২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৭

ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের নতুন পাঠ্যবইয়ে বাদ জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস

তৃতীয় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ের প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র  © টিডিসি ফটো

বুকের তাজা রক্ত ঢেলে জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেন ছাত্র-জনতা। অভ্যুত্থানে বীরের বেশে প্রথম শহীদ হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাইদ। একে একে মুগ্ধ, ওয়াসিমরা পুলিশ, ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের বুলেটের সামনে বুক ঝাঁজরা করে দেশ রক্ষা করেন। শহীদ হন তারা। আন্দোলনের তীব্রতায় দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। মুক্তি পায় বাংলাদেশ। কথা ছিল, স্বাধীন দেশে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শহীদের সেই স্মৃতি রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালাবে। কিন্তু দিন ও মাস পেরোনোর সাথে সাথেই যেন সব মলিন হতে চলল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়লেও চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত চব্বিশের ইতিহাস কেন পড়বে না জানতে চাইলে চেয়ারম্যান প্রসঙ্গ পাল্টে বলেন, ‘এই গল্পগুলো লেখার জন্য যে সময়ের প্রয়োজন ছিল, সেই সময় পাওয়া যায়নি। তাই এনসিটিবি এটা সংযুক্ত করার সাহস করেনি।’

জুলাই বিপ্লবের সেই স্মৃতিবিজড়িত ইতিহাস ও ঘটনায় আত্মদানকারীদের জীবনী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছিলেন শহীদের স্বজন, সহপাঠীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। আগামী প্রজন্মকে তরুণদের এই আত্মত্যাগের কথা জানাতে জুলাই আগস্টের ঘটনা সংযুক্ত করা জরুরি বলে মত দিয়েছিলেন শিক্ষাবিদরাও। আন্দোলন পরবর্তী জুলাই বিপ্লব ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সেই ইতিহাস তুলে ধরার কথা জানিয়েছিল পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণের কাজে নিয়োজিত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

আরও পড়ুন: পাঠ্যবইয়ের শেষে গেল জাতীয় সঙ্গীত ও পতাকার ছবি

তবে তৃতীয় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বই ঘেটে দেখা গেছে, এতে মোট ১৩টি অধ্যায় রয়েছে। এরমধ্যে আমাদের পরিবেশ, আমরা সবাই মানুষ, আমাদের চার নেতা, আমাদের ইতিহাস, আমাদের সংস্কৃতি, মহাদেশ ও মহাসাগর, পরিবার ও বিদ্যালয়ে শিশুর ভূমিকা, শিশু অধিকার ও নিরাপত্তা, নৈতিক ও মানবিক গুণ, আমাদের দেশ, বিভিন্ন পেশা, টাকার ব্যবহার এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা’র অধ্যায় সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জুলাই বিপ্লবের কোনো ইতিহাস জানার সুযোগ পাবে না। একইরকম প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির বইয়ে উপক্ষিত হয়েছে চব্বিশে জুলাই আগস্টের আন্দোলনের ইতিহাস। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত সমন্বয়ক, অভিভাবক ও বিভিন্ন স্তরের সচেতন নাগরিকরা।

বইটি চতুর্থ অধ্যায়ে রয়েছে আমাদের ইতিহাস। অধ্যায়টির বিভিন্ন অংশে ভাষা আন্দোলন, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, আমাদের স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবসের ইতিহাস থাকলেও চব্বিশে জুলাই আগস্টের অভ্যুত্থান কিংবা হাজারো শহীদের আত্মদান সম্পর্কে কোনো ইতিহাস যুক্ত হয়নি। এতে প্রশ্ন উঠেছে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস জানলেও চব্বিশে জুলাই আগস্টের ইতিহাস অজানা থাকার নেপথ্যে কি কারণ রয়েছে? অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষার্থীেদের চব্বিশ সম্পর্কে অবগত না করতেই এমন আয়োজন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের একজন উমামা ফাতেমা

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক স্তরের এসব বইয়ের টেন্ডার ও কার্যাদেশ হয়েছিল সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে। শিডিউল অনুযায়ী পরবর্তীতে পিজি ও চুক্তি করে এনসিটিবি। তৃতীয় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের প্রসঙ্গ কথা অক্টোবরে লেখেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান। বইয়ে পরিমার্জিত সংস্করণ ২০২৪ লেখা থাকলেও বাংলাদেশের অন্য সব ইতিহাসের সাথে ঠাঁই পায়নি চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের ইতিহাস। 

এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বলেন, আপনি শুধু প্রাথমিকের প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির কথা বলছেন। কিন্তু পঞ্চম থেকে উপরের পাঠ্যপুস্তকেও জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস কিংবা ঘটনা কতটা যুক্ত হয়েছে? আমি মনে এটার মূল কারণ হলো যারা সেখানে বসে আছেন তারা পূর্বের ফ্যাসিবাদেরই দোসর। কাজেই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আশা করাটা অযৌক্তিক। আর জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস যুক্ত করা এটা আরো অবিশ্বাস্য।

উমামা ফাতেমা আরো বলেন, আন্দোলনের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল শিক্ষা সংস্কারে কমিশন করা। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত এটার বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দেয়নি। আমরা যে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেটা প্রতিফলিত হয়নি। দেশের সামগ্রিক স্তরে শুধু কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এটাকে বিপ্লব বলা যাবে না। তবে একটা প্রজন্ম হিসেবে আমাদের বলার মতো একটা গল্প হয়েছে। প্রাথমিক থেকে সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও এই আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ কারিকুলাম। অথচ এসব পরিবর্তনে সরকারের কোনো প্রচেষ্টা আমরা দেখছি না।

আরও পড়ুন: হ য ব র ল এনসিটিবির বই পরিমার্জন, দায় নেবে কে?

তবে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পর্যায় থেকে প্রাথমিকের চারটি শ্রেণিসহ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের বইয়ে জুলাই আগস্টের অভ্যুত্থান নিয়ে ইতিহাস সংযুক্তির প্রস্তাব করা হয়। তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও বিশেষজ্ঞ সদস্য সাজ্জাদুর রহমানের (রাখাল রাহা) অনাগ্রহের কারণে বিষয়টি আর এগোয়নি। সেসময়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এনসিটিবির এক ধরনের মনস্তাত্বিক যুদ্ধও চলে।

সূত্রটি জানায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর এনসিটিবির তদারকির জন্য ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। কমিটি ১৯ সেপ্টেম্বর এবং ২৩ সেপ্টেম্বর পর পর দুটি সভা করে। তবে দুটি সভা মন্ত্রণালয়ে হবে নাকি এনসিটিবিতে হবে এসব বিষয়েও দেখা দেয় মতভেদ। কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বিষয়টি আলাপ করলে তারা জানান, সাজ্জাদুর রহমান (রাখাল রাহা) এনসিটিবির কিংবা মন্ত্রণালয়ের কোনো সদস্য না হলেও তার প্রভাবে এনসিটিবি কোনোভাবেই সেই সভা মন্ত্রণালয়ে করতে রাজি হয়নি। এরই প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ১৯ সেপ্টেম্বরের সভায় সাজ্জাদুর রহমান (রাখাল রাহা) উপস্থিত হননি। পরে ২৩ সেপ্টেম্বরে পুনরায় এনসিটিবিতে আরেকটি সভার আয়োজন হয়।

জানা গেছে, ১০ সদস্যের গঠিত সেই কমিটির প্রথম সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অন্যান্য সংশোধনের সাথে প্রাথমিকের চারটি শ্রেণিতে জুলাই আগস্টের অভ্যুত্থানের ইতিহাস রাখার প্রস্তাব আসে। তবে প্রথম সভায় কারিকুলামের দোহাই দিয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান এ প্রস্তাবকে নাকচ করেন। একই রকম ২৩ সেপ্টেম্বরের সভায় পুনরায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রস্তাব করলে সেখানেও এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও বিশেষজ্ঞ সদস্য সাজ্জাদুর রহমান (রাখাল রাহা) কারিকুলামের দোহাই দিয়ে ইতিহাস সংযুক্ত না করার প্রস্তাব দেয়। পরে অন্যান্য সদস্যের পরামর্শে বইয়ের শেষে একটি করে গ্রাফিতি রাখার মত গ্রহণ করা হয়। 

তবে এ ঘটনা নিশ্চিত হতে ও জুলাই আগস্টের ইতিহাসের প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির বইয়ে না রাখার কারণ জানতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসকে অবহেলা করা উচিত হয়নি। শিশুরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানলে চব্বিশের ইতিহাসও তাদের জানা উচিত ছিল। চব্বিশের ইতিহাস যুক্ত না করায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে অবহেলা করা হয়েছে। যদি অন্য ইতিহাস যুক্ত না থাকত তাহলে চব্বিশের প্রসঙ্গ আসত না। অর্থাৎ চব্বিশের আন্দোলনকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির বইয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস যুক্ত না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে এনসিটিবির প্রাথমিক শিক্ষাক্রম বিভাগের সদস্য প্রফসের এ. এফ. এম সারোয়ার জাহান বলেন, আমি একাধিকবার চেষ্টা করেছি জুলাই অভ্যুত্থানের গল্প এবং ইতিহাস সংযুক্ত করার। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ না করায় সেটা সম্ভব হয়নি। পরে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ৫ম থেকে ১০ম শ্রেণির বইয়ের ইতিহাস অংশে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে উনসত্তর থেকে নব্বইয়ের ইতিহাসের পরে চব্বিশের কিছু ইতিহাসও যুক্ত করা হয়।

এনিসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান প্রথমে বলেন, ‘প্রাথমিকের বাচ্চারা জুলাই অভ্যুত্থানের গল্প বুঝবে না। তাই প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত না দিয়ে জুলাইয়ের ইতিহাস পঞ্চম শ্রেণি থেকে উপরের শ্রেণিতে দেয়া হয়েছে।’

তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়লেও চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত চব্বিশের ইতিহাস কেন পড়বে না জানতে চাইলে চেয়ারম্যান প্রসঙ্গ পাল্টে বলেন, ‘এই গল্পগুলো লেখার জন্য যে সময়ের প্রয়োজন ছিল, সেই সময় পাওয়া যায়নি। তাই এনসিটিবি এটা সংযুক্ত করার সাহস করেনি।’

তবে এনসিটিবির বই পরিমার্জনের তথ্য ঘেটে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর পাঠ্যবই পরিমার্জনে দফায় দফায় তারিখ পেছায় এনসিটিবি। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে পরিমার্জনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছিল ৩০ সেপ্টেম্বর। পরে সেই তারিখ বৃদ্ধি করে ১৫ অক্টোবর ও পরে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত পেছানো হয়। এতেও পরিমার্জনের কাজ শেষ করতে না পেরে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত তারিখ পেছায় প্রতিষ্ঠানটি। যদিও এনসিটিবির বই পরিমার্জনের সঙ্গে জড়িত অন্তত এক ডজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্তও এনসিটিবি বই পরিমার্জনের কাজ চলেছে। এরমধ্যে প্রাথমিকের বই পরিমার্জন করা হয় অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত।

নাম গোপন রাখার শর্তে পরিমার্জন কমিটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, সময়ের অযুহাত দেখানো হলেও বাস্তবে চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম রিয়াজুল হাসান এবং বিশেষজ্ঞ সদস্য সাজ্জাদুর রহমানের (রাখাল রাহা) অনাগ্রহের কারণেই প্রাথমিকের চারটি শ্রেণির বইয়ে জুলাই বিপ্লবের কোনো ইতিহাস সংযুক্ত হয়নি। প্রথম কমিটির দুটি সভায় প্রাথমিকের চার শ্রেণির বইয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস যুক্ত করার বিষয়েও প্রস্তাব আসে। এমনকি বই পরিমার্জনের প্রথম কমিটিতে থাকা একাধিক সদস্যের সাথে চেয়ারম্যান ও বিশেষজ্ঞ এই সদস্যের মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্ব ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস।

আরও পড়ুন: জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে: শ্বেতপত্র কমিটি

তবে এসব প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘একাত্তরের পরের ইতিহাস আনতে গেলে আরো লম্বা সময় ব্যয় হতো। তাই বিশেষজ্ঞরা চব্বিশের ইতিহাস যুক্ত করার বিপক্ষে মত দেন। তবে এনসিটিবির অনাগ্রহের কারণে চব্বিশের ইতিহাস যুক্ত হয়নি এমন অভিযোগের কোনো গুরুত্ব নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘পর্যালোচনা হলে এনসিটিবির কোন লোক কিংবা কারা দরজার ওপাশ থেকে মতামত দিয়েছেন, সেটা সংবাদের বিষয়বস্তু হতে পারে না। এসব ধারণা আপনি কোথায় পেলেন? আমরা ইতিহাস যুক্ত করার পক্ষে ছিলাম। তবে বিভিন্ন মতামত উঠে এসেছে, ইতিহাস কীভাবে যাবে সেই প্রসঙ্গে।

রাজধানীর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তারের বাবা রেজওয়ানুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বাচ্চারা ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস বুঝতে পারলে চব্বিশের ইতিহাস কেন বুঝবেনা? চেয়ারম্যানের এমন যুক্তি শুধু দায় সারা বক্তব্য। প্রকৃতপক্ষে এনসিটিবিতে এখন যারা আছেন তাদের বেশির ভাগ পুরোনো সরকারেরই আস্থাভাজন ব্যক্তিবর্গ। তাদের শুধু দায়িত্বের পরিবর্তন হয়েছে। তাদের বেশিরভাগ আগেও এনসিটিবির ভিন্ন ভিন্ন দপ্তরে ছিলেন। এমন কর্মকর্তাও রয়েছেন, যারা পতিত সরকারের বড় এমপি মন্ত্রীদের রিলেটিভ। যাদেরকে সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এখানে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার কেন তাদের উপরেই আবার আস্থা রেখেছে সেটা বোধগম্য নয়।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে এনসিটিবির বিশেষজ্ঞ সদস্য সাজ্জাদুর রহমানের (রাখাল রাহা) সঙ্গে কথা বলতে গতকাল বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি এনসিটিবিতে সরাসরি উপস্থিত না হলে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে আজ বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) এনসিটিবিতে গিয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি সংবাদ সম্মেলন করার কথা জানান। প্রতিবেদককে সেই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য জেনে নেয়ার পরামর্শ দেন। সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, পাঠ্যপুস্তকের বাংলায় বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে মনোনীত হলেও নিয়মিত এনসিটিবিতে অফিস করেন এই বিশেষজ্ঞ। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তারা জানান, অলিখিতভাবে বর্তমানে এনিসিটিবির নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি।