এখনও বাকি সম্পাদনা, প্রেসে কবে যাবে নতুন বইয়ের কাজ?
২০১২ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রমের আলোকে নতুন বছরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবই পরিমার্জন করে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়ার কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ২০২৫ সালে জানুয়ারির শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও সে অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এনসিটিবির একাধিক সূত্র জানায়, এখনও বেশিরভাগ শ্রেণির বইয়ে সম্পাদনার কাজ শেষ হয়নি। এমনকি চলমান রয়েছে কিছু বইয়ের পরিমার্জনের কাজও। ফলে কবে নাগাদ প্রেসে যাবে এবং শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে কত সময় লাগবে, তা নিয়ে কাটছে না সংশয়। বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রেসে পাঠাতে কত সময় লাগবে এমন প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর জানাতে পারেনি এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ।
টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য বিনামূল্যের নতুন পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি এখনও প্রেসে দিতে না পারায় সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে তা পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা কাটছে না।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ সালে ৪০ কোটির বেশি নতুন বই বিনামূল্যে বিরতণ করবে সরকার। যেখানে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি, বিভাগ এবং ভার্সন মিলিয়ে বইয়ের সংখ্যা ৫০০টিরও বেশি। কিন্তু বৃহৎ এই কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রগতি নেই। বেশিরভাগ বই এখনো প্রেসে যাওয়ার জন্য প্রস্তত নয় বলে জানা গেছে।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশের প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ৪০ কোটি ১৬ লাখ বই ছাপা হবে। এরমধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের বইয়ের সংখ্যা ১২ কোটি ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৭৫২টি। আর ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির অর্থাৎ, মাধ্যমিক পর্যায়ের বইয়ের সংখ্যা ২৮ কোটি ৬ লাখ ২২ হাজার ৩৩৭টি। তাছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে ৮ হাজারের বেশি ব্রেইল বই ছাপা হচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষকদের জন্য প্রায় ৪১ লাখ ‘শিক্ষক সহায়িকা’ দেওয়া হবে। মুদ্রণকারীদের কাছে কয়েকটি লটে এসব বই ছাপাতে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: আত্তীকৃত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবে মাউশি
এনসিটিবি সূত্রে জানায়, টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য বিনামূল্যের নতুন পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি এখনও প্রেসে দিতে না পারায় সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে তা পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। মুদ্রণকারীদের কাছে দুই শতাধিক লটে এসব বই ছাপাতে দেওয়া হবে। বই ছাপার কাজে সরকারের খরচ হবে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃপক্ষ একটি অফিস আদেশ জারি করেছে। যেখানে চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য যেকোনো কর্মকর্তাকে গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রদানের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তাই বই ছাপানোর বিষয় মুখ খুলতে রাজি হয়নি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। এনসিটিবির বিভিন্ন উইংয়ে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির প্রায় ৪০ শতাংশ বই ছাপার কাজ হয়েছে। এর বাইরে অন্য শ্রেণির বইয়ের সম্পাদনার কাজ চলমান থাকায় প্রেসে পাঠাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও কিছু বইয়ের পরিমার্জনের কাজও এখনও বাকি রয়েছে।
`নবম শ্রেণি ছাড়া অন্য সব বই এ মাসের মধ্যে প্রেসে চলে যাবে। আর প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সব বই নভেম্বরের মধ্যে ছাপা হবে— অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান, চেয়ারম্যান, এনসিটিবি
টেন্ডার সম্পন্ন হয়নি চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণির বইয়ের। এছাড়া ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বইয়ের সম্পাদনার কাজ এখনও চলমান রয়েছে। কিছু বইয়ের পরিমার্জনের কাজও শেষ হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪১ প্রেসের সাথে টেন্ডারের মাধ্যমে চুক্তি করা হয় বই ছাপার বিষয়ে। পাঠ্যবই ছাপানোর জন্য ভারতীয় প্রেসকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এনসিটিবি সূত্র জানায়, নবম এবং দশম শ্রেণির বইয়ের টেন্ডার পাচ্ছে আর্মি প্রেস। যদিও সরকারি মালিকানাধীন বিজি প্রেসের কাজের লোড বেশি থাকায় প্রতিষ্ঠানটি এ বছর পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজ নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে।
আরও পড়ুন: শহীদ মুগ্ধর কবর উত্তরার কামারপাড়ায়
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিটিবির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজ এখনও অনেক বাকি। কর্তৃপক্ষ জানুয়ারির শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এটা বাস্তবসম্মত নয়। শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে অন্তত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় লাগবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানান, ‘অধিকাংশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ইতোমধ্যে প্রেসে চলে গেছে। সময়মতো শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত বই পেয়ে যাবে।
তবে কোন শ্রেণিতে কত শতাংশ বই প্রেসে গেছে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্পেসিফিক তথ্য এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। নির্দিষ্ট উইংয়ের সদস্য বিষয়টি নিয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারবে।’
অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান আরও বলেন, ‘সব শ্রেণির বই প্রেসে না গেলেও ধীরে ধীরে সবগুলো বই যাবে। সম্পাদনার কাজও প্রায় শেষের দিকে। অর্থ বরাদ্দ নিয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে, ক্রয় কমিটির সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে শীঘ্রই এটার সমাধান করার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ।’
সম্পাদনা শেষে প্রেসে পাঠানোর সময়সীমার বিষয়ে চেয়ারম্যান জানান, নবম শ্রেণি ছাড়া অন্য সব বই এ মাসের মধ্যে প্রেসে চলে যাবে। আর প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সব বই নভেম্বরের মধ্যে ছাপা হবে।’