্দীতে এসে বাংলা সাহিত্যে ক্রমান্বয়ে ভাটা পড়েছে। মূলত তরুণদের হাত ধরেই সাহিত্য অঙ্গন আরও সমৃদ্ধ হবে। কিন্তু বর্তমানে সুশিক্ষার অভাব, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, প্রযুক্তির অপব্যবহার এসবের ফলে আমরা ধীরে ধীরে সাহিত্য বিমুখ হয়ে যাচ্ছি। তাই আমাদেরকে বই প্রেমিক হতে হবে। নিজেদের লেখা দিয়ে সমাজের ভালোমন্দ বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে। তবেই বাংলা সাহিত্যের সেই সোনালী সময় আবারও ফিরিয়ে আনা সম্ভব।